রাসায়নিক আবহবিকার (Chemical Weathering)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 05/15/2012 - 08:05

রাসায়নিক আবহবিকার (Chemical Weathering)

সংজ্ঞা :- যে আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা গঠনকারী বিভিন্ন খনিজ পদার্থগুলির ওপর বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান সমূহ বিশেষ করে অক্সিজেন (O2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), জলীয় বাষ্প প্রভৃতির বিক্রিয়ার ফলে কঠিন শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজ পদার্থগুলি নতুন গৌণ খনিজে পরিণত হয়ে মূল শিলা শিথিল হয়ে পড়ে, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে । বৃষ্টিবহুল উষ্ণ অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি হয় ।

রাসায়নিক বিয়োজনের পদ্ধতি :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে প্রধানত তিনটি যথা- (ক) অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ,  (খ) জারণ ও (গ) জলযোজন বা আর্দ্রকরণ উল্লেখযোগ্য । এছাড়া রাসায়নিক আবহবিকারের অন্যান্য পদ্ধতি গুলির মধ্যে দ্রবণ এবং আদ্র বিশ্লেষণ উল্লেখযোগ্য ।

(ক) কার্বনিকরণ (Carbonation):- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলির মধ্যে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে প্রাকৃতিক কার্বন ডাই-অক্সাইড(CO2) -এর রাসায়নিক সংযোগের ফলে যে বিক্রিয়া ঘটে তাতে শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজগুলি নতুন খনিজে পরিণত হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ বলে । বৃষ্টির জল বায়ুমন্ডলের মধ্যদিয়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় বায়ুমন্ডলে অবস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) সঙ্গে মিলিত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিডে (H2CO3) পরিণত হয় । এই কার্বনিক অ্যাসিড চুনাপাথরের উপর পতিত হয়ে যে বিক্রিয়া ঘটায় তাতে চুনাপাথরের মধ্যস্থিত ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট Ca(HCO3) -এ পরিণত হয় এবং তা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয় । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে চুনাপাথর এই প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত এবং ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে । যথা-

(১)  [tex]H_2O + CO_2 = H_2OCO_3[/tex]

          জল + কার্বন ডাই-অক্সাইড = কার্বনিক অ্যাসিড

(২)  [tex]H_2CO_3 + CaCO_3 = Ca(HCO_3)_2[/tex]

       কার্বনিক অ্যাসিড + চুনাপাথর = ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট

(খ) জলযোজন বা আদ্রকরণ (Hydration):- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে জলযোজন বা আদ্রকরণ অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থিত কোনো খনিজ পদার্থের সঙ্গে জল যুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার ফলে খনিজ পদার্থটির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়ে খনিজটি বিয়োজিত হয় । এই প্রক্রিয়াকে জলযোজন বা আর্দ্রকরণ বলে । রাসায়নিক বিয়োজনের ফলে শিলাগঠনকারী খনিজগুলো দৃঢ় ভাবে সংবদ্ধ থাকে না এবং সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । যেমন— উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক ‘হেমাটাইট' [tex](2Fe_2O_3)[/tex] পাথরের সঙ্গে জলযুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তার ফলে ‘লিমোনাইট’ [tex](2Fe_2O_33H_2O) [/tex] নামে নিকৃষ্ট লোহার সৃষ্টি হয়, যা অতি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়,

যথা— [tex]2Fe_2O_3 + 3H_2O = 2Fe_2O_33H_2O[/tex]

অর্থাৎ হেমাটাইট + জল = লিমোনাইট

(গ) জারণ (Oxidation):- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে জারণ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন (O2) মিশলে তাকে জারণ বলে । লোহার উপর এবং লোহা-গঠিত খনিজ ও শিলার উপর অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া বেশি । লোহা যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে অবস্থান করে তা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, কিন্তু লোহার সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেন যুক্ত হলে লোহার উপরিভাগে হলুদ বা বাদামি রঙের একটি নতুন যৌগ পদার্থ তৈরি হয় এবং লোহা খুব সহজেই ক্ষয় পায় । সেইজন্য যেসব শিলায় লোহার পরিমাণ বেশি থাকে জারণের ফলে সেইসব শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । জারণের ফলে মূল খনিজ ‘ফেরাস অক্সাইড’ ফেরিক অক্সাইডে [tex]2Fe_2O_33H_2O[/tex] পরিণত হয়ে ‘লিমোনাইট’ -এর সৃষ্টি করে, যা সহজেই ভেঙে যায় । একই কারণে লোহার জিনিসে মরচে ধরলে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়,

যথা— [tex]4FeO + 3H_2O + O_2 = 2Fe_2O_33H_2O[/tex] 

অর্থাৎ লোহা + জল + অক্সিজেন = লিমোনাইট

দ্রবণ বা সলিউশন [Solution] :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে দ্রবণ বা সলিউশন হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । সৈন্ধব লবণ, জিপসাম প্রভৃতি কয়েকটি খনিজ পদার্থ জলের সংস্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে তার নিজস্ব আকার হারিয়ে ফেলে। এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে দ্রবণ বলে । দ্রবণের ক্ষেত্রে, যতবেশি পরিমাণ জল খনিজে প্রবিষ্ট হয়, খনিজ পদার্থটি তত তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয়ে যায়, যথা—

    ১) সৈন্ধব লবণ + জল = সৈন্ধব লবণের দ্রবণ

    ২) জিপসাম + জল = জিপসামের দ্রবণ

রাসায়নিক আবহবিকারের অনুকূল জলবায়ু ও পরিবেশ:- রাসায়নিক আবহবিকার প্রধানত জল ও জলীয় বাষ্পের সাহায্যে হয়ে থাকে । এই কারণে উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু রাসায়নিক আবহবিকারের বিশেষ অনুকূল । সেজন্য নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে ও ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি কার্যকরী হয় ।   

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।