Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 07/25/2021 - 20:22

হিমবাহের কাজ (Works of Glaciers) : পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চলে ও উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে অত্যধিক ঠান্ডা । এইসব অঞ্চলে তুষারক্ষেত্র ও হিমবাহ দেখা যায় । অত্যধিক শীতের জন্য পর্বতের উঁচু চুড়ায় ও মেরু অঞ্চলের বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প সারা বছর তুষারে জমে থাকে । পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের প্রধান কাজ ভূমি ক্ষয় করা [ক্ষয়্সাধান] এবং ক্ষয়ীভূত শিলাচূর্ণ বহন করা [বহন] । পার্বত্য অঞ্চল থেকে নামার পরে হিমবাহের প্রধান কাজ বাহিত শিলা চূর্ণ ও নুড়ি-পাথর জমা করা অর্থাৎ অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় ।

হিমবাহ প্রধানত (ক) ক্ষয়সাধন (Erosion), (খ) বহন বা অপসারণ (Transportation) ও (গ) অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় (Deposition) —এই তিন প্রকারে কাজ করে থাকে ।

(ক) ক্ষয়সাধন (Erosion) : হিমবাহ (i) অবঘর্ষ ক্ষয় (Abrasion) ও (ii) উৎপাটন (Plucking) পদ্ধতিতে ক্ষয়সাধন কাজ করে থাকে । হিমবাহের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখন্ডের ঘর্ষণে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় পর্বতগাত্রে আঁচড় কাটার মতো দাগ পড়ে শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং পর্বতগাত্রের ফাটলে হিমবাহের চাপে পর্বতগাত্র থেকে প্রস্তরখন্ড উৎপার্টিত হয়ে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি করে । হিমবাহের ক্ষয়সাধন কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল —(i) করি (Corrie), (ii) অ্যারেট (Arete), (iii) পিরামিড চূড়া (Pyramidal Peak), (iv) কর্তিত শৈলশিরা (Truncated Spurs), (v) U -আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী (U-shaped Valley or Glacial Trough), (vi) ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley), (vii) রসে মতানে (Roche Moutonnee), (viii) ক্র্যাগ ও টেল (Crag and Tail), (ix) ফিয়র্ড ইত্যাদি । 

(খ) বহন বা অপসারণ (Transportation) : হিমবাহ প্রস্তরখন্ড, বালি, কাদা, নুড়ি ইত্যাদি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করে । ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থসমূহকে হিমবাহ তার দুপাশে, মধ্যভাগে, তলদেশে ও সামনে বহন করে নিয়ে চলে ।

(গ) অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় (Deposition) : হিমবাহ (i) পাদদেশে সঞ্চয় ও (ii) নিম্নভূমিতে সঞ্চয় -এর মাধ্যমে অবক্ষেপণের কাজ করে । অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ হল 'গ্রাবরেখা (Moraine)' । বাহিত পদার্থসমূহকে হিমবাহ তার দু-পাশে, মধ্যভাগে, তলদেশে ও সামনে সঞ্চয় করে নানা রকমের ভূমিরূপ গড়ে তোলে । হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল—(i) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (Lateral Moraine), (ii) মধ্য গ্রাবরেখা (Medial Moraine), (iii) প্রান্ত গ্রাবরেখা (Terminal Moraine), (iv) ভূমি গ্রাবরেখা (Ground Moraine), (v) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা ইত্যাদি ।

*****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।