তড়িৎ চুম্বকত্ব (Electromagnetism)

Submitted by arpita pramanik on Mon, 01/28/2013 - 18:09

তড়িৎ চুম্বকত্ব (Electromagnetism) :

তড়িৎচুম্বক (Electromagnet) : একটি লম্বা কাঁচা লোহার দন্ডের গায়ে অন্তরিত তার দিয়ে ঘনভাবে বেশ কয়েক পাক জড়িয়ে, ওই তারে সমপ্রবাহী তড়িৎ চালনা করলে লোহার দন্ডটি চুম্বকত্ব পায় এবং লোহার দন্ডের দুই প্রান্তে বিপরীত দুটি চৌম্বক মেরুর সৃষ্টি হয় । যতক্ষণ তড়িৎপ্রবাহ চলে চুম্বকত্ব ততক্ষণ স্থায়ী হয়— তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করলে লোহার দন্ডটির চুম্বকত্বের বিলোপ ঘটে । তড়িৎপ্রবাহ দ্বারা সৃষ্ট এই চুম্বককে তড়িৎ-চুম্বক বলে । পাক দেওয়া অন্তরিত তারের কুণ্ডলীটিকে সলিনয়েড বলে ।

কোনো চৌম্বক পদার্থের গায়ের ওপর অন্তরিত পরিবাহী তার জড়িয়ে তার ভিতর দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের সাহায্যে চৌম্বক পদার্থকে অস্থায়ী চুম্বকে পরিণত করা হলে, সেই চুম্বককে তড়িৎচুম্বক বলে । তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ করলে চৌম্বক পদার্থের চুম্বকত্ব লোপ পায়

 

বেশি শক্তিশালী তড়িৎচুম্বক তৈরি করতে হলে কাঁচা লোহার দন্ডটিকে অশ্বখুরের মতো U -আকারের করা হয় । U -আকারের কাঁচা লোহার দন্ডটিকে সলিনয়েডের মজ্জা বলে । এর দুই বাহুর ওপর অন্তরিত তার বিপরীত দিকে জড়িয়ে একটি সলিনয়েড গঠন করা হয় । এক বাহুর ওপর তার জড়ানো শেষ হলে ওই তারের প্রান্তটিকে বাহুটির ওপরের পৃষ্ঠ থেকে বের করে অন্য বাহুটির ওপর বিপরীতদিকে জড়ানো হয় । পাশে চিত্রের সাহায্যে দেখানো হল । যেমন— ‘X’ বাহুতে তার জড়িয়ে তারের প্রান্তটিকে বাহুটির ওপর থেকে বের করে ‘Y’ বাহুটির তলা দিয়ে বের করে ‘Y’ বাহুটিকে জড়ানো হয়েছে ।

তড়িৎচুম্বকের মেরু নির্ণয় :- তড়িৎ চুম্বকের মেরুর প্রকৃতি তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখের ওপর নির্ভর করে । তার কুণ্ডলী দিয়ে সমপ্রবাহী তড়িৎপ্রবাহ হলে, লোহার দন্ডের অক্ষ বরাবর যে প্রান্তের দিকে লম্বভাবে তাকালে কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে (Clock wise) তড়িৎ-প্রবাহ হয়, সেই প্রান্তে দক্ষিণ মেরু এবং যে প্রান্তে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে (Anti-Clock wise) তড়িৎ-প্রবাহ হয়,; সেই প্রান্তে উত্তর মেরুর সৃষ্টি হয় ।

 তড়িৎচুম্বকের ব্যবহার :-

[১] অচৌম্বক পদার্থের সঙ্গে চৌম্বক পদার্থ মেশানো থাকলে চৌম্বক পদার্থ পৃথক করতে তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহার করা হয় ।

[২] কারখানার খুব ভারী লোহার বস্তুকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ক্রেন থাকে, তাতে তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহার করা হয় ।

[৩] বৈদ্যুতিক ঘন্টা, টেলিগ্রাফ, রিলে ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক মোটর, ডায়নামো প্রভৃতি যন্ত্রে তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহার করা হয় ।

[৪] চোখে লোহার গুঁড়ো পড়লে তা বের করে আনার জন্য ডাক্তারেরা বিশেষ ধরনের তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহার করেন ।

[৫] পরমাণু বিজ্ঞানের গবেষণায় ব্যবহৃত সাইক্লোট্রোন যন্ত্রে শক্তিশালী তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহৃত হয় ।

[৬] আবেশকুণ্ডলী তৈরি করতে তড়িৎ-চুম্বক ব্যবহৃত হয় ।

*****

Comments

Related Items

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...

কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎ বিশ্লেষণ

কপার সালফেট জলে আয়নিত হয়ে কপার (+) এবং সালফেট (-) আয়ন উত্পন্ন করে । সুতরাং, জলীয় দ্রবণে চার প্রকার আয়ন থাকে, দুধরনের ক্যাটায়ান H (+) ও Cu (+) এবং দু ধরনের অ্যানায়ন OH (-) ও সালফেট (-) ।

জলের তড়িৎ-বিশ্লেষণ

বিশুদ্ধ জল তড়িতের কুপরিবাহী, কিন্তু সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার জলে মেশালে ওই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয় । এর কারণ হল বিশুদ্ধ জলে খুব কম সংখ্যক অণু H+ এবং OH- আয়নে বিশ্লেষিত অবস্থায় থাকে । ওই জলে সামান্য অ্যাসিড কিংবা ক্ষার যোগ করলে এদের আয়ন ...

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ

যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

তড়িৎ-পরিবাহী এবং তড়িৎ-অপরিবাহী

যে সব পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-প্রবাহিত করলে তা তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম হয়, তাদের তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থ বলে । যেমন; সোনা, রুপো, তামা, প্রভৃতি ধাতু, গ্রাফাইট, সোডিয়াম ক্লোরাইড দ্রবণ ইত্যাদি । তড়িৎ-পরিবহনে সক্ষম এমন পদার্থগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় --