অঙ্গজ জনন

Submitted by arpita pramanik on Fri, 12/14/2012 - 20:04

অঙ্গজ জনন (Vegetative Reproduction)

সংজ্ঞা:- যে জনন প্রক্রিয়ায় জীবদেহের কোনও অঙ্গ (organ) বা অঙ্গাংশ (part of an organ) মাতৃ (জনিতৃ) দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোষ কোশবিভাজন ও বৃদ্ধির দ্বারা সদৃশ অপত্য জীব সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ জনন বলে ।

উদ্ভিদের অঙ্গজ জনন পদ্ধতি:- উদ্ভিদের অঙ্গজ জননকে প্রধান দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা :  (ক) প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন   (খ) কৃত্রিম অঙ্গজ জনন

(ক) উদ্ভিদের প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন:- উদ্ভিদের প্রধান কয়েকরকম প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন হল :

[i]  বিভাজন দ্বারা:- ঈস্ট, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি এককোশী উদ্ভিদে অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে মাতৃকোশ সরাসরি বিভাজিত হয়ে অপত্যকোশ তথা অপত্য জীব সৃষ্টি করে ।

[ii]  খন্ডীভবনের দ্বারা:- সূত্রাকার শৈবাল স্পাইরোগাইরার দেহ আঘাতজনিত কারণে কয়েকটি খন্ডে খন্ডে ভেঙ্গে যায় এবং প্রতিটি খন্ড বৃদ্ধি পেয়ে আবার অপত্য স্পাইরোগাইরা গঠন করে ।

[iii]  কোরকোদগমের দ্বারা:- এককোশী ছত্রাক জনিতৃকোশে এক বা একাধিক উপবৃদ্ধি বা কোরক সৃষ্টি হয় । কোরকগুলি জনিতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য ছত্রাক গঠন করে ।

[iv]  অস্থানিক মুকুলের দ্বারা:- পটল, রাঙ্গাআলু প্রভৃতি গাছ মূলজ মুকুল দ্বারা, গোলাপ, ডালিয়া প্রভৃতি গাছ কান্ডজ মুকুল দ্বারা, পাথরকুচি গাছ পাতার কিনারায় অবস্থিত পত্রাশয়ী মুকুল দ্বারা অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে ।

[v]  বুলবিলের দ্বারা:- চুপড়ি আলু, কন্দ পুষ্প প্রভৃতি গাছের কাক্ষিক মুকুল খাদ্য সঞ্চয় করে স্ফীত হয়ে বুলবিল গঠন করে । বুলবিল মাতৃ (জনিতৃ) দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনুকূল পরিবেশে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে ।

[vi]  পরিবর্তিত কান্ডের দ্বারা:- আদা, ওল, আলু, পেয়াঁজ ইত্যাদি উদ্ভিদ তাদের ভূনিম্নস্থ কান্ডের সাহায্যে, সুষনি, চন্দ্রমল্লিকা, কচুরিপানা, ইত্যাদি অর্ধবায়বীয় কান্ডের সাহায্যে অঙ্গজ জনন সম্পন্ন করে ।

[vii]  রসাল মূলের সাহায্যে:- ডালিয়া, শতমূলী প্রভৃতি উদ্ভিদ রসাল মূলের সাহায্যে অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে ।

অঙ্গজ জননের গুরুত্ব (Importance of Vegetative Reproduction)

১. অঙ্গজ জননের মাধ্যমে মাতৃ উদ্ভিদের মতো একই রকম গুণসম্পন্ন অপত্য উদ্ভিদ উত্পন্ন করা সম্ভব, ফলে বংশপরম্পরায় বিশুদ্ধ গুণের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ।

২. অঙ্গজ জননের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক অপত্যগাছ উত্পন্ন করা যায় ।

৩. অঙ্গজ জননের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক অপত্যগাছে দ্রুত ফুল ও ফল জন্মায় ।

৪. এরকম জননে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ জন্মায় না ।

৫. উদ্ভিদগুলির অভিযোজন ক্ষমতা কমে যাওয়ায়, তারা প্রতিকূল ও নতুন পরিবেশে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারে না, ফলে প্রজাতির অবলুপ্তি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

৬. অঙ্গজ জননের দ্বারা স্বল্প পরিসরে অসংখ্য উদ্ভিদ জন্মায়, ফলে অনেক উদ্ভিদই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অকালে মারা যায় ।

*****

Related Items

ক্রোমোজোমের প্রকারভেদ : অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোম

ক্রোমোজোমে দু'ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়, যথা: হিস্টোন এবং নন-হিস্টোন। ক্ষারীয় প্রোটিন সাধারণত হিস্টোন জাতীয় প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়, এর মধ্যে প্রধানত আর্জিনিন , হিস্টিডিন ও লাইসিন জাতীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে । DNA অম্লধর্মী এবং হিস্টোন ক্ষারধর্মী, তাই ক্রোমোজোমে ...

আর.এন.এ. বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (RNA)

বেশিরভাগ প্রোক্যারিওটিক ও ইউক্যারিওটিক কোশে DNA ছাড়াও আর এক রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা RNA বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড নামে পরিচিত । RNA কোশের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় এবং রাইবোজোমের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে । তবে ক্রোমোজোম ...

ডি.এন.এ. বা ডি-অক্সি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড (DNA)

ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দিয়ে গঠিত যে নিউক্লিক অ্যাসিড জীবের সমস্ত জৈবিক কাজ ও বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে DNA বা ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বলে। কয়েক ধরনের ভাইরাস ছাড়া সব রকমের সজীব কোশেই DNA থাকে । প্রধানত নিউক্লিয়াসের মধ্যে ...

ইউক্যারিওটিক ক্রোমোজোমের বহির্গঠন ও উপাদান

যে-কোনো কোশের প্রতিটি ক্রোমোজোমের দুটি প্রধান অংশ থাকে, যথা -ক্রোমাটিড এবং সেন্ট্রোমিয়ার। প্রত্যেক ক্রোমোজোম লম্বালম্বিভাবে বিভক্ত হওয়ার পর যে দুটি সমান আকৃতির সুতোর মতো অংশ গঠন করে, তাদের প্রত্যেকটিকে ক্রোমাটিড বলে। প্রতিটি ক্রোমাটিড ...

ইউক্যারিওটিক কোশের ক্রোমোজোম, DNA, RNA ও জিন

1902 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী টি.বোভেরি ও ডব্লু. এস. সাটনের পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, জিন হল ক্রোমোজোমের একটি অংশ । পরবর্তীকালে বিভিন্ন বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে, জিন হল ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকা D.N.A. -র একটি অংশ। এরপর বিজ্ঞানী গ্রিফিথ, অ্যাভারি, ম্যাকলয়েড ...