সালফিউরিক অ্যাসিড ও সালফিউরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি

Submitted by arpita pramanik on Tue, 03/12/2013 - 12:30

সালফিউরিক অ্যাসিড ও সালফিউরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি :

সালফিউরিক অ্যাসিড (Sulphuric Acid) :- মধ্যযুগের অ্যালকেমিস্টরা হিরাকস্ বা ফেরাস সালফেটের সঙ্গে ফটকিরি মিশিয়ে সেই মিশ্রণকে পাতিত করে সর্বপ্রথম সালফিউরিক অ্যাসিড প্রস্তুত করেন । ফেরাস সালফেট ভিট্রিয়ল নামে পরিচিত । তাই ফেরাস সালফেট থেকে এই অ্যাসিড পাওয়া যায় বলে, সালফিউরিক অ্যাসিডকে অয়েল অফ ভিট্রিয়ল (Oil of vitriol) বলা হয় । অজৈব অ্যাসিডের মধ্যে সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) -এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি । সে জন্য সালফিউরিক অ্যাসিডকে রসায়নের রাজা (King of Chemicals) বলা হয়ে থাকে ।

সালফিউরিক অ্যাসিডর আণবিক ভর - 98 এবং আণবিক সংকেত - H2SO4

স্পর্শ পদ্ধতিতে সালফিউরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি (Contact process for the manufacture of sulphuric acid)

নীতি (Principle) :

[i] আয়রন পাইরাইটিস (FeS2) অথবা নিঃশেষিত আয়রন অক্সাইড (Fe2S3) কিংবা সালফারকে অতিরিক্ত বায়ুর সঙ্গে পোড়ালে সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) গ্যাস উৎপন্ন হয় ।

     4FeS2 + 11O2 = 2Fe2O3 + 8SO2 ↑ S + O2 = SO2

[ii] উৎপন্ন সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) কে বায়ুর সঙ্গে মিশিয়ে 450°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত প্ল্যাটিনাম অ্যাসবেসটস অথবা ভ্যানডিয়াম পেন্টক্সাইডের (অনুঘটক) ওপর দিয়ে চালনা করলে সালফার ডাইঅক্সাইড বায়ুর O2 দ্বারা জারিত হয়ে সালফার ট্রাইঅক্সাইড (SO3) উৎপন্ন করে । বিক্রিয়াটি উভমুখী এবং সম্মুখ বিক্রিয়াটি তাপ উৎপাদক । এই বিক্রিয়ায় প্ল্যাটিনাম অ্যাসবেসটস অথবা ভ্যানডিয়াম পেন্টক্সাইড অনুঘটকের কাজ করে । বর্তমানে V2O5 অনুঘটক রূপে বেশি ব্যবহৃত হয় কারণ এর দাম কম এবং সহজে আর্সেনিক ইত্যাদি অশুদ্ধি দ্বারা নষ্ট হয় না ।  V2O5 বা, Pt (অনুঘটক) 

    [tex] 2S{O_2} + {O_2} \rightleftharpoons 2S{O_3} + heat(45000calorie) [/tex]

[iii] এভাবে উৎপন্ন সালফার ট্রাইঅক্সাইড 98% গাঢ় H2SO4 দ্বারা শোষিত হলে ওলিয়াম বা ধুমায়মান সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয় ।

    SO3 + H2SO4 = H2S2O7 (ওলিয়াম)

[iv] ওলিয়ামের সঙ্গে পরিমাণমত জল মেশালে সালফিউরিক অ্যাসিড দ্রবণ উৎপন্ন হয় ।

    H2S2O7 + H2O = 2H2SO4

[২] পদ্ধতি : সালফার-ডাইঅক্সাইড উৎপাদন :-  সালফার চুল্লিতে অতিরিক্ত বাতাসের সঙ্গে সালফার বা আয়রন পাইরাইটিসকে (FeS2) পুড়িয়ে সালফার-ডাইঅক্সাইড (SO2) উৎপন্ন করা হয় । SO2 এবং বায়ুর মিশ্রণে সাধারণত হাইড্রোজেন সালফাইড, আর্সেনিক অক্সাইড, ধুলোকণা ইত্যাদি অশুদ্ধি মিশ্রিত থাকে এবং এই অবস্থায় এই গ্যাস মিশ্রণটিকে বিক্রিয়া প্রকোষ্ঠে অনুঘটকের ওপর দিয়ে চালনা করলে মূল্যবান অনুঘটক নষ্ট হয়ে যায় । সেজন্য বিক্রিয়া প্রকোষ্ঠে পাঠাবার আগে গ্যাস মিশ্রণটি যাতে বিশুদ্ধ হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয় ।

গ্যাস মিশ্রণের বিশুদ্ধিকরণ :-

[i]  বায়ু ও SO2 -এর মিশ্রণকে প্রথমে ধুলো প্রকোষ্ঠের মধ্যে চালনা করে ধুলো মুক্ত করা হয় ।

[ii] এর পর গ্যাস মিশ্রণটিকে একটি কোয়ার্টজপূর্ণ স্তম্ভের নীচ থেকে জলের ধারা ফেলা হয় । এর ফলে গ্যাস মিশ্রণটি সম্পূর্ণ ধুলোমুক্ত হয় এবং মিশ্রিত হাইড্রোজেন সালফাইড, আর্সেনিক অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসগুলি জল দ্বারা শোষিত হয় ।

[iii] এর পর গ্যাস মিশ্রণটিকে আর একটি কোয়ার্টজপূর্ণ স্তম্ভের নীচ থেকে ওপরের দিকে চালনা করা হয় এবং ওপর থেকে নীচের দিকে গাঢ় H2SO4 -এর ধারা ফেলা হয় । এর ফলে গ্যাস মিশ্রণটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ ও শুষ্ক হয় ।

[iv] এরপর গ্যাস মিশ্রণটি বিশুদ্ধ হয়েছে কি না পরীক্ষা করা হয় । বিশুদ্ধ গ্যাস, আলোক রশ্মির মধ্যেও স্বচ্ছ হয় । গ্যাস মিশ্রণটিকে টিন্ডাল বক্সের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয় এবং ভিতর থেকে তীব্র আলোক রশ্মি ফেলা হয় । এই অবস্থায় মিশ্রণটি স্বচ্ছ দেখালে গ্যাস মিশ্রণটি যে বিশুদ্ধ হয়েছে তা বোঝা যায় ।

[গ] SO2  -এর জারণ :- এই শুষ্ক ও বিশুদ্ধ গ্যাস মিশ্রণটিকে বিক্রিয়া প্রকোষ্ঠে পাঠানো হয় । গ্যাস মিশ্রণটিকে 450°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত প্ল্যাটিনাম অ্যাসবেস্টসের ওপর দিয়ে চালনা করা হয় । এখানে SO2, বায়ুর O2 দ্বারা জারিত হয়ে সালফার ট্রাইঅক্সাইড [SO3] উৎপন্ন করে । যে প্রকোষ্ঠে এই বিক্রিয়াটি ঘটে তাকে বিক্রিয়া প্রকোষ্ঠ বলে ।

[i] ওলিয়াম বা পাইরোসালফিউরিক অ্যাসিড (H2S2O7) উৎপাদন :-  উৎপন্ন SO3 -কে ঠান্ডা করে আর একটি কোয়ার্টজপূর্ণ স্তম্ভের মধ্যে চালনা করা হয় । এখানে ওপর থেকে গাঢ় H2SO4 -এর ধারা ফেলা হয় । এই স্তম্ভের মধ্যে সালফার ট্রাইঅক্সাইড, গাঢ় H2SO4 দ্বারা শোষিত হয়ে ওলিয়াম উৎপন্ন করে ।

[ii] বিশুদ্ধ সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপাদন :-  ওলিয়ামকে স্তম্ভের নীচ থেকে সংগ্রহ করে ওর সঙ্গে পরিমাণ মত জল মিশিয়ে বিশুদ্ধ সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) উৎপন্ন করা হয় ।

*****

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...