'দাম' গল্পে সুকুমার কোন উপলব্ধিতে পৌঁছেছে তা আলোচনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 02/07/2022 - 22:40

প্রশ্ন : 'দাম' গল্পে সুকুমার কোন উপলব্ধিতে পৌঁছেছে তা আলোচনা কর

উঃ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' একটি অসাধারণ ছোট গল্প । 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমার অঙ্কে বরাবরই দুর্বল ছিলেন । সুকুমারের কাছে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন মূর্তিমান এক বিভীষিকা ।

ম্যাট্রিকুলেশনের পর অঙ্ক ও মাস্টারমশাই দুজনের হাত থেকে রেহাই পেয়েও সুকুমারের অবচেতন মনে সেই বিভীষিকা থেকেই গিয়েছিল । পরবর্তীকালে বাংলার অধ্যাপক লেখক সুকুমার একটি পত্রিকায় ছেলেবেলার সেই স্মৃতি নিয়ে মাস্টারমশাইকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছিলেন । তাঁর মনে হয়েছিল অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না । এই বাল্যস্মৃতি লিখে সুকুমার পত্রিকার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নগদ দশ টাকা পেয়েছিলেন । এই টাকা পেয়ে তাঁর মনে হয়েছিল সারাজীবনে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে এইটুকুই তাঁর নগদ লাভ । কিন্তু পরে বাংলাদেশের একপ্রান্তে অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ সেই অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর সব ভুল ভেঙে যায় । তখন সুকুমারের মনে হয় যে, সে যেন স্নেহ-মমতা ক্ষমার এক মহাসমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে ।

যে স্নেহের দাম সংসারের সব ঐশ্বর্যের চেয়েও মূল্যবান, তাকে সে দশ টাকায় বিক্রি করেছিল । এজন্য সুকুমারের নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয় । মাস্টারমশাইয়ের কড়া শাসনের আড়ালে যে আসলে পিতার স্নেহই লুকানো ছিল, তা তিনি বুঝতে পারেন নি । আর এই উপলব্ধি হওয়া মাত্রই সুকুমার আত্মগ্লানিতে ভুগেছেন এবং বলেছেন "এ অপরাধ আমি বই কী করে, এ লজ্জা আমি কোথায় রাখব ।"

সমগ্র গল্পটি পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, সুকুমার সৎ, স্পষ্টবক্তা এবং স্বচ্ছ ধারনার মানুষ । নিজের ভুল স্বীকার করা ও নিজেকে শুধরে নেওয়ার সততা তাঁর মধ্যে আছে এবং সর্বোপরি তিনি মাস্টারমশাইয়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসাও পোষণ করেছেন ।

*****

Comments

Related Items

খেয়া — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খেয়া — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

**************************

খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে;

কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে ।

দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা,

সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা ।

আবহমান — নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

আবহমান — নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

*********************************

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,

লাউমাচাটার পাশে ।

ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল

সন্ধ্যার বাতাসে ।

 

কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,

নোঙর — অজিত দত্ত

নোঙর — অজিত দত্ত

*********************

পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে

নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে ।

সারারাত মিছে দাঁড় টানি,

মিছে দাঁড় টানি ।

জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে,

আকাশে সাতটি তারা — জীবনানন্দ দাশ

আকাশে সাতটি তারা — জীবনানন্দ দাশ

************************************

আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি এই ঘাসে

বসে থাকি; কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো

গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে—আসিয়াছে শান্ত অনুগত

কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি — মুকুন্দ চক্রবর্তী

কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি — মুকুন্দ চক্রবর্তী

**********************************

মেঘে কৈল অন্ধকার মেঘে কৈল অন্ধকার ।

দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার ।।

ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর ।

উত্তর পবনে মেঘ ডাকে দুর দুর ।।

নিমেষেকে জোড়ে মেঘ গগন-মন্ডল ।