উনিশ শতকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের প্রকৃতিতে কী কী পরিবর্তন ঘটে ? এই পরিবর্তনের দুটি কারণ দেখাও । পরিবর্তনের ফলাফল কী হয়ে ছিল ?

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 01/06/2022 - 22:08

প্রশ্ন:- উনিশ শতকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের প্রকৃতিতে কী কী পরিবর্তন ঘটে ? এই পরিবর্তনের দুটি কারণ দেখাও । পরিবর্তনের ফলাফল কী হয়ে ছিল ?

উনিশ শতকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যে নিম্নলিখত পরিবর্তনগুলি আসে—

(১) এই সময়ে ইংল্যান্ডে ভারতীয় শিল্পজাত দ্রব্য বিশষত ভারতীয় বস্ত্রের রপ্তানির পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে, কিন্তু ইংল্যান্ডে উৎপাদিত বিলিতি পণ্যের বিশেষত ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার ও ল্যাঙ্কাশায়ারে মিলে তৈরি বস্ত্রের আমদানি বাড়তে থাকে ।

(২) ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভ এবং ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দেওয়ানি লাভের পরবর্তীকালে বাংলার রাজস্ব দিয়ে ভারত থেকে মাল কিনে ইউরোপে পাঠানো হত, কিন্তু ১৮৩৩ খ্রিটাব্দের পর থেকে ইংল্যান্ডের মাল ভারতে বিক্রি করে তার মুনাফা ইংল্যান্ডে পাঠানো হতে থাকে । এক সময় ব্রিটিশ বণিক কোম্পানির যে জাহাজগুলি ভারতীয় পণ্য নিয়ে ভারত থেকে ইউরোপে যেত, উনিশ শতকে সেই বণিক কোম্পানির জাহাজগুলিই ইংল্যান্ডের উৎপাদিত দ্রব্য নিয়ে বিক্রির জন্য ভারতে আসতে থাকে ।

(৩) এই সময়ে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামালের যেমন— নীল, কাঁচা তুলা, রেশম, চা, কফি প্রভৃতির রপ্তানি বৃদ্ধি পায় ।

উনিশ শতকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রকৃতিতে পরিবর্তনের প্রধান দুটি কারণ ছিল

(১) ব্রিটিশ পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় ভারতীয় পণ্যের পরাজয় : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন দ্বারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটলে ভারতে ইংল্যান্ডের অন্যান্য বণিকদের অবাধ প্রবেশ ঘটে এবং শিল্পবিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত অনেক উন্নতমানের ও সস্তা দামের পণ্যে বিশেষত ম্যাঞ্চেস্টার ও ল্যাঙ্কাশায়ারের মিলে তৈরি সুতি কাপড় ভারতের বাজার ছেয়ে যায় । এই সমস্ত দ্রব্যাদি মানে উন্নত কিন্তু দামে সস্তা পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় ভারতীয় পণ্যের পরাজয় ছিল ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ।

(২) ব্রিটিশ সরকারের বৈষম্যপূর্ণ শুল্কনীতি : উনিশ শতকে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত শিল্পদ্রব্যের সুরক্ষা ও ভারতীয় শিল্পোদ্যোগকে ব্যাহত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বৈষম্যমূলক শুল্কনীতি গ্রহণ করেছিল । উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, ১৭৯৭ সালে ভারতীয় ক্যালিকো বস্ত্রের ওপর যেখানে ১৮ শতাংশ আমদানি শুল্ক ছিল, সেখানে ১৮২৪ সালে তা বেড়ে গিয়ে ৬৭.৫ শতাংশে পরিণত হয় । ব্রিটিশ সরকারের এই অসম শুল্কনীতির ফলে ব্রিটিশ পণ্যের সঙ্গে ভারতীয় পণ্যের পিছু-হটা ছিল ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার দ্বিতীয় কারণ ।

উনিশ শতকে ভারতের বাণিজ্যের প্রকৃতিতে পরিবর্তনের ফল :

(১) ভারতের হস্তশিল্প এবং বিখ্যাত তাঁতশিল্প ধ্বংশ হয়ে যায়;

(২) ইংল্যান্ডের কাপড় কল এবং অন্যান্য শিল্প-কারখানাগুলি ভারতে মাল বিক্রি করে ফুলে-ফেঁপে ওঠে ।

(৩) উনিশ শতকের ভারত শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিকারী দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হয় ।

(৪) এক সময়ের শিল্পপ্রধান ভারত উনিশ শতকে ইংল্যান্ডের নিছক একটি কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছিল ।

*****

Comments

Related Items

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শ