দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাফল্যের কারণগুলি কী ?

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 01/24/2022 - 19:58

প্রশ্ন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাফল্যের কারণগুলি কী ?

দীর্ঘকাল ধরে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটেন, ফ্রান্স, পোর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস্‌ প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশগুলি ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়ে আসছিল । কিন্তু নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সাফল্য লাভ করে, যেমন—

(১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন, ফ্রান্স, পোর্তুগাল প্রভৃতি ঔপনিবেশিকতাবাদী দেশগুলির ব্যপক লোকক্ষয়, আর্থিক মন্দা ও সামরিক শক্তি হ্রাস ছিল এশিয়া ও আফ্রিকায় ঔপনিবেশিকতার পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ।

(২) ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলন : রুশ বিপ্লবের সাফল্যের ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন পরাধীন দেশে ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলন ছিল এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিকতার পতনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ ।

(৩) আটলান্টিক চার্টারের প্রভাব : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বাক্ষরিত আটলান্টিক চার্টারে বিভিন্ন উপনিবেশের জনগণকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরাধীন জাতিগুলির ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দাবিকে জোরালো সমর্থন জানাতে থাকে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সেই ‘প্রবল আর্থিক মন্দার যুগে’ মার্কিন সাহায্যের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল ইউরোপীয় দেশগুলি, যেমন— ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশ মার্কিন ইচ্ছার কাছে নতিস্বীকার করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না । এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিকতার পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ।

*****

Comments

Related Items

নির্জোট আন্দোলন (Non-Aligned Movement)

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত কলম্বো সম্মেলনে 'জোটনিরপেক্ষ' কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয় । জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু । যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য ...

দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa)

দক্ষিণ আফ্রিকা দীর্ঘদিন বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ সরকারের শাসনাধীন ছিল । শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ সরকার দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষদের ওপর সীমাহীন শাসন, শোষণ ও অত্যাচার চালাচ্ছিল । শ্বেতাঙ্গ প্রিটোরিয়া শাসনের বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে ...

আফ্রিকার জাতীয় মুক্তি আন্দোলন

আফ্রিকাতে ইংরেজ, ফরাসি, ইটালি, জার্মান, পোর্তুগিজ প্রভৃতি জাতি উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আফ্রিকাতে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে আলোড়নসৃষ্টিকারী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয় । একের পর এক আফ্রিকার পরাধীন জাতিগুলির মধ্যে মুক্তি ...

সিংহল (Srilanka)

ভারতের মতো সিংহল দ্বীপটিও ব্রিটিশদের উপনিবেশ ছিল । পরে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ -এর সদস্য হিসেবে সিংহল প্রথমে ডোমিনিয়ান স্ট্যাটাস বা স্বশাসিত রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে । ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সিংহল স্বাধীনতা আইন পাশ হয় এবং ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ...

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া

সুমাত্রা, জাভা, বোর্ণিও, সিলিবিস, মলাক্কা, বলিদ্বীপ প্রভৃতি প্রায় একশোটি দ্বীপ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গঠিত । ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা । ব্রিটিশ ও পোর্তুগিজদের বিতাড়িত করে ডাচরা এখানে উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল । ওলন্দাজদের ঔপনিবেশিক অত্যাচার, শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ...