পলিমেরাইজেশন ও কয়েকটি সাধারণ পলিমার

Submitted by arpita pramanik on Mon, 04/22/2013 - 17:00

বহুলীভবন বা পলিমেরাইজেশন (Polymerisation) :

যে বিক্রিয়ায় বহু সংখ্যক ক্ষুদ্র ও সরল অণুর পারস্পরিক সংযোগের ফলে ভিন্ন ধর্ম ও উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট (20000 - 250000) অতিবৃহৎ-অণু গঠিত হয় সেই বিক্রিয়াকে বহুলীভবন বা পলিমেরাইজেশন বিক্রিয়া বলে । ওই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বৃহৎ-অণুকে (macromolecule) পলিমার (Polymer-বহু অংশ) বলে । পলিমার শব্দটি এসেছে গ্রিক ভাষা থেকে । Poly (গ্রিক Polus) -র মানে 'বহু' এবং mer (গ্রিক-meros) -এর মানে হল 'অংশ' । আবার যে সরল ক্ষুদ্র অণুগুলি দিয়ে বৃহৎ পলিমার গঠিত হয় তাদের মনোমার (monomer-একক অংশ ) বলে ।

প্রকৃতি থেকে কতকগুলি পলিমার পাওয়া যায় । উদ্ভিদ এবং প্রাণী থেকে প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পলিমারগুলি হল— স্টার্চ, প্রোটিন, RNA, DNA, রবার, সিল্ক, পশম, সেলুলোজ ইত্যাদি । কৃত্রিমভাবে উৎপন্ন পলিমার হল— নাইলন, টেফলন, PVC ইত্যাদি ।

যুত পলিমার (Addition Polymer) :- কোনো নির্দিষ্ট শর্তে যখন কোনো পদার্থের অণু বহুলীভবন দ্বারা যুক্ত হয়ে উচ্চ আণবিক ভর সম্পন্ন যৌগ গঠন করে, কিন্তু বিক্রিয়ার আগে ও পরে ভরের কোনো তারতম্য হয় না তাকে যুত পলিমার বিক্রিয়া বলে । 

কয়েকটি সাধারণ পলিমার ও তাদের ব্যবহার (Some common polymers and their uses) :

[1] পলিইথিলিন (Polyethylene)

অল্প অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ইথিলিনকে উচ্চ চাপে 200°C - 300°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে বহু সংখ্যক ইথিলিন অণু সংযুক্ত হয়ে উচ্চ আণবিক গুরুত্ব বিশিষ্ট পলি-ইথিলিন বা পলিথিন (ploythene) উৎপন্ন করে ।

 

পলিইথিলিন -এর মনোমার হল ইথিলিন (H2C = CH2) আর পলিমার হল পলিথিন (-H2C - CH2 -)n । 

ব্যবহার (Uses) : বোতল, জেরিকেন, ড্রাম, ডিটারজেন্ট -এর পাত্র, পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত পাত্র, ফিল্ম এবং ঘরের ছাউনির জন্য সিট, বৈদ্যুতিক তার ও কেবলের অন্তরক, বিভিন্ন ধরনের পাইপ ইত্যাদি তৈরিতে পলিইথিলিন বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয় ।

[2] টেফলন (Teflon) :

টেফলন -এর পলিমার হল পলিটেট্রাফ্লোরোইথিলিন (- F2C - CF2 )n । এর মনোমার হল টেট্রাফ্লোরোইথিলিন (F2C = CF2) ।

ব্যবহার (Uses) :- এই পলিমারটি রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় পরীক্ষাগারে রাসায়নিক পদার্থ রাখার বোতল তৈরিতে এবং রাসায়নিক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি তৈরিতে, রান্নার বাসনপত্রে আস্তরণ দিতে, গ্যাসকেট ভালভ ইত্যাদি প্রস্তুতিতে এবং তড়িতের উত্তম কুপরিবাহী হিসাবে টেফলন ব্যবহৃত হয় ।

[3] পলিভিনাইল ক্লোরাইড (Polyvinyl chloride) বা  পি.ভি.সি (PVC) : এর মনোমার হল ভিনাইল ক্লোরাইড (H2C=CHCl) । এটি গ্যাসীয় পদার্থ, এর স্ফুটনাঙ্ক 14°C । 

ব্যবহার (Uses) :- জল এবং গ্যাস বিতরনের পাইপ প্রস্তুতিতে PVC ব্যবহৃত হয় । ফোনোগ্রাফের রেকর্ড, ধাতব তার এবং কেবল -এর কুপরিবাহী আবরণ তৈরিতে PVC -এর বহুল ব্যবহার হচ্ছে । বর্ষাতি কোট, গামবুট, বৃষ্টির ঝাপটা থেকে আড়াল করতে জানালার পর্দা এবং বাগানে ও মাঠ জল দেওয়ার হোস-পাইপ তৈরি করতে PVC ব্যবহার হয় । দরজা-জানালার ফ্রেম, মেঝের টাইল ইত্যাদিও PVC থেকে তৈরি হচ্ছে ।

*****

Related Items

বিভিন্ন রাশির ব্যবহারিক এবং SI একক

তড়িৎ পরিমাণের ব্যবহারিক এবং SI একক ‘কুলম্ব’ [coulomb] । যে পরিমাণ তড়িৎ সিলভার নাইট্রেট দ্রবণে পাঠালে রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে ক্যাথোডে 0.001118 গ্রাম সিলভার জমা হয়, সেই পরিমাণ তড়িৎকে 1 কুলম্ব [coulomb] ধরা হয় । এর প্রতীক C ।

ওহমের সূত্র (Ohm’s Law)

ওহমের সূত্র থেকে রোধের সংজ্ঞা পাই, কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব-প্রভেদ এবং ওই পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহমাত্রার অনুপাতকে ওই পরিবাহীর রোধ বলে । যেসব পরিবাহী ওহম-সূত্র মেনে চলে তাদের ওহমীয় পরিবাহী বলে । যেমন— তামা, অ্যালুমিনিয়াম, লোহা প্রভৃতি বেশির ...

তড়িচ্চালক বল ও বিভব-প্রভেদ

যে বাহ্যিক কারণ স্থির বস্তুকে গতিশীল করতে পারে বলবিজ্ঞানে তাকে বল বলা হয় । এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তড়িৎ-কোশের তড়িতাধান চালনা করার ক্ষমতাকে বলা হয় তার 'তড়িচ্চালক বল' । যার প্রভাবে বা যে কারণে তড়িৎ-বর্তনীর কোনো অংশে রাসায়নিক কিংবা অন্য কোনো রকম ...

তড়িৎ-বিভব এবং বিভব-প্রভেদ

কোনো তড়িৎগ্রস্থ বস্তুর তড়িৎ-বিভব বলতে ওই বস্তুর এমন এক তড়িৎ-অবস্থা বোঝায়, যার দ্বারা বোঝা যায় ওই বস্তু অন্য কোনো বস্তুকে তড়িৎ দেবে কিংবা অন্য কোনো বস্তু থেকে তড়িৎ নেবে । অসীম দুরত্ব থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎ ক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে ...

তড়িতাধানের প্রবাহ - তড়িৎপ্রবাহ

কোনো পরিবাহী দিয়ে তড়িতাধানের প্রবাহ হলে তাকে তড়িৎপ্রবাহ বলা হয় । কিন্তু আধান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক উভয় প্রকার হতে পারে । সুতরাং, কোন প্রকার আধানের প্রবাহ হলে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি হয় তা বোঝা দরকার । প্রচলিত নিয়ম হল, পরিবাহী দিয়ে ধনাত্মক আধানের প্রবাহ হলে ...