প্রশ্ন : 'বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর' —মন্তব্যটি কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ? মন্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।
উঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ, সে বিষয়ে প্রশ্ন অবন্তর বলে মনে করেন । তাঁর মতে আমাদের রান্নাঘর থেকে যেমন আলু, কপি তাড়ানো যায় না, কিম্বা বিদেশি ওষুধ, বিদেশি প্রসাধন যেমন আমরা বাদ দিয়ে বাঁচতে পারি না, তেমনি আমাদের ভাষা থেকে বিদেশি শব্দকে একেবারে বাদ দিতে পারি না । বাংলা ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রয়োজনে বিদেশি শব্দ যেমন আছে, তেমন থাকবে। প্রয়োজনে আরও শব্দ আমদানিও করতে হবে । কেউ কেউ জোর করে বিদেশি শব্দ বর্জন করার চেষ্টা করেছেন । কিন্তু বহু বিখ্যাত লেখক ও কবি সাদরে বিদেশি শব্দকে গ্রহণও করেছেন । যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন "আব্রু দিয়ে, ইজ্জত দিয়ে, ইমান দিয়ে ....... ইত্যাদি । এখানে আব্রু, ইজ্জৎ, ইমান তিনটি বিদেশি শব্দ । কাজী নজরুল ইসলাম 'ইনকিলাব', 'শহীদ' আরবি শব্দ দুটি বাংলা ভাষায় ঢুকিয়ে গেছেন । বিদ্যাসাগর মহাশয় সাধু গদ্য রচনায় বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করলেও অসাধু রচনায় তিনি বহু বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছেন ।
বিদেশি শব্দ গ্রহণ বা প্রবেশের ক্ষেত্রে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সমর্থন জানিয়েছেন । বিদেশি শব্দ বিশেষত আরবি, ফারসির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করাকে বোকামি বলে মনে করতেন । হিন্দি সাহিত্যেও পণ্ডিত প্রেমচন্দ্রও প্রচুর আরবি, ফার্সি ভাষার শব্দ ব্যবহার করেছেন । এইসব দৃষ্টান্ত দিয়ে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিদেশি শব্দের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর ।
*****