ডারউইনের তত্ত্ব (Theory of Darwin)
ডারউইন অভিব্যক্তি সম্পর্কে যে মতবাদ প্রকাশ করেন, সেই মতবাদকে ডারউইনবাদ বা প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলা হয় । 1959 খ্রিস্টাব্দে 'Origin of Species by means of Natural Selection' নামে এক গ্রন্থে ডারউইন তাঁর মতবাদগুলি প্রকাশ করেন ।
ডারউইনের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি:-
[1] অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি:- ডারউইনের মতে, অত্যধিক হারে বংশবৃদ্ধি করাই হল জীবের সহজাত বৈশিষ্ট্য । এর ফলে জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে জীবের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।
[2] অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম:- জীবের জ্যামিতিক ও গাণিতিক হারে সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটার জন্য এবং খাদ্য ও বাসস্থান সীমিত থাকায় বেঁচে থাকার জন্য জীবকে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় । ডারউইন এই রকম সংগ্রামকে 'অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম' আখ্যা দিয়েছেন । জীবকে তিনটি পর্যায়ে এই সংগ্রাম করতে হয়, যথা :
[i] অন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম, অর্থাৎ একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যে সংগ্রাম ।
[ii] আন্তঃপ্রজাতির সংগ্রাম, অর্থাৎ যে কোনো দুই বা ততোধিক প্রজাতির মধ্যে সংগ্রাম ।
[iii] প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে সংগ্রাম ।
[3] ভ্যারিয়েশান বা ভেদ বা প্রকারণ:- ডারউইনের মতে, পৃথিবীতে যে-কোনও দুটি জীব কখনই অবিকল একই রকমের হতে পারে না । অর্থাৎ জীবের মধ্যে কিছু না কিছু পার্থক্য বা ভেদ থাকবেই । ডারউইনের ধারণা অনুসারে ছোটো ছোটো ধারাবাহিক পরিবর্তনই হল নতুন প্রজাতির জীবের উৎপত্তির জন্য দায়ী ।
[4] যোগ্যতমের উদবর্তন:- ডারউইনের মতে, যে সমস্ত প্রকারণ বা ভেদ জীবের জীবন সংগ্রামের পক্ষে সহায়ক এবং পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজনমূলক, তারাই কেবল বেঁচে থাকবে এবং তাদের উদবর্তন ঘটবে । অন্যরা কালক্রমে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হবে ।
[5] প্রাকৃতিক নির্বাচন:- যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা অন্যান্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, তাকে প্রাকৃতিক নির্বাচন বলে । অনুকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হলে বেশি সংখ্যায় বেঁচে থাকে এবং অত্যাধিক হারে বংশবিস্তার করে । প্রাকৃতিক নির্বাচন এক্ষেত্রে চালুনির মতো কাজ করে এবং সবচেয়ে উন্নত ও যোগ্যতম বংশধরকে ধরে রাখে । অপরপক্ষে, প্রতিকূল ভেদ সমন্বিত জীবেরা প্রকৃতির দ্বারা নির্বাচিত হয় না বলে পরাজিত সৈনিকের মতো ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যায় ।
[6] নতুন প্রজাতির উত্পত্তি:- একটি বিশেষ জীবগোষ্ঠীর মধ্যে অনুকূল প্রকারণগুলি পুঞ্জীভূত হওয়ায় জীবের পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষের মধ্যে অনেক বেশি বৈসাদৃশ্য দেখা দেয় এবং এরই ফলে কালক্রমে একটি নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে । বিবর্তনের ফলস্বরূপ জীবজগতে নতুন প্রজাতির জন্ম হয় ।
*****
- 12233 views