Submitted by arpita pramanik on Fri, 01/04/2013 - 09:33

ছত্রাক (Fungi)

ছত্রাকের সংজ্ঞা [Definition of Fungi]:- ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় ।

ছত্রাকের গুরুত্ব [Significance of Fungi]:- ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা :

উপকারী ছত্রাক (Beneficial Fungi)

পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক ।

[1] পেনিসিলিয়াম [Penicillium notatum]:- পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ছত্রাক । এই ছত্রাক ফল, জেলি, শাক-সবজি এবং বিভিন্ন সংরক্ষিত খাদ্য বস্তুর ওপর জন্মায় । এরা সাধারণত নীল বা সবুজ ছাতা নামে পরিচিত । বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং 1928 খ্রিস্টাব্দে পেনিসিলিয়াম নোটেটাম [Penicillium notatum] নামে ছত্রাক থেকে বিখ্যাত অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ 'পেনিসিলিন' আবিষ্কার করেন । এই ওষুধ ক্ষত, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, সিফিলিস এবং বিভিন্ন প্রদাহ জনিত রোগে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবহৃত হয় ।

[2] ঈস্ট [Saccharomyces cerevisiae]:- ঈস্ট এক রকমের এককোশী মৃতজীবী ছত্রাক । এরা পাকা ফল, আখ, খেজুর, তাল ইত্যাদির মিষ্টি রসে জন্মায় । ঈস্ট সন্ধান প্রক্রিয়ায় ওই সব শর্করা জাতীয় খাদ্য গেঁজিয়ে অ্যালকোহল উত্পন্ন করে । অ্যালকোহল বিভিন্ন রকমের ঔষধ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয় । ঈস্ট থেকে বি-কমপ্লেক্স ট্যাবলেট প্রস্তুত হয় । ঈস্ট থেকে প্রাপ্ত উৎসেচক জাইমেজ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয় । বেকারি শিল্পে ঈস্ট পাউরুটি, কেক প্রভৃতি খাবার তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয় ।

 

অপকারী ছত্রাক (Harmful Fungi)

[1] অ্যাসপারজিলাস [Aspergillus niger]:- অ্যাসপারজিলাস শাকসবজি, ফল, জ্যাম, জেলি, আচার, রান্না করা খাদ্য সামগ্রী, রুটি, মাছ, মাংস, দুধ, দই, মাখন প্রভৃতি বিভিন্ন খাদ্য বস্তুকে আক্রমণ করে ও বিনষ্ট করে । তাছাড়া অ্যাসপারজিলাসের বিভিন্ন প্রজাতি সেলুলোজ, কাগজ, কাপড়, চামড়া ও প্লাস্টিকের জিনিস, ফটোফিল্ম, রবারের বস্তু, রেশম ইত্যাদিকেও ধ্বংস করে । এমনকি এই ছত্রাকটি মানুষের ত্বক, ফুসফুস, কর্ণিয়া, কানের ভিতরে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ ।

[2] পাকসিনিয়া গ্রামিনিস [Puccinia graminis tritici]:- এটি এক ধরনের পরজীবী ছত্রাক । এই ছত্রাক গম গাছের পাতায় ব্রাউন রাস্ট [brown rust] বা পিঙ্গল বর্ণের রাস্ট [yellow rust] বা মরিচা রোগ সৃষ্টি করে এবং গম গাছের কান্ড ও পাতায় ব্ল্যাক রাস্ট [black rust] বা কৃষ্ণ বর্ণের মরিচা রোগ সৃষ্টি করে, ফলে গম গাছের পাতায় ও কান্ডে মরিচার মতো দাগ দেখা যায় । পাকসিনিয়া ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত গাছে গমের ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় ।

 

ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাকের পার্থক্য

ব্যাকটিরিয়া ছত্রাক
1. এরা এককোশী । 1. এরা এককোশী বা বহু কোশী ।
2. এদের কোশপ্রাচীর মিউকোপেপটাইড ও পেপটাইডো-গ্লাইকেন দ্বারা গঠিত । 2. এদের কোশপ্রাচীর গ্লুকাগন, কাইটিন বা সেলুলোজ দ্বারা গঠিত ।    
3. এরা আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত । 3. এরা আদর্শ নিউক্লিয়াসযুক্ত ।
4. এদের কোশবিভাজন অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে ঘটে । 4. এদের কোশবিভাজন অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মায়োসিস প্রক্রিয়ায়  ঘটে ।
 5. এদের পুষ্টি স্বভোজী ও পরভোজী । 5. এদের পুষ্টি পরভোজী ।

*****

Related Items

পদ্মের অভিযোজন

পদ্মের কান্ড ও মূল জলের নীচে কাদায় গাঁথা থাকে, কিন্তু পাতা, ফুল ও ফল ইত্যাদি জলের ওপর থাকে, তাই পদ্মকে আংশিক নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ বলে । জলে বাস করার জন্য পদ্মের অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল - পদ্মের মূলতন্ত্র সুগঠিত নয় । পদ্মের প্রধান মূল থাকে না । পদ্মের মূল ...

অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক

প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীবদের মধ্যে একটা প্রচেষ্টা থাকে । কারণ পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে না পারলে তাদের অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সব সদস্যের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে...

অভিযোজনের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা

পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বা মানিয়ে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীবদেহের গঠনগত, শারীরবৃত্তীয় ও আচরণগত যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে যা বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়ে জৈব অভিব্যক্তির পথকে সুগম করে, তাকেই অভিযোজন বলে । ...

প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের ত্রুটি

ডারউইন ছোটো এবং অস্থায়ী প্রকারণের ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, কিন্তু দেখা গেছে যে, ওইগুলির বংশানুসরণ না ঘটায় অভিব্যক্তিতে ওদের কোনো ভুমিকা নেই । কোশের এবং জনন কোশের প্রকারণগুলির মধ্যে ডারউইন প্রভেদ করতে পারেননি । বহু প্রকারণই জিনের কার্যগত ফল ...

ডারউইনবাদের ব্যাখ্যা

ডারউইনের মতে, অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । একটি স্ত্রী স্যালমন মাছ প্রজনন ঋতুতে প্রায় 3 কোটি ডিম পাড়ে । একটি ঝিনুক একবারে 12 কোটি ডিম্বাণু উত্পাদন করে ...