হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের শনাক্তকরণ

Submitted by arpita pramanik on Sun, 02/24/2013 - 23:57

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের (HCl) শনাক্তকরণ :

সিলভার নাইট্রেট দ্রবণের সঙ্গে HCl -এর বিক্রিয়ায় অদ্রাব্য সিলভার ক্লোরাইডের থকথকে সাদা অধঃক্ষেপ পাওয়া যায় । এই অধঃক্ষেপ HNO3 -তে অদ্রাব্য কিন্তু অতিরিক্ত NH4OH -এ দ্রাব্য ।

     AgNO3 + HCl = AgCl ↓ + HNO3  ।

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মধ্যে ক্লোরিন এবং H2 আছে

প্রমাণ :-

[i] একটি টেস্টটিউবে গাঢ় HCl -এর সঙ্গে MnO2 মিশিয়ে উত্তপ্ত করলে ব্লিচিং পাউডারের গন্ধবিশিষ্ট সবুজাভ হলুদ বর্ণের গ্যাস নির্গত হয় । এই গ্যাসের মধ্যে স্টার্চ-পটাশিয়াম আয়োডাইড দ্রবণে সিক্ত ব্লিচিং পেপার ধরলে নীল হয়ে যায় । সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, গ্যাসটি Cl2, এই ক্লোরিন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থেকে আসে ।

    MnO2 + 4HCl = MnCl2 + Cl2 ↑ + 2H2O,   2KI + Cl2 = 2KCl + I2,   স্টার্চ + I2 → নীলবর্ণ ধারণ করে ।

[ii] একটি টেস্টটিউবে সামান্য জল নিয়ে ওর মধ্যে জিঙ্কের ছিবড়া যোগ করলে দেখা যাবে কোনো গ্যাস নির্গত হচ্ছে না । এইবার ওর মধ্যে গাঢ় হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড যোগ করা হল । দেখা যাবে অ্যাসিড যোগ করার সঙ্গে সঙ্গে একটি বর্ণহীন গ্যাস নির্গত হচ্ছে— যা দহনের সহায়ক নয় কিন্তু নিজে নীল শিখায় জ্বলে । এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নির্গত গ্যাসটি হাইড্রোজেন ; এই  হাইড্রোজেন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) থেকে আসে । 

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) সমযোজী যৌগ কিন্তু এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে—  এর কারণ HCl সমযোজী যৌগ হলেও জলে দ্রবীভূত হলে HCl -এর H পরমাণু সমযোজী বন্ধন ছিন্ন করে H2O অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে হাইড্রক্সোনিয়াম (H3O)+ আয়নে পরিণত হয় এবং Cl পরমাণুটি Cl- আয়নে পরিণত হয় । এইভাবে HCl জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয় বলে তড়িৎ পরিবহণ করে ।

    HCl + H2O → (H3O+) + Cl-

Zn -এর সঙ্গে HCl -এর বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন হয় কিন্তু Cu -এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন হয় না—  এর কারণ হল তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণিতে যে ধাতুগুলি হাইড্রোজেনের ওপরে আছে সেই ধাতুগুলিই HCl -এর H পরমাণুকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে, যে ধাতুগুলি H -এর নীচে আছে তারা পারে না । তড়িৎ রাসায়নিক শ্রেণিতে Zn -এর স্থান H -এর উপরে এবং Cu -এর স্থান H -এর নীচে, তাই Zn -এর সঙ্গে HCl -এর বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন হয় কিন্তু Cu -এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় H2 উৎপন্ন হয় না ।

HCl গ্যাস জলে খুব দ্রাব্য এবং জলীয় দ্রবণ অ্যাসিডধর্মী :-

ঝরনা পরীক্ষা :- একটি শুষ্ক গোলতল ফ্লাস্কের মধ্যে শুষ্ক HCl গ্যাস ভর্তি করে ফ্লাস্কের মুখটি কর্ক দিয়ে বন্ধ করা হল । কর্কের মধ্য দিয়ে একটি কাচ নল ফ্লাস্কের ভিতরে প্রবেশ করানো হল । এইবার ফ্লাস্কটিকে উল্টে কাচ নলের খোলা প্রান্তটিকে নীল লিটমাস দ্রবণপূর্ণ একটি পাত্রের মধ্যে ডুবিয়ে, ফ্লাস্কটিকে একটি ক্ল্যাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ডের সঙ্গে আটকে দেওয়া হল । এইবার ফ্লাস্কের মাথায় বরফ চেপে ধরা হল । এর ফলে ঠান্ডায় ভিতরের HCl গ্যাস সংকুচিত হবে, ফলে পাত্রের নীল বর্ণের জল ওপরে উঠে আসবে । এক ফোঁটা জল ফ্লাস্কের মধ্যে ঢুকলেই ফ্লাস্কের মধ্যের সব HCl গ্যাস ওই জলে দ্রবীভূত হয়ে যাবে, ফলে ভিতরে শূন্যতার সৃষ্টি হবে ; তখন নীচের পাত্রের নীল জল ফোয়ারার মত তীব্রবেগে ফ্লাস্কটির মধ্যে ঢুকতে থাকবে এবং ফ্লাস্কের মধ্যে এসে লাল বর্ণে পরিণত হবে । এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, HCl জলে খুব দ্রাব্য এবং এর জলীয় দ্রবণ অ্যাসিড ।

*****

Related Items

জৈব যৌগের গঠনগত সমাবয়বতা

একই আণবিক সংকেত বিশিষ্ট একাধিক যৌগে বিভিন্ন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতির জন্য যে সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়, তাকে কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা বলে । এই দুটি যৌগে উপাদান হিসাবে C, H এবং O -এর ওজনের অনুপাত একই কিন্তু এরা ভিন্ন প্রকৃতির যৌগ । একটি হল অ্যালকোহল ...

জৈব যৌগগুলির প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ

কার্যকরী মূলকের ওপর ভিত্তি করে জৈব যৌগগুলিকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা - হাইড্রোকার্বন, অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কিটোন, কার্বক্সিলিক অ্যাসিড যৌগ । নীচে জৈব যৌগের কয়েকটি শ্রেণি এবং প্রতিটি শ্রেণির প্রথম তিনটি সদস্যের নাম ও গঠন দেওয়া হল ...

জৈব যৌগের কার্যকরী মূলক বা পরিচায়ক শ্রেণি

অসংখ্য জৈব যৌগকে, ওদের রাসায়নিক ধর্মের ওপর ভিত্তি করে কতকগুলি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে । দেখা যায় যে, এই রকম প্রতিটি শ্রেণিতে যৌগগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মূলক বর্তমান থাকে । এই মুলকের উপস্থিতির জন্য ওই শ্রেণির সমস্ত যৌগের রাসায়নিক ধর্ম প্রায় একই রকম হয় ...

জৈব যৌগের বন্ধন প্রকৃতি

কর্বনের পারমাণবিক সংখ্যা 6, কার্বনের ইলেকট্রন বিন্যাস থেকে জানা যায় কার্বনের প্রথম কক্ষে 2টি এবং বাইরের কক্ষে 4টি ইলেকট্রন আছে । কার্বন পরমাণু বাইরের কক্ষের 4টি ইলেকট্রন, অন্য পরমাণুর বাইরের কক্ষের ইলেকট্রনের সঙ্গে চারটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে সমযোজ্যতা দ্বারা জৈব ...

জীবজ অণু (Biomolecules)

সজীব কোশে সংশ্লেষিত ক্ষুদ্র অণু ও বৃহদ অণুকে একত্রে জীবজ অণু বলা হয় । প্রায় সমস্ত জীবজ অণুই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লীয়িক অ্যাসিড, লিপিড এই চারটি শ্রেণির কোনো একটির অন্তর্ভুক্ত । এগুলি কোশের জীবজ পলিমার । কার্বোহাইড্রেট সরল সুগারের ...