মেহেরগড় সভ্যতা (Mehrgarh Civilisation)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 10:10

মেহেরগড় সভ্যতা (Mehrgarh Civilisation) :

হরপ্পা সভ্যতার আগে নব্যপ্রস্তর যুগের যে সব কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে মেহেরগড় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । হরপ্পা সভ্যতার কিছু কিছু লক্ষণ এই সভ্যতার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় বলে অনেকে এই সভ্যতাকে আদি সিন্ধু সভ্যতা বলে অভিহিত করেছেন ।

(১) অবস্থান (Location of Mehrgarh Civilisation) : বালুচিস্তানের কাচ্চি সমতলভূমিতে বোলান নদীর পাড়ে কোয়েটা শহর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে মেহেরগড়ের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে । জ্যাঁ ফ্রাসোয়া জারিজ -এর নেতৃত্বে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই মেহেরগড় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন । এই সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলি হল কিলে গুল মহম্মদ, কোট ডিজি, গুমলা, মুন্ডিগাক, রানা ঘুনডাই, আনজিরা এবং মেহেরগড় ।

(২) সময়কাল : প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে আনুমানিক ৭০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল । এই সভ্যতা বহু বছর স্থায়ী হয়েছিল বলে মনে করা হয় ।

(৩) সভ্যতার বৈশিষ্ঠ (Characteristics of  Mehrgarh Civilisation) : মেহেরগড়ের খনন কার্যের ফলে যে সব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে চাষবাসের কিছু প্রমাণ মিলেছে এবং বহু দূর দেশের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্যের সম্পর্কের প্রমাণও পাওয়া যায় । এখানকার মানুষ যে ঘরবাড়ি তৈরি করে গ্রাম স্থাপন করেছিল, প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্যে তার প্রমাণ মেলে ।

(ক) প্রাচীনতর পর্যায়ে একাধিক ঘর নিয়ে বাড়ি তৈরি করা হত । এইসব বাড়ি তৈরি হত রোদে শুকানো ইটের সাহায্যে । এই সময় তারা চাষবাস, পশুপালন ও শিকার করত । মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হত এবং কোঁকড়ানো অবস্থায় সমাধিস্থ মৃতদেহ পাওয়া গেছে ।

(খ) পরের দিকে কৃষিকার্য ও পশুপালনের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় । এই সময় তারা মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যবহার করতে শুরু করেছিল । বাড়িগুলিও আকারে বড়ো হয়েছিল । এইসব বাড়ি থেকে ছোটো শিলনোড়ার পাথর, উনুন, হাড় দিয়ে তৈরি হাতিয়ার ইত্যাদি জিনিস পাওয়া গেছে । সমাধির মধ্যে যে সব জিনিস পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ঝিনুকের তৈরি লকেট, পুঁতি ও ঝিনুক জাতীয় জিনিসের মালা, পাথরের লকেট, হাড়ের আংটি, পালিশ করা পাথরের কুডুল ইত্যাদি প্রধান । তখনকার মানুষ যব, গম, কুল, খেজুর ইত্যাদি চাষ করত । জন্তুজানোয়ারের মধ্যে হরিণ, হাতি, নীলগাই, বুনো ভেড়া ও ছাগল, শুয়োর, গোরু ইত্যাদির হাড় পাওয়া গেছে । গরু, ভেড়া, ছাগল এবং সম্ভবত কুকুরও পোষ মানানো হত । শুধু চাষবাস বা পশুপালন এখানকার মানুষের উপজীবিকা ছিল না । ব্যবসা বাণিজ্যও করত । এখানে পাওয়া সামুদ্রিক ঝিনুক থেকে মনে হয় সমুদ্র উপকূলবর্তী স্থানের সঙ্গে এদের ব্যাবসাবাণিজ্য চলত । মেহেরগড়ে যে সব পাথর পাওয়া গেছে তা থেকে মনে হয়, তাদের বাণিজ্য অন্তত তুর্কমেনিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । পাথর দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র বা জিনিসপত্র তৈরি হত । ধাতুর ব্যবহার অজ্ঞাত হলেও, সমাধি থেকে তামার তৈরি একটি পুঁতি পাওয়া গেছে । এখানে পাথরের তৈরি কুড়ুল পাওয়া গেছে ।

(৪) মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্ব (Importance of Mehrgarh Civilisation) : মেহেরগড় সভ্যতার আবিষ্কার কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ ।

(i) এখানে গম ও যব চাষের যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা থেকে বোঝা যায় যে, এই দুটি শস্যের সূত্রপাত পশ্চিম এশিয়া থেকে ভারতে আমদানি করা হয়নি ।

(ii) এই সভ্যতা নব্যপ্রস্তর যুগের হলেও তামা, সিসা প্রভৃতি ধাতুও পুরোপুরি অজ্ঞাত ছিল না ।

(iii) এখানকার মানুষ দূরবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য করত ।

(iv) এখানে কাঁচা মাটি দিয়ে পুরুষমূর্তি ও পোড়া মাটির নারীমূর্তি পাওয়া গেছে । তবে এই সব মূর্তির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কতটুকু ছিল, তা সঠিক ভাবে বলা যায় না ।

(v) এই সভ্যতার আবিষ্কার প্রমাণ করে যে, সিন্ধু সভ্যতার আগে নব্যপ্রস্তর যুগে বালুচিস্তান অঞ্চলে একটি মোটের উপর উন্নত গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা ছিল । এই জন্য অনেকে এই সভ্যতাকে আদি সিন্ধু সভ্যতা বলে অভিহিত করেছেন ।

*****

Related Items

তৈমুর লঙ্গের ভারত আক্রমণ

ফিরোজ শাহ তুঘলকের মৃত্যুর পর দিল্লী সুলতানির পতন আসন্ন হয়ে পড়ে । ১৩৯৮ খ্রীষ্টাব্দে তৈমুর লঙ্গের ভারত আক্রমণ এই পতনের প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে । তৈমুর লঙ্গের ভয়ে সুলতান নাসিরুদ্দিন মামুদ দিল্লী ছেড়ে পালিয়ে যান । তৈমুরের আক্রমণ দিল্লি সুলতানির অন্তসার ...

ফিরোজ শাহ তুঘলক (Firuz Shah Tughluq)

মহম্মদ বিন তুঘলকের পর তাঁর খুড়তুতো ভাই ফিরোজ শাহ তুঘলক সিংহসনে বসেন । তিনি আমির, ওমরাহ এবং ধর্মীয় নেতাদের অনুরোধে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন । কিন্তু বিজেতা বা শাসক হিসাবে তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেনি । মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন ন্যায় পরায়ণ,..

মহম্মদ বিন তুঘলক

খলজি বংশের অবসানের পর তুঘলকি আমল শুরু হয় । তুঘলকি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গিয়াস উদ্দিন তুঘলক । গিয়াস উদ্দিনের পুত্র মহম্মদ বিন তুঘলক (১৩২৫-১৩৫১) ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান । সম্ভবত তিনি তাঁর পিতাকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন ...

খলজি বংশ ও আলাউদ্দিন খলজি

১২৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের মৃত্যু হয় । তারপর তাঁর উত্তরাধিকারীদের হত্যা করে প্রধান সেনাপতি জালালউদ্দিন খলজি ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির সুলতান হন । জালালউদ্দিন খলজির দিল্লি দখলের সঙ্গে সঙ্গে দাস বংশের অবসান ঘটে ও খলজি বংশের সূচনা হয় । ...

গিয়াসউদ্দিন বলবন (Ghias-ud-din Balban)

গিয়াসউদ্দিন বলবন ১২৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর ইলবেরি তুর্কিজাত সুলতানদের মধ্যে গিয়াসউদ্দিন বলবনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । সিংহাসনে আরোহণ করার পরে গিয়াসউদ্দিন বলব্ন এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন ...