আর.এন.এ. বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA)

Submitted by arpita pramanik on Wed, 12/12/2012 - 12:21

আর.এন.এ. বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA or Ribonucleic Acid)

বেশিরভাগ প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশে DNA ছাড়াও আর এক রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড [Ribonucleic Acid] নামে পরিচিত । RNA কোশের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় এবং রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে । তবে ক্রোমোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাষ্টিড প্রভৃতিতেও সামান্য পরিমাণে RNA থাকে । কোনও কোনও ভাইরাসের ক্ষেত্রে RNA বংশগতির উপাদান হিসেবে কাজ করে ।

RNA -এর সংজ্ঞা [Defination]:-  কোশের একতন্ত্রী কুণ্ডলীবিশিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্যকারী নিউক্লিক অ্যাসিডকে RNA [Ribonucleic Acid] বলে ।

RNA -এর গঠন :-  RNA অণু প্রধানত একতন্ত্রী হলেও কখনও কখনও এটি দ্বিতন্ত্রীও হতে পারে, যেমন : ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস । RNA একরকমের রাসায়নিক যৌগ ।  RNA অণুতে রাইবোজ শর্করা, ফসফোরিক অ্যাসিড ও দুই রকমের নাইট্রোজেন বেস থাকে, যথা: পিউরিনপিরিমিডিন । পিউরিন বেস দু'রকম, যথা : অ্যাডেনিনগুয়ানিন এবং পিরিমিডিন বেসও দু'রকম যথা: সাইটোসিনইউরাসিল

RNA -এর প্রকারভেদ [Types of RNA]:-  RNA -কে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়, যথা: জেনেটিক RNA এবং নন-জেনেটিক RNA

[ক] জেনেটিক RNA [Genetic RNA]:-  বেশিরভাগ উদ্ভিদ ভাইরাস এবং কয়েক রকমের প্রাণী-ভাইরাসে (যেমন : ইনফ্লুয়েঞ্জা-ভাইরাস) শুধুমাত্র RNA থাকে, যা বংশগত-বৈশিষ্ট্য বহন করে । এই রকম যে সব RNA বংশগত-বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে, তাদের জেনেটিক RNA বলে । এই রকম RNA নিজের প্রতিলিপি গঠন, সহায়ক উৎসেচক সংশ্লেষ এবং প্রোটিন আবরণ গঠন করে ।

[খ] নন-জেনেটিক RNA [Non-genetic RNA]:-  যে সব ক্ষেত্রে DNA জেনেটিক পদার্থ হিসেবে কাজ করে সেখানে RNA -কে নন-জেনেটিক RNA বলে । এইসব RNA কোশের DNA থেকে উত্পন্ন হয় এবং প্রোটিন সংশ্লেষে অংশগ্রহন করে ।

DNA এবং RNA -এর সাদৃশ্য (Similarity of DNA and RNA)

[i]  DNA এবং RNA উভয়েই নিউক্লিক অ্যাসিড

[ii]  DNA এবং RNA উভয়েই নিউক্লিওটাইড দিয়ে গঠিত ।

[iii]  DNA এবং RNA উভয়ের অণুতেই অ্যাডেনিন এবং গুয়ানিন নামে দুইরকম পিউরিন জাতীয় বেস থাকে ।

[iv]  DNA থেকে RNA অণু উত্পন্ন হয় ।

DNA এবং RNA -এর মধ্যে পার্থক্য (Difference between DNA and RNA)

DNA RNA
1. কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোজোমের মধ্যে DNA,  RNA -এর তুলনায় বেশি পরিমাণে থাকে ।  1. RNA কোশের সাইটোপ্লাজমেই বেশি পরিমাণে থাকে ।
2. DNA অণু প্রধানত দ্বিতন্ত্রী । 2. RNA অণু প্রধানত একতন্ত্রী (Reovirus -এ RNA দ্বিতন্ত্রী) ।
3. DNA -এর পেন্টোজ শর্করা ডি-অক্সিরাইবোজ জাতীয় । 3. RNA -এর পেন্টোজ শর্করা রাইবোজ জাতীয় ।
4. DNA অণুর নাইট্রোজেন বেস চারটি, যথা : অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন এবং থাইমিন । 4. RNA অণুর নাইট্রোজেন বেস চারটি, যথা : অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন এবং ইউরাসিল ।
5. DNA বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে । তাই DNA -কেই জিন বল চলে ।  5. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে RNA বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে না (ব্যতিক্রম কয়েক প্রজাতির উদ্ভিদ ভাইরাস এবং কয়েক রকমের প্রাণী ভাইরাসের RNA বংশগতির বৈশিষ্ট্য বহন করে ।

6. DNA কোশের প্রতিটি কাজের নির্দেশ বহন করে । 

6. RNA অণু DNA থেকে রাসায়নিক সংকেত গ্রহণ করে রাইবোজোমের সহায়তায় প্রোটিন সংশ্লেষ করে ।

*****

Related Items

জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব ...

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা:- নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস । মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল ...

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে । প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে। কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন ও অবিভাজন এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে। জনিতৃ কোশের বিভাজনের ...

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা - অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস । অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। আবার এই অপত্য ...

কোশ বিভাজন ও কোশ বিভাজনের তাৎপর্য

আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগের ঘটনা । পৃথিবীতে জন্ম নিল প্রথম জীব । পৃথিবীর বুকে জাগল প্রাণের স্পন্দন । প্রথম সৃষ্টি হওয়া সেই জীব না ছিল উদ্ভিদ না কোন প্রাণী । জেলির মতো থকথকে খানিকটা প্রোটোপ্লাজম নিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিহীন সেই জীবের দেহ গড়ে ...