মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 10/29/2014 - 09:00

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প (Non-Agricultural Industry) : অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাস দ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাস দ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে ।

(১) রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহৃত হত । এই সব জিনিস ব্যবহার করত সম্রাট ও অভিজাত শ্রেণির মানুষ । অবশ্য সাধারন মানুষ ধাতুর তৈরি ছোটোখাটো জিনিস ব্যবহার করত । লোহার তৈরি জিনিসের মধ্যে কাটারি ও অস্ত্রশস্ত্রের চাহিদা ছিল ।

(২) কাঠের তৈরি চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি আসবাবপত্রের খুব একটা চাহিদা ছিল না । এগুলি মুলত ব্যবহার করত ইউরোপীয় বণিকরা । ঘরবাড়ির কাজে এবং কৃষিকাজের জন্য যন্ত্রপাতি তৈরি করতে কাঠের ব্যবহার হত । জাহাজ, নৌকা ও গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেও কাঠ ব্যবহার করা হত । কাশ্মীর ও গুজরাটের কাঠ ছিল বিখ্যাত । চন্দন কাঠের তৈরি জিনিসের দাম বেশি হত ।

(৩) চামড়া শিল্পের কেন্দ্র ছিল লাহোর ও মুলতান । লাহোরে তৈরি জুতো, ঘোড়ার সাজ ও জিনের খুব খ্যাতি ছিল ।

(৪) মুঘল যুগে তালপাতার বদলে কাগজের ব্যবহার শুরু হয় । লাহোর, অয্যোধ্যা, বিহার প্রভৃতি এলাকায় কাগজ তৈরি হত ।

(৫) সাধারণ মানুষ রান্নার কাজে মাটির তৈরি জিনিস ব্যবহার করতো । দামি মাটির পাত্র ব্যবহার করতো ধনী ব্যক্তিরা ।

(৬) মুঘল আমলে খনিজ শিল্প খুব একটা  উন্নত ছিল না । সোনা, রূপা ও তামার ব্যবহার প্রচলিত ছিল । দাক্ষিণাত্য ও পান্নায় হিরা পাওয়া যেতো । বাংলা ও বিহারেও তখন কিছু হিরা পাওয়া যেত ।

(৭) লবণ তৈরি হতো পাঞ্জাব, আজমির, অয্যোধ্যা, মুলতান, সিন্ধু, কচ্ছের রান, মালাবার, মহীশূর এবং বাংলায় ।

শিল্পীদের জীবন : মুঘল আমলে শিল্প উৎপাদন পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে ভারত অনগ্রসর হলেও শিল্পীদের দক্ষতা ও পারদর্শিতা ছিল তারিফ করার মতো এবং এই বিষয়ে ইউরোপ অনেক পিছিয়ে ছিল । বিলাস দ্রব্য নির্মাণ ও বস্ত্রশিল্পে যে কারুকার্য ও শিল্পীর হাতের ছোঁয়া ছিল, তা অবশ্যই উচ্চ প্রশংসা দাবি করে । শিল্প উৎপাদনে বিশেষীকরণ ও স্থানীয়করণ ঘটেছিল । অর্থাৎ, এক একটি অঞ্চলে এক একটি শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল । শিল্পকার্যে নিযুক্ত ব্যক্তিদের অবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আবুল ফজল বলেছেন যে, দক্ষ শিল্পী ও কারিগরদের যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা ছিল । তবে শিল্পী ও কারিগরদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না । পেলসার্ট, হকিন্স, বার্নিয়ার প্রভৃতি বিদেশি পর্যটকগণ বলেছেন যে, শিল্পীদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হত এবং মজুরিও বেশি ছিল না । অধিকাংশ মানুষই যাহোক করে খেয়ে পরে জীবিকা নির্বাহ করত । যদুনাথ সরকার বলেছেন, শ্রমশিল্পীদের অবস্থা ভালো ছিল না এবং কিছু মানুষের ঐশ্বর্য ও বৈভব থেকে দেশের আর্থিক চিত্র অনুমান করার কোন উপায় ছিল না ।

*****

Related Items

ভারতীয় সভ্যতার বিবর্তন : সিন্ধু ও বৈদিক সভ্যতা

পুরাপ্রস্তর যুগ, মধ্যপ্রস্তর যুগ, নব্যপ্রস্তর যুগ, মেহেরগড় সভ্যতা, অবস্থান, সময়কাল, সভ্যতার বৈশিষ্ঠ, মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্ব, ধাতুর আবিষ্কার ও তাম্রযুগ, সিন্ধু বা হরপ্পা সভ্যতা, বৈদিক সভ্যতা, জৈনধর্মের উত্থান ও আদর্শ, বৌদ্ধধর্মের উত্থান ও আদর্শ ...

ভারতের ইতিহাসে ভৌগোলিক উপাদান ও তার প্রভাব

ভারতবর্ষ নামকরণের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ্য, ভারতের ইতিহাসে ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব, ভারতের ইতিহাসে হিমালয় পর্বতের প্রভাব, ভারতের ইতিহাসে হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন গিরিপথের প্রভাব, ভারতের ইতিহাসে বিন্ধ্য পর্বতের ...

Class IX History Study Reference

ইতিহাস, নবম শ্রেণির জন্য, বিষয়- ভারতের ইতিহাসে ভৌগোলিক উপাদান ও তার প্রভাব, ভারতীয় সভ্যতার বিবর্তন : সিন্ধু ও বৈদিক সভ্যতা, রাজশক্তির উত্থান : বিম্বিসার থেকে গুপ্তযুগ, গুপ্ত পরবর্তী ভারত, প্রাচীন ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি