জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ

Submitted by arpita pramanik on Fri, 12/14/2012 - 15:24

জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ (Defination of Reproduction and Types of Reproduction)

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টির পদ্ধতিকেই জনন বা বংশবিস্তার বলা হয় ।

জননের সংজ্ঞা [Defination of Reproduction]:- যে জৈবিক পদ্ধতির দ্বারা জীব তার নিজের সত্তা ও আকৃতিবিশিষ্ট অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে, তাকে জনন বা রিপ্রোডাকশন বলে ।

জননের প্রকারভেদ [Types of Reproduction]:- প্রজাতি বিশেষে জননের প্রকারভেদ দেখা যায় । জীবজগতে সাধারনত চার রকমের জনন দেখা যায়, যেমন:

[ক]  অঙ্গজ জনন বা ভেজিটেটিভ রিপ্রোডাকশন [Vegetative Reproduction]

[খ]  অযৌন জনন বা আসেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশন [Asexual Reproduction]

[গ]  যৌন জনন বা সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকশন [Sexual Reproduction]

[ঘ]  অপুংজনি বা পারথেনোজেনেসিস [Parthenogensis]

 

জননের প্রকার জননের সংজ্ঞা জননের উদাহরণ
1. অঙ্গজ জনন যে জনন পদ্ধতিতে জীবদেহের কোনও অঙ্গ এবং অঙ্গের অংশ জনিতৃ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য জীব সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ জনন বলে । গোলাপ, জবা. পাথরকুচি, আদা, আলু, প্রভৃতি গাছে অঙ্গজ জনন দেখা যায় ।
2. অযৌন জনন যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামোট উত্পাদন ছাড়াই রেণু উত্পাদনের মাধ্যমে বা কোশ বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে । মিউকর, অ্যাগারিকাস, ইত্যাদি উদ্ভিদ এবং অ্যামিবা, হাইড্রা ইত্যাদি প্রাণীতে এই রকমের জনন দেখা যায় ।
3. যৌন জনন যে জনন প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামোট বা জননকোশের মিলানের দ্বারা অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে যৌন জনন বলে । উন্নত শ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহে এই রকমের জনন দেখা যায় ।
4. অপুংজনি যে জনন প্রক্রিয়ায় নিষেক ছাড়াই অনিষিক্ত ডিম্বাণু থেকে সরাসরি জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অপুংজনি বলে । বোলতা, মৌমাছি, পিঁপড়ে ইত্যাদি প্রাণীতে এবং মিউকর, স্পাইরোগাইরা ইত্যাদি উদ্ভিদে এই রকমের জনন দেখা যায় । (এই সব উদ্ভিদ ও প্রাণীদের অন্যান্য জননও দেখা যায় ।)

 

চার রকমের জননের মধ্যে বেশির ভাগ জীব অযৌন বা যৌন জনন পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে । অঙ্গজ জনন প্রধানত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় এবং অপুংজনি কয়েকটি নিম্ন শ্রেণির উদ্ভিদে, যেমন : শৈবাল, ছত্রাক এবং কয়েকরকম প্রাণীতে, যেমন : মৌমাছি, বোলতা পিঁপড়ে প্রভৃতিতে দেখা যায় ।

*****

Related Items

গিনিপিগের দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা

মেন্ডেলের দ্বি-সংকর জনন প্রক্রিয়াটি প্রাণীদেহেও ঘটানো যেতে পারে । একটি বিশুদ্ধ প্রলক্ষণযুক্ত কালো (রঙ) ও অমসৃণ (রোম) গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ প্রলক্ষণযুক্ত সাদা (রঙ) ও মসৃণ (রোম) গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে সব কালো ও অমসৃণ গিনিপিগ ...

গিনিপিগের একসংকর জননের পরীক্ষা

উদ্ভিদের মতো প্রাণীদের মধ্যেও একসংকর পরীক্ষা ঘটানো যেতে পারে । জনিতৃ জনুর একটি বিশুদ্ধ কালো গিনিপিগের সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা গিনিপিগের সংকরায়ণ ঘটালে প্রথম অপত্য জনুতে শুধু মাত্র সংকর কালো গিনিপিগের সৃষ্টি হবে এখানে কালো রঙটি সাদার ওপর প্রকট ...

মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছ নির্বাচনের কারণ

বাগানের মিষ্টি মটর গাছে নিম্নলিখিত নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি থাকায় মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষার জন্য মটর গাছকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন । মটর গাছ দ্রুত বংশবিস্তারে সক্ষম, তাই অল্প সময়ের মধ্যে বংশানুক্রম কয়েকপুরুষ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব । মটর ফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় মটর ...

মেন্ডেলের দ্বিসংকর পরীক্ষা

একই প্রজাতিভুক্ত দু'জোড়া বিকল্প চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দু'টি জীবের সংকরায়ণ কে দ্বিসংকর জনন বা ডাই-হাইব্রিড ক্রস বলে । দ্বি-সংকর জননের পরীক্ষা থেকে মেন্ডেলের ধারণা হয়েছিল, জনিতৃ জনুর বৈশিষ্ট্যগুলি যে শুধুমাত্র অপত্য জনুতে আলাদাভাবে সঞ্চারিত হয় তাই নয়, উপরন্তু এই ...

মেন্ডেলের এক সংকর পরীক্ষা

একই প্রজাতিভুক্ত বিপরীতধর্মী এক-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে যে যৌন জনন সম্পন্ন হয়, তাকে একসংকর জনন বা মনোহাইব্রিড ক্রস বলে । দুটি পৃথক পরীক্ষার সাহায্যে একসংকর পরনিষেক ব্যাখ্যা করা হল, একসংকর পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন ...