মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে কতকগুলি মৌলের অবস্থান

Submitted by arpita pramanik on Wed, 02/13/2013 - 21:13

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে কতকগুলি মৌলের অবস্থান

Position of some elements in Mendeleef 's Periodic table

মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণি ত্রুটি মুক্ত নয় । তবুও এর অবদান অনেক :-

[১]  H2 -এর বিতর্কমূলক স্থান :- মেন্ডেলিফের পর্যায়-সারণিতে H2 -এর স্থান সুনির্দিষ্ট নয় । হাইড্রোজেন একযোজী এবং একদিকে যেমন IA -শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত Li, Na, K....ইত্যাদি ক্ষার ধাতুগুলির মতো ব্যবহার করে, আবার অন্যদিকে VIIB-শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত F, Cl, Br.... ইত্যাদি হ্যালোজেন ধাতুগুলির মতো ব্যবহার করে । তাই একে প্রথম শ্রেণিতে সক্রিয় ক্ষার ধাতুগুলির সঙ্গে এবং সপ্তম শ্রেণিতে হ্যালোজেন মৌলগুলির সঙ্গে স্থান দেওয়া যায় ।

[ক] ক্ষার ধাতুর সঙ্গে সাদৃশ্য :-

(i) ক্ষার ধাতুগুলির মতো H2 একযোজী মৌল,  

(ii) পজিটিভ তড়িৎধর্মী,

(iii) অধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌগ উত্পন্ন করে এবং দ্রবণে H+ আয়ন উত্পন্ন করে,  

(iv) Na2O, K2O... ইত্যাদি ক্ষার ধাতুর মতো হাইড্রোজেনও সুস্থিত অক্সাইড (H2O) গঠন করে,

(v) ক্ষার ধাতুর মতো হাইড্রোজেনও বিজারক পদার্থ । তাই একে প্রথম শ্রেণিতে ক্ষার ধাতুগুলির সঙ্গে বসাতে হয়েছে ।

[খ] হ্যালোজেনের সঙ্গে সাদৃশ্য:-

(i) F, Cl, Br...  ইত্যাদি অণুর মতো হাইড্রোজেন দ্বিপরমাণুক অণু  ।

(ii) F2 ও Cl2 -এর মতো H2 -সাধারণ অবস্থায় গ্যাসীয় পদার্থ এবং অধাতু ।

(iii) ধাতব হ্যালাইডের (NaCl) মতো ধাতুর সঙ্গে হাইড্রাইড (NaH, CaH2... ইত্যাদি) উৎপন্ন করে । হ্যালাইড যেমন আয়নিত হলে অ্যানায়ন উৎপন্ন করে সেরকম হাইড্রাইড যৌগ আয়নিত হয়ে H- অ্যানায়ন উৎপন্ন করে; সুতরাং H -কে সপ্তম শ্রেণিতে হ্যালোজেন গোষ্ঠির সঙ্গে স্থান দেওয়া যেতে পারে । হাইড্রোজেনের এইরূপ দ্বৈত আচরণের জন্য মেন্ডেলিফ এর নাম দেন 'দুষ্ট মৌল' (rogue elements) । বিতর্ক এড়াবার জন্য আধুনিক দীর্ঘ পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনকে পর্যায়-সারণির একেবারে ওপরে সম্পুর্ণ পৃথক একটি স্থানে স্থাপন করা হয়ে থাকে ।

[২] ক্ষার ধাতুরগুলির অবস্থান (Position alkali metals in the periodic table) : Li, Na, K, Rb, Cs এবং Fr এই 6টি মৌলকে ক্ষার ধাতু বলে । এদের মধ্যে Li, Na, K, Rb হল নরম, উজ্জ্বল ধাতব মৌল, Cs বিরল মৃত্তিকা মৌল, Fr তেজস্ক্রিয় ও ক্ষণস্থায়ী । এদের প্রত্যেকের পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষে 1টি যোজ্যতা ইলেকট্রন থাকে । ফলে এদের রাসানিক ধর্মে অনেক মিল দেখা যায় । একই রকম ইলেকট্রন-বিন্যাস এবং রাসায়নিক ধর্মের সদৃশ্য থাকায় ক্ষার ধাতুগুলিকে পর্যায়-সারণির শ্রেণি IA -তে স্থান দেওয়া হয়েছে ।

[৩] হ্যালোজেন মৌলগুলির অবস্থান : (Position of halogens in the periodic table) : F, Cl, Br, I এবং At এই 5টি অধাতুকে হ্যালোজেন মৌল বলে । এদের মধ্যে F ও Cl গ্যাসীয়, Br তরল এবং I ও At কঠিন । এদের প্রত্যেকের পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষে 7টি করে ইলেকট্রন থাকে, ফলে এদের রাসায়নিক ধর্মে অনেক মিল দেখা যায় । এইরকম ইলেকট্রন-বিন্যাসযুক্ত ও রাসায়নিকভাবে সমধর্মী হ্যালোজেন মৌলগুলিকে পর্যায়-সারণির শ্রেণি VIIB -তে স্থান দেওয়া হয়েছে ।

[৪] নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলির অবস্থান : (Position of inert gases in the periodic table) : He, Ne, Ar, Kr, Xe ও Rn এই 6টি মৌলের মধ্যে হিলিয়াম ছাড়া বাকি মৌলগুলির সর্বশেষ কক্ষে 8টি করে ইলেকট্রন থাকে । হিলিয়ামের সর্বশেষ কক্ষে 2টি ইলেকট্রন থাকে । এদের ইলেকট্রন-বিন্যাস খুব স্থায়ী হওয়ায় সাধারণভাবে এরা অন্য কোনো মৌলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না । তাই এই মৌলগুলিকে নিষ্ক্রিয় মৌল (inert elements) বা নোবেল গ্যাস (noble gas) বলে । এরা প্রত্যেকে গ্যাসীয় মৌল এবং এদের অণু এক-পরমাণুক এবং এদের যোজ্যতা শূন্য । বিজ্ঞানী মোজলে একটি পৃথক শ্রেণিতে এদের রাখার ব্যবস্থা করেন এবং এই শ্রেণির নাম দেন শূন্য (0) শ্রেণি ।

*****

Related Items

তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, দুষণ ও সতর্কীকরণ

তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা । প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গনের ফলে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সৃষ্টি হয় তাকে চিকিত্সাবিজ্ঞান, কৃষিকার্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । রোগ নির্ণয় এবং রোগ ...

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন গবেষণার পর তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে নীচের বিষয়গুলি জানা যায় । তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা [nuclear phenomenon] । এর সঙ্গে নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেকট্রনের কোনো সম্পর্ক নেই । যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 83 -এর বেশি হয়, কেবলমাত্র তারাই ...

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহের ধর্মাবলী

মৌলগুলি থেকে নিঃসৃত এই জাতীয় শক্তিশালী রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলা হয় । বিভিন্ন মৌল দ্বারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিঃসরণের এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় । যেসব পদার্থ থেকে এই রশ্মি বিকিরিত হয় সেই পদার্থগুলিকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ...

এক্স-রশ্মি ও সাধারণ আলোক-রশ্মির তুলনা

এক্স-রশ্মি এবং আলোক-রশ্মি উভয়েই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ । শূন্য মাধ্যমে আলোক-রশ্মি এবং এক্স-রশ্মি উভয়ের বেগ (3 x 108 মিটার / সেকেন্ড) । উভয় রশ্মিই সরলরেখায় যায় । বিশেষ ব্যবস্থায় আলোক-রশ্মির মতো এক্স-রশ্মির প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ হয় । উভয় রশ্মিই ফটোগ্রাফিক ...

এক্স-রশ্মির ধর্ম ও এর ব্যবহার

এক্স-রশ্মি এক প্রকার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ হওয়ায় তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা এই রশ্মির গতিপথের কোনো বিচ্যুতি ঘটে না । এক্স-রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম। এই রশ্মি মানুষের চোখে অনুভূতি জন্মায় না । কম তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রশ্মিকে কঠিন এক্স-রশ্মি ...