অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের অনুসিদ্ধান্ত

Submitted by arpita pramanik on Sat, 01/12/2013 - 16:45

অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের অনুসিদ্ধান্ত (Statement of deduction from Avogadro's law) :

অ্যাভোগাড্রোর সূত্র থেকে নিম্নলিখিত অনুসিদ্ধান্তগুলি পাওয়া যায়—

(১) নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলি ছাড়া অন্যান্য মৌলিক গ্যাসগুলি (যেমন— হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি) দ্বি-পরমাণুক ।

(২) কোনো গ্যাসের আণবিক ভর (M) গ্যাসটির বাষ্প ঘনত্বের (D) দ্বিগুণ অর্থাৎ, M = 2D ।

(৩) প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতায় এক গ্রাম অণু পরিমাণ সকল গ্যাসের (মৌলিক বা যৌগিক) আয়তন 22.4 লিটার হয় । এই আয়তন পদার্থের প্রকৃতি বা ধর্মের ওপর নির্ভর করে না ।

অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা (Avogadro's Number) : মৌলিক বা যৌগিক যে-কোনো পদার্থের এক গ্রাম অণুর মধ্যে সমান সংখ্যক অণু থাকে । এই সংখ্যাটিকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । এই সংখ্যাকে N দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।

বিজ্ঞানী মিলিকান এই সংখ্যাটির মান নির্ণয় করেন । অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা N = 6.023 x 1023 ;  এটি একটি নিত্য সংখ্যা— এটি চাপ ও উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে না ।

আবার, N.T.P. -তে এক গ্রাম-অণু গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন = 22.4 লিটার । সুতরাং, বলা যায়— প্রমাণ চাপ ও উষ্ণতায় 22.4 লিটার আয়তনের গ্যাসের মধ্যে যত সংখ্যক অণু থাকে সেই সংখ্যাকে অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে ।

আবার এক গ্রাম-পরমাণু পরিমাণ কোনো মৌলের মধ্যে যত সংখ্যক পরমাণু থাকে, সেই সংখ্যাকেও অ্যাভোগাড্রো সংখ্যা বলে । উভয় ক্ষেত্রেই  N = 6.023 x 1023

অ্যাভোগাড্রো-সংখ্যা জানা থাকলে মৌলের গ্রাম-আণবিক ভর থেকে মৌলটির একটি অণুর অথবা একটি পরমাণুর ভর নির্ণয় করা যায়

যেমন, হাইড্রোজেনের আণবিক ভর = 2.016,  হাইড্রোজেনের গ্রাম-আণবিক ভর = 2.016 গ্রাম । এখন 2.016 গ্রাম H2 -এর মধ্যে অণুর সংখ্যা = 6.023 x 1023 গ্রাম ।

অতএব বলা যায় 6.023 x 1023 সংখ্যক হাইড্রোজেন অণুর ভর = 2.016 গ্রাম ।

অতএব 1টি হাইড্রোজেন অণুর ভর = [tex]\frac{{2.016}}{{6.023 \times {{10}^{23}}}} = 3.35 \times {10^{ - 24}}[/tex] গ্রাম ।

এখন 1টি হাইড্রোজেন অণুতে দুটি পরমাণু আছে; সুতরাং, 1টি পরমাণুর ভর = [tex]\frac{{3.35 \times {{10}^{ - 24}}}}{2} = 1.675 \times {10^{ - 24}}[/tex] গ্রাম ।

মৌল— পদার্থের পরিমাণের একক (Unit of amount of substances) :

বর্তমানে রাসায়নিক গণনায় 'মোল' -কে একক হিসাবে ব্যবহার করে গণনার কাজ খুব সহজ ও যুক্তিসংগত হয়েছে । এক মোল অণু, এক মোল পরমাণু বা এক মোল আয়ন বলতে অ্যাভোগাড্রো-সংখ্যা N সংখ্যক; অর্থাৎ, 6.023 x 1023 সংখ্যক অণু, পরমাণু বা আয়নের মোট পরিমাণ বোঝায়, যাকে গ্রামে প্রকাশ করলে অণুর ক্ষেত্রে গ্রাম আণবিক ভর, পরমাণুর ক্ষেত্রে গ্রাম-পারমাণবিক ভর বা আয়নের ক্ষেত্রে গ্রাম আয়নীয় ভরের সমান হয় । 'মোল' ধারণার পরিপেক্ষিতে প্রচলিত 'গ্রাম-অণু', গ্রাম-পরমাণু', 'গ্রাম-আয়ন' এর পরিবর্তে এখন 'মোল-অণু',  'মোল-পরমাণু', 'মোল-আয়ন' ব্যবহার করা হয় । এই কারণে রসায়ন বিজ্ঞানে 'মোল' -এর ব্যবহার খুবই ব্যাপক ।

SI পদ্ধতিতে 'মোল' -এর সংজ্ঞা : 0.012 কেজি কার্বন -12 (C12) -তে যত সংখ্যক কার্বন পরমাণু আছে, কোনো পদার্থের যে পরিমাণ ভরে ঠিক তত সংখ্যক অণু বা পরমাণু বা আয়ন বর্তমান থাকে, সেই পরিমাণ ভরকে 'এক মোল-অণু'; 'এক মোল-পরমাণু' বা 'এক মোল-আয়ন' বলে ।

অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প বা অ্যাভোগাড্রো সূত্র কোনটি বলা যুক্তিসংগত : অ্যাভোগাড্রো প্রকল্পের সত্যতা প্রত্যক্ষভাবে কোনো পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি । সুতরাং, সংজ্ঞানুসারে একে অ্যাভোগাড্রো প্রকল্প বলাই উচিত । কিন্তু এই প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত প্রত্যেকটি অনুসিদ্ধান্ত পরীক্ষালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে । কাজেই অণু সম্বন্ধে অ্যাভোগাড্রোর ধারণাগুলিকে প্রকল্প না বলে সূত্র বলাই সংগত ।

*****

Comments

Related Items

জীবনক্রিয়ায় জৈব যৌগের ভুমিকা

প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহের বেশির ভাগ অংশ জৈব যৌগ দিয়ে গঠিত । তাই জীব জগতে জৈব যৌগের দান অতুলনীয় । জীবন ক্রিয়ার সঙ্গে জৈব যৌগ গভীর ভাবে জড়িত । জীবদেহের জীবনক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য জৈব যৌগের ভূমিকা অপরিসীম । জীবজগতে প্রত্যেক জৈবিক ক্রিয়ার কারণ ...

জৈব যৌগ ও জৈব রসায়ন

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ বলে ...

কয়েকটি বিশিষ্ট ধাতু-সংকর ও তার ব্যবহার

পিতল, কাঁসা, ব্রোঞ্জ, অ্যালুমিনিয়াম-ব্রোঞ্জ, জার্মান সিলভার, ডুরালুমিন, ম্যাগনেলিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল, বাসনপত্র, নল, টেলিস্কোপ, মূর্তি, ব্যারোমিটার, বিভিন্ন যন্ত্রের অংশ, তুলাদন্ড, বিমানের কাঠামো, জলের কল প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় । ...

ধাতু সংকর (Alloy)

দুই বা ততোধিক ধাতু পরস্পর মিশে যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উত্পন্ন করে, সেই কঠিন ধাতব পদার্থকে ধাতু সংকর বা সংকর ধাতু বলে । যেমন - তামা ও টিনের মিশ্রণে উত্পন্ন কাঁসা হল একটি সংকর ধাতু । অনেক ক্ষেত্রে ধাতু-সংকরে অধাতু থাকতে পারে । ...

তামা বা কপার (Copper)

অতি প্রাচীন কাল থেকে তামা বা কপারের ব্যবহার চলে আসছে । কানাডার লেক সুপিরিয়রের কাছে এবং সাইবেরিয়ার পর্বতে মুক্ত অবস্থায় তামা বা কপার পাওয়া যায় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কপারকে বিভিন্ন যৌগরূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় । কপারের প্রধান আকরিকগুলি হল ...