সংবহন (Circulation)

Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/25/2011 - 14:57

সংবহন (Circulation)

সংজ্ঞা  যে বিশেষ পদ্ধতিতে বহু কোষী জীবের প্রতিটি সজীব কোষে সুনির্দিষ্ট পথে খাদ্য বস্তু, অক্সিজেন, হরমন, ভিটামিন, প্রভৃতি প্রেরিত হয় এবং কোষ থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ সমুহ অপসারিত হয়ে দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় থাকে সংবহন বলে।

সংবহনের প্রয়োজনীয়তা

সংবহনের মাধ্যমে জীবদেহে নিম্নলিখিত গুরুত্ব কাজ গুলি সাধিত হয়

১৷ পুষ্টি - উদ্ভিদ দেহে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে প্রস্তুত তরল খাদ্য ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে এবং উন্নত প্রাণীদের ক্ষেত্রে পৌষ্টিক নালী থেকে শোষিত সরল খাদ্য উপাদান রক্তের মাধ্যমে সজীব কোষে পৌঁছায়।

২৷ শ্বসন - সংবহনের প্রধান উদ্দেশ্য শ্বাস অঙ্গের মাধ্যমে অক্সিজেন সংগ্রহ করে, তাকে প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেওয়া এবং কোষের শ্বসনের ফলে উৎপন্ন [tex]C{O_2}[/tex] কে শ্বাস অঙ্গে বহন করে এনে পরিবেশে ত্যাগ করে।

৩৷ হরমোন সংবহন - উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন অগ্রগতি অংশ থেকে এবং প্রাণী দেহে বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন সংবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে পৌঁছায়।

৪৷ রেচন - কোষে উৎপন্ন বিপাকজাত বর্জ্য পদার্থ সমুহ সংবহনের ফলে রেচন অঙ্গে পৌঁছায়।

৫৷ সঞ্চয় - দেহে প্রয়োজন অতিরিক্ত খাদ্য বস্তু সংবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে  পৌঁছায় এবং ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য সঞ্চিত থাকে।

৬৷ দেহের সুরক্ষা - উন্নত প্রাণীর ক্ষেত্রে সংবহনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ ( শ্বেতরক্ত কণিকা ) সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষার বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

 

পরিবহনের মাধ্যম

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে- জল

প্রাণীদের ক্ষেত্রে- রক্ত, লসিকা

পরিবাহিত উপাদান সমূহ

১৷ খাদ্য- প্রাণীদেহে পাচিত সরল খাদ্য ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে দেহ কোষে পরিবাহিত হয়। উদ্ভিদ দেহে পাতায় উৎপন্ন খাদ্য ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কোষে পৌঁছায়।

২৷ ভিটামিন- খাদ্যের সঙ্গে গৃহিত অথবা জীবদেহের সংশ্লেষিত ভিটামিন গুলি রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন কোষে প্রেরিত হয়।

৩৷ খনিজ পদার্থ- স্থলজ উদ্ভিদেরা মাটি থেকে মূলরোমের মাধ্যমে নানান খনিজ লবণ যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস পটাশিয়াম ইত্যাদি শোষণ করে জলে দ্রবীভূত অবস্থায় জাইলেম কলার মাধ্যমে পাতায় প্রেরন করে। প্রাণীদেহে খাদ্যের সঙ্গে গৃহিত খনিজ লবণ রক্তের মাধ্যমে দেহকোষে প্রবাহিত হয়।

৪৷ অক্সিজেন- সংবহন তন্ত্র বিশিষ্ট প্রাণীদেহের শ্বাসযন্ত্র থেকে অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে কোষে কোষে পৌঁছায়, রক্তের হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সিহিমোগ্লোবিন যৌগ গঠন করে, রক্তে অক্সিজেন পরিবহণ করে।

৫৷ কার্বন-ডাই-অক্সাইড – কোষে শোষণের ফলে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রে ফিরে আসে এবং শ্বাসযন্ত্র থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নির্গত হয়। রক্তে সোডিয়াম বাই কার্বনেট , পটাশিয়াম বাই কার্বনেট, কার্বো অ্যামাইনো যৌগ ইত্যাদি গঠন করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহণ করে।

*****

Related Items

লসিকা সংবহন (Lymph Circulation)

লসিকা সংবহন তন্ত্র - লসিকা সংবহনে সাহায্যকারী অঙ্গ গুলি মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠন করে, তাকে লসিকা সংবহন তন্ত্র বলে।, লসিকা - লসিকা একরকম হালকা হলুদ বর্ণের স্বচ্ছ ক্ষারীয় তরল যোগ কলা , লসিকার কাজ ও গুরুত্ব , লসিকা সংবহন.....

মানব দেহে রক্ত ও রক্ত কণিকা

রক্ত এক প্রকার অসচ্ছ, লমনাক্ত, ক্ষার ধর্মী তরল যোগ কলা। রক্তের কাজ , রক্তের বিভাগ, মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্ত প্রবাহের কারণ কি, রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ...

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন তন্ত্র, হৃৎপিণ্ডের গঠন, প্রকোষ্ঠ, অলিন্দ, নিলয়, কপাটিকা, ট্রাইকাসপিড কপাটিকা , বাইকাস পিড কপাটিকা, পালমনারি কপাটিকা, অ্যাওটিক কপাটিকা সম্পর্কিত আলোচনা। ডান অলিন্দ, ডান নিলয়, বাম অলিন্দ, বাম নিলয় ....

উদ্ভিদ সংবহনের পার্থক্য সমূহ

উদ্ভিদ সংবহনর কয়েকটি পার্থক্য সমূহ ছক আকারে দেওয়া হলো - 1. জাইলেম ও ফ্লোয়েম, 2. ব্যাপন ও অভিস্রাবন, 3. পরিবহণ ও সংবহন, 4. ঊর্ধ্বমুখী সংবহন ও নিম্নমুখী সংবহন ..

বাষ্পমোচন (Transpiration)

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার মূল দ্বারা শোষিত জলের অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত অংশ লেন্টিসেল, কিউটিকল, পত্ররন্ধ্র ইত্যাদি বায়বীয় অংশের মাধ্যমে দেহ থেকে বাস্পের আকারে বের করে দেয়, প্রোটোপ্লাজম নিয়ন্ত্রিত ওই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাষ্পমোচন বলে। ...