বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 12/29/2021 - 17:37

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

বায়ুমণ্ডলের উপাদান (Composition of the Atmosphere) : আবাহবিজ্ঞানীদের মতে বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকার উপাদানের এক যৌগিক মিশ্রণ । যার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের পরিমাণই সর্বাধিক । বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি পৃথিবীর জীবমণ্ডলকে প্রাণধারণে সহায়তা করে । বায়ুমণ্ডল প্রধানত তিন প্রকার উপাদানে গঠিত । যথা—  (i) গ্যাসীয় উপাদান, (ii) জলীয় বাষ্প  এবং (iii) ধূলিকণা ।

 

(i) গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous element) : বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন গ্যাসের (Nitrogen) পরিমান সব চেয়ে বেশি । এর পরিমান শতকরা ৭৮.০৮ ভাগ । এরপর অক্সিজেন (Oxygen) শতকরা ২০.০৪ ভাগ এবং আর্গন (Argon) শতকরা ০.৯৩ ভাগ অধিকার করে আছে । এই গ্যাসগুলি উত্তাপ গ্রহণ করতে পারে । ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধিতে এরা কোনো ভূমিকা পালন করে না ।  বায়ুমণ্ডলের বাকি ০.৯৫ ভাগের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড (Carbon dioxide) (০.০৩৫%), মিথেন (Methane), ওজোন (Ozone), হাইড্রোজেন (Hydrogen) প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে অতি নগণ্য হলেও আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণে এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এ ছাড়াও বায়ুমন্ডলে নিওন (Neon), হিলিয়াম (Helium), ক্রিপ্টন (Krypton), জেনন (Xenon) প্রভৃতি কতকগুলি নিষ্ক্রিয় গ্যাস রয়েছে ।

(ii) জলীয় বাষ্প (Water Vapor) : জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে জলীয় বাষ্প বলে । সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়, গাছপালা থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশে । বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র শতকরা ০.২৫ ভাগ রয়েছে জলীয় বাষ্প এবং এর শতকরা ৯০ ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ কিমি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমান খুব কম হলেও ঋতুভেদে ও অঞ্চল ভেদে এর পরিমাণের তারতম্য হয় । মেরু প্রদেশ ও উষ্ণ-মরু অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অতি সামান্য হলেও উষ্ণ-আদ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে এর পরিমাণ থাকে প্রায় শতকরা ৪ ভাগ । বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় । এইভাবে জলীয় বাষ্প বায়ুর উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে । বায়ুমন্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই পৃথিবীতে মেঘ, বৃষ্টি, তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

(iii) ধূলিকণা (Dust Particles) : বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতো অজস্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা বাতাসে ভেসে বেড়ায় । কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই, গাড়ির ধোঁয়ার অজৈব কণা, অগ্নুৎপাত ও দাবানলের ছাই, উল্কাপাতের ছাই, মরু অঞ্চল ও সমুদ্রতীরের ধুলোবালি, লবণকণা প্রভৃতি সুক্ষ্ম ধূলিকণারূপে বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকে । ধূলিকণা সূর্যের তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে । জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই বাতাসে ভাসে বেড়ায় ও মেঘের সৃষ্টি করে ।

অ্যারোসল:- বায়ুমণ্ডলে ভাসমান বিভিন্ন প্রকার কঠিন কণাকে অ্যারোসল বলে । ধূলিকণা, লবনকণা, উল্কার ছাই, অগ্ন্যুদগমের ছাই প্রভৃতি অ্যা্রোসলের প্রধান উৎস ।

******

Comments

Related Items

দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চল

দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চল : এশিয়ার মধ্যভাগের বিশাল পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে এবং এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ অংশের তিনটি উপদ্বীপে তিনটি ক্ষয়প্রাপ্ত ও অতি প্রাচীন নীচু মালভূমি অবস্থান করছে — (১) আরব মালভূমি, (২) দাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং (৩) ইন্দোচীন মালভূমি । এই তি

মধ্যভাগের বিশাল পার্বত্য অঞ্চল

মধ্যভাগের বিশাল পার্বত্য অঞ্চল : এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম, বৃহত্তম ও উচ্চ পার্বত্যভূমি । পশ্চিমদিকে ভূমধ্যসাগরের তীর থেকে পূর্বদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এই পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সুউচ্চ পর্বতশ্রেণি বিভিন্ন দিকে প

উত্তরের বিস্তীর্ণ নিম্নসমভূমি অঞ্চল

উত্তরের বিস্তীর্ণ নিম্ন সমভূমি অঞ্চল : এই বিস্তীর্ণ নিম্ন সমভূমি অঞ্চলকে দুটি প্রধান ভুপ্রাকৃতিক উপবিভাগে ভাগ করা যায়— (ক) সাইবেরিয়ার নিম্ন সমভূমি এবং (খ) তুরাণের নিম্ন সমভূমি ।

ভারতের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প

পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প : যে শিল্প অশোধিত খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়ামের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য থেকে প্লাস্টিক, পলিথিন, কৃত্রিম সুতো, কৃত্রিম রবার, রং প্রভৃতি নানা ধরনের জিনিস উৎপাদন করা হয় তাকে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প বলে ।

ভারতের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প

ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে বিদ্যুৎ, কৃষি ও শিল্পে ব্যবহৃত ছোট-বড়ো ও হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে পরিবহণের যানবাহনসহ সমস্ত শিল্পকে বোঝায় । বিভিন্ন ধরনের সূক্ষ্ম ও ভারী যন্ত্রপাতি, রেল ইঞ্জিন ও ওয়াগন, জাহাজ, মোটরগাড়ি, মোটর সাইকেল ও স্কুটার, সাইকেল, ঘড়ি,