বায়ুমণ্ডল কী ? গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 12/29/2021 - 09:02

প্রশ্ন :- বায়ুমণ্ডল কী ? গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস কর ।

বায়ুমণ্ডল: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ হাজার কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত যে অদৃশ্য বায়বীয় পদার্থের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, সেই গ্যাসীয় পদার্থের আবরণ কে বায়ুমণ্ডল বলে । সৌরজগতে পৃথিবী হল একমাত্র গ্রহ, যা অদৃশ্য বায়ুর আবরণ দ্বারা বেষ্টিত । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি । গাছের পাতা যখন নড়ে, যখন ঝড় হয়, তখন বায়ুকে অনুভব করা যায় । বর্ণ বা গন্ধ না থাকলেও বায়ুর ওজন, আয়তন ও প্রবাহ আছে । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তিত হয় ।

(i) বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, যেমন: নাইট্রোজেন (৭৮.১%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং ওজোন, কার্বন ডাই-অক্সাইড (০.০০৩%) প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যসের মিশ্রণ, (ii) জলীয় বাষ্প এবং (iii) নানা রকম সূক্ষ্ম জৈব ও অজৈব কণিকা , যেমন -ধুলো, ধোঁয়া, বালি প্রভৃতি নিয়ে বায়ুমণ্ডল গঠিত ।

আবহবিদ হিডোর ও অলিভার -এর মতে বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বসীমা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে । আবহবিজ্ঞানী স্ট্রলার -এর মতে বায়ুমণ্ডলের ৯৭% ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০ কিমি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে । এছাড়া ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে ।

গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস : গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দুই ভগে ভাগ করা যায়, যথা— (১) হোমোস্ফিয়ার এবং  (২) হেটেরোস্ফিয়ার ।

(১) হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) :- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসয়নিক গঠন, বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার বলা হয় । হোমোস্ফিয়ার প্রধানত বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, যেমন— নাইট্রোজেন (৭৮.১%), অক্সিজেন (২০.৯%), কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ দ্বারা গঠিত । এছাড়া জলীয় বাষ্প, ধুলিকণা এবং জৈব ও অজৈব কণিকা যেমন— অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত । এই স্তরটি আবার (i) ট্রপোস্ফিয়ার, (ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, (iii) মেসোস্ফিয়ার ও (iv) নিম্ন থার্মোস্ফিয়ার —এই চার ভাগে বিভক্ত ।  

(২) হেটেরোস্ফিয়ার : বায়ূমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয় ।

স্তরবিন্যাস: হেটেরোস্ফিয়ারের বায়ুমণ্ডল মোটামুটী চারটি স্তরে বিভক্ত, যথাঃ (i) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (৮০-২০০ কিমি), (ii) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (২০০-১,১০০ কিমি), (iii) হিলিয়াম স্তর (১,১০০-৩,৫০০ কিমি) এবং (iv) হাইড্রোজেন স্তর (৩,৫০০-১০,০০০ কিমি) ।

*****

Comments

Related Items

ক্র্যাগ ও টেল (Crag & Tail)

ক্র্যাগ টেল (Crag & Tail) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্র্যাগ টেল হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের গতিপথে কঠিন শিলাস্তরের পিছনে নরম শিলাস্তর থাকলে, অনেক স

রসে মতানে (Roche Moutonnee)

রসে মতানে (Roche Moutonnee) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, রসে মতানে হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অনেক সময় উপত্যকার মধ্যে উঁচু ঢিবির মতো কঠিন শিলাখন্ডের ওপর দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় । অবঘর্ষ প্রক

ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley)

ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley) : উপত্যকা হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ঝুলন্ত উপত্যকা (Hanging Valley) হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । নদী অববাহিকায় উপনদীগুলি যেমন মূল নদীতে এসে মিলিত হয় তেমনি পার্বত্য অঞ্চলে ছোটো ছোটো

U -আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি (U -Shaped Valley or Glacial Trough)

U - আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি (U -Shaped Valley or Glacial Trough) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, U -আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ

কর্তিত স্পার (Truncated Spur)

কর্তিত স্পার (Truncated Spur) : পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে যখন হিমবাহ নীচের দিকে অগ্রসর হয়, সে সময় এই হিমবাহের গতিপথে যেসব স্পার (Spur) বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশ হিমবাহের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে, হিমবাহ সেগুলিকে কেটে বা ক্ষয় করে সোজা পথে