ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন ও উপাদান

Submitted by arpita pramanik on Tue, 12/11/2012 - 19:59

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন (Morphology of Eukaryotic Cromosome)

যে-কোনো কোশের প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি প্রধান অংশ থাকে, যথা : (ক) ক্রোমাটিড এবং (খ) সেন্ট্রোমিয়ার

(ক)  ক্রোমাটিড [Chromatid]:-  প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর (মেটাফেজ দশায়) যে দুটি সমান আকৃতির সুতোর মতো অংশ গঠন করে, তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে ।

[i] ক্রোমোনিমা:- প্রতিটি ক্রোমাটিড দৈর্ঘ্য বরাবর দুটি সুক্ষ্ম সুতোর মতো অংশ নিয়ে গঠিত, এদের ক্রোমোনিমা বলে ।  ক্রোমোজোমের অন্যান্য অংশগুলো হল :

[ii] ক্রোমোমিয়ার [Chromomere]:- ক্রোমোজোমের ক্রোমোনিমার রাসায়নিক পদার্থগুলির ঘনত্ব এক রকমের হয় না, স্থানে স্থানে এই ঘনত্ব ঘুব বেশি হয় । ক্রোমোনিমার পুঁতির মতো দেখতে বেশি ঘন অংশগুলোকে ক্রোমোমিয়ার বলে ।

[iii] মুখ্য খাঁজ [Primary Constriction]:-  প্রতিটি ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে এক রকমের খাঁজ দেখা যায় । কোনও রঞ্জকে রঞ্জিত না হওয়া ওই স্থানটিকে মুখ্য খাঁজ বলে ।

[iv] গৌণ খাঁজ [Secondary Constriction]:-  প্রাথমিক খাঁজ ছাড়া অপর একটি খাঁজ, থাকে, একে গৌণ খাঁজ বলে । নিউক্লিওলাস পুনর্গঠনে এই অংশটি অংশগ্রহন করে বলে একে নিউক্লিওলার অরগ্যানাইজার [Nucleolar organiser] বলে ।

[v] স্যাটেলাইট বডি [Satelite Body]:- কোনও কোনও ক্ষেত্রে গৌণ খাঁজের শেষ প্রান্তে যে ছোটো অংশটি থাকে, তাকে স্যাটেলাইট বডি বলে । স্যাটেলাইট বডি সজ্জিত ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম [Sat chromosome] বলে ।

[vi]  টেলোমিয়ার [Telomere]:-  ক্রোমোজোমের দু'দিকের শেষ প্রান্তকে টেলোমিয়ার বলে ।

[vii]  পেলিকল এবং ধাত্র:-  আগে ধারণা ছিল ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড সুতো দুটি একটি তরল সান্দ্র পদার্থের মধ্যে থাকে, ওই জেলির মতো তরল সান্দ্রকে ধাত্র [matrix] বলে । ওই ধাত্র আবার বাইরের দিকে পেলিকল নামে একটি আবরণী দিয়ে ঢাকা থাকে । কিন্তু ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্রে এদের অস্তিত্ব ধরা না পড়ায় আধুনিক বিজ্ঞানীরা এদের অস্তিত্বকে স্বীকার করেন না ।

(খ) সেন্ট্রোমিয়ার [Centromere]:-  প্রত্যেক জোড়া ক্রোমাটিড একটি নির্দিষ্ট খাঁজে পরস্পর আটকে থাকে, একে মুখ্য খাঁজ [Primary constriction] বা সেন্ট্রোমিয়ার বলে । সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোম নানান রকমের হয়, যেমন :

[i] মেটাসেন্ট্রিক:- এই ধরনের ক্রোমোজোমে দুটি ক্রোমাটিডের মধ্যবর্তী অঞ্চলের কাছে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে । এক্ষেত্রে ক্রোমোজোমটির বাহু দুটির দৈর্ঘ্য প্রায় সমান হয় ।

[ii] সাব-মেটাসেন্ট্রিক:-  এই ধরনের ক্রোমোজোমে দুটি ক্রোমাটিডের প্রায় শেষের দিকে সেন্ট্রোমিয়ারটি অবস্থান করে । এর ফলে ক্রোমোজোমটির একটি বাহু অপর বাহুটির তুলনায় কিছুটা লম্বা হয় ।

[iii] অ্যাক্রোসেন্ট্রিক:-  এই ধরনের ক্রোমোজোমে, ক্রোমাটিড দুটির একেবারে নীচের দিকের কিছুটা ওপরে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করে । এক্ষেত্রে ক্রোমোজোমের দুটি বাহুর একটি অনেকটা লম্বা এবং অপরটি লম্বায় অনেকটা ছোটো হয় ।

[iv]  টেলোসেন্ট্রিক:- এই ধরনের ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমাটিড দুটির একেবারে শেষে অবস্থান করে ।

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের উপাদান (Composition of Eukaryotic Cromosome)

ক্রোমোজোমের প্রধান দুটি উপাদান হল — (ক) নিউক্লিক অ্যাসিড ও  (খ) প্রোটিন

নিউক্লিক অ্যাসিড:- ক্রোমোজোমে DNARNA -এই দু'রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া গেলেও DNA -এর পরিমাণ RNA -র তুলনায় অনেক বেশি । ক্রোমোজোমের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে 45% DNA এবং  1.2% —1.4% RNA ।

প্রোটিন:- ক্রোমোজোমে দু'রকমের প্রোটিন পাওয়া যায়, যথা : ক্ষারীয় প্রোটিনআম্লিক প্রোটিন ।  ক্রোমোজোমে প্রোটিনের পরিমাণ 55% ।

ধাতব আয়ন:- নিউক্লিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন ছাড়াও ক্রোমোজোমে কয়েকটি ধাতব আয়ন (Ca, Mg, Fe ইত্যাদি) থাকে ।

*****

Related Items

জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব ...

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা:- নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস । মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল ...

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে । প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে। কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন ও অবিভাজন এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে। জনিতৃ কোশের বিভাজনের ...

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা - অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস । অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। আবার এই অপত্য ...

কোশ বিভাজন ও কোশ বিভাজনের তাৎপর্য

আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগের ঘটনা । পৃথিবীতে জন্ম নিল প্রথম জীব । পৃথিবীর বুকে জাগল প্রাণের স্পন্দন । প্রথম সৃষ্টি হওয়া সেই জীব না ছিল উদ্ভিদ না কোন প্রাণী । জেলির মতো থকথকে খানিকটা প্রোটোপ্লাজম নিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিহীন সেই জীবের দেহ গড়ে ...