সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 08/30/2021 - 06:38

সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds) : দিনের বিভিন্ন সময়ে এবং বছরের বিভিন্ন ঋতুতে স্থল ও জলভাগের বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের ফলে সাময়িকভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ু বলে । এই বায়ু কয়েক প্রকারের হয়, যেমন— (১) স্থলবায়ু, (২) সমুদ্র বায়ু, (৩) মৌসুমি বায়ু এবং (৪) উপত্যকা বায়ু ও পার্বত্য বায়ু ।

(১) স্থলবায়ু (Land Breeze) : যে বায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্র, হ্রদ অথবা বিস্তৃত জলভাগের দিকে সাধারণত সন্ধ্যার পর প্রবাহিত হয়, তাকে স্থলবায়ু বলে ।

(i) স্থলভাগ ও জলভাগের প্রকৃতিগত তারতম্যের কারণে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত বা শীতল হয় । সন্ধ্যার পর জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে পড়ে, ফলে সেখানকার বায়ুও শীতল ও ভারী হয়ে থাকে । ফলে সেখানে উচ্চচাপ বিরাজ করে । সমুদ্রের জল দ্রুত তাপ বিকিরণ করতে পারে না ।  সারাদিনের তাপ সঞ্চয় করে সমুদ্রের জল তখনও গরম থাকে, ফলে সমুদ্রের ওপরের বায়ুতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । ফলে স্থলভূমির উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু সমুদ্রের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে । স্থলভাগ থেকে এই বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ুকে স্থলবায়ু বলে ।

(ii) স্থলবায়ু সাধারণত সন্ধ্যার পর থেকে প্রবাহিত হলেও জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ তাপবিকিরণ করে দ্রুত শীতল হওয়ার জন্য মধ্যরাত্রির পর থেকে স্থলভাগের বায়ুতে উচ্চচাপের পরিমাণও ক্রমশ বাড়ে, এই জন্য মধ্যরাত্রি থেকে ভোররাত্রির মধ্যে স্থলবায়ু সবচেয়ে বেশি বেগে প্রবাহিত হয় ।

(২) সমুদ্র বায়ু ( Sea Breeze) : যে বায়ু সাধারণত দিনের বেলায় সমুদ্র, হ্রদ অথবা বিস্তৃত জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্রবায়ু বলে । 

(i) জলভাগ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয় ও ধীরে ধীরে শীতল হয় । কিন্তু স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত হয় ও দ্রুত শীতল হয় । দিনের বেলায় স্থলভাগ জলভাগের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে । গরম স্থলভাগের সংস্পর্শে এসে স্থলভাগ সংলগ্ন বায়ুও গরম এবং হালকা হয়ে ওপরে উঠে যেতে থাকে, ফলে সেখানে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ অপেক্ষাকৃত কম উত্তপ্ত হওয়ায় সেখানকার ঠান্ডা ও উচ্চচাপের বায়ু তখন উত্তপ্ত স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে ।

(ii) সমুদ্রবায়ু সাধারণত দিনের বেলায় প্রবাহিত হয় ।

(iii) সারাদিনের সূর্যতাপ গ্রহণ করে সন্ধ্যার সময় ভূপৃষ্ঠ সেই তাপ বিকিরণ করতে শুরু করে সেজন্য সন্ধ্যাবেলায় স্থলভাগের নিম্নচাপের পরিমাণ আরও বাড়ে । ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রবায়ুর বেগ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে বেশি বেগে সমুদ্রবায়ু প্রবাহিত হতে থাকে ।

(iv) সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে সমুদ্রোপকূল বা বিস্তৃত জলভাগের তীরবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন বা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু দেখা যায় ।

(৩) মৌসুমি বায়ু (Monsoon Winds) : আরবি ভাষায় 'মৌসম' শব্দের অর্থ হল ঋতু । ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মহাদেশ ও সমুদ্রের জলভাগের মধ্যে বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের কারণে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলে । এই বায়ু ঋতুভেদে সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয় । মৌসুমী বায়ু হল প্রকৃতপক্ষে স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ । ভারত সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকার গিনি উপকূল প্রভৃতি অঞ্চলে এই বায়ু প্রবাহিত হয় । গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয় বলে ভারতকে 'মৌসুমি বায়ুর দেশ' বলে ।

(i) উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণের জলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু উত্তরের স্থলভাগের নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় । এই বায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে ।

(ii) শীতকালে উত্তর গোলার্ধের স্থলভাগের উচ্চচাপ থেকে বায়ু দক্ষিণের জলভাগের নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় । একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে ।

(iii) উষ্ণমণ্ডলে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এক বিশাল স্থলভাগের দক্ষিণে এক বিপুল জলভাগের অবস্থান, অথবা বিস্তীর্ণ এক জলভাগের উত্তরে এক বিরাট স্থলভাগের অবস্থান, মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টির প্রধান কারণ ।

(৪) উপত্যকা বায়ু ও পার্বত্যবায়ু (Anabatic winds and Katabatic winds) : পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির বন্ধুরতা ও উষ্ণতার তারতম্যের কারণে এক প্রকারের সাময়িক বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । দিনের বেলা সূর্যের তাপে পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ হয়ে উঠে । তখন এই উষ্ণ বায়ু উপত্যকার ঢাল বরাবর পর্বতের উপরের দিকে প্রবাহিত হয় । এই উষ্ণ ঊর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহকে উপত্যকা বায়ু বলে । আবার রাত্রিকালে পর্বতের ওপরের অংশের বায়ু দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল ও ভারী হয়ে পর্বতের ঢাল বেয়ে উপত্যকার নীচে নেমে আসে । এই শীতল নিম্নগামী বায়ুকে পার্বত্য বায়ু বলে ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।