Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 09/04/2021 - 17:29

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity) : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে বা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে আর্দ্র বায়ু এবং কম থাকলে তাকে শুষ্ক বায়ু বলে । বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা প্রধানত বায়ুর উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে । বায়ুর আর্দ্রতাকে সাধারণত তিনভাবে প্রকাশ করা হয় । যথা— (১) চরম আর্দ্রতা,  (২) বিশেষ আর্দ্রতা এবং (৩) আপেক্ষিক আর্দ্রতা ।

(১) চরম আর্দ্রতা (Absolute Humidity) : নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তার প্রকৃত পরিমাণকে চরম আর্দ্রতা বা নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বলে । চরম আর্দ্রতার একক হল গ্রাম / ঘন সেমি. ।

(২) বিশেষ আর্দ্রতা (Specific Humidity) : কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু সর্বোচ্চ যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে, তাকে বিশেষ আর্দ্রতা বলে । বিশেষ আর্দ্রতায় বায়ুর ভর বা ওজনকে বায়ুর সম্পৃক্ত বিশেষ আর্দ্রতা বলে ।

(৩) আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative Humidity) : কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও বায়ুরচাপে নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং একই অবস্থায় সম আয়তন বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতার অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে । আপেক্ষিক আর্দ্রতা শতকরা হারে প্রকাশ করা হয় ।

আপেক্ষিক আর্দ্রতা = {(নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ও চাপে নির্দিষ্ট আয়তন বায়ুর প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ) ÷  (একই অবস্থায় সম আয়তন বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা)} x ১০০

আপেক্ষিক আর্দ্রতা বায়ুর সম্পৃক্ততার মাত্রাকে নির্দেশ করে । বায়ু সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত হলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা হয় ১০০% । বর্ষাকালে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে বলে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৯০% -এর বেশি হয় ।

সম্পৃক্ত বায়ু : বায়ুর উষ্ণতা বাড়লে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণতা কমলে তা হ্রাস পায় । নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে । যখন কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতার বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছোয়, তখন সেই বায়ুকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে ।

শিশিরাঙ্ক : যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় আর্দ্র বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়, তাকে শিশিরাঙ্ক বলে । প্রকৃতপক্ষে, বায়ুর উষ্ণতা কমতে কমতে একটি নির্দিষ্ট মানে পৌঁছলে সেই বায়ু সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত হয় । এই অবস্থায় বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প জমাট বেঁধে শিশিরে পরিণত হয় ।

বায়ুর আর্দ্রতার পরিমাপ (Measurement of Humidity) : শুষ্ক ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটার (Dry and wet bulb thermometer) বা হাইগ্রোমিটার (Hygrometer) যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় । বায়ুর আর্দ্রতা পরিমাপের একক হল % ।

*****

Comments

Related Items

আকস্মিক বায়ু (Sudden or Irregular wind)

আকস্মিক বায়ু (Sudden or Irregular wind)  চাপের সমতা রাখার জন্য বায়ুপ্রবাহ উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয় । বায়ুচাপের তারতম্য হল বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । বায়ুর চাপ আবার নির্ভর করে উষ্ণতর উপর । কোনো স্থানের বায়ু উত্তপ্ত হলে সেখানে বায়

স্থানীয় বায়ু (Local Wind)

স্থানীয় বায়ু (Local Wind) : ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে বাযুর তাপ ও চাপের পার্থক্যের কারণে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে যে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়, তাদের স্থানীয় বায়ু বলে । স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ দুই প্রকারের হয়ে থাকে, যথা— (১) উষ্ণ স্থানীয় বায়

নিয়ত বায়ু (Planetary Winds)

নিয়ত বায়ু (Planetary Winds) : ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ । যেখানে বায়ুচাপ বেশি, সেখান থেকে যেদিকে বায়ুচাপ কম, সেদিকেই বায়ু প্রবাহিত হয় । এই নিয়ম মেনে পৃথিবীর চারটি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থেকে তিনটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সা

বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ (Types of Winds)

বায়ুপ্রবাহের প্রকারভেদ (Types of Winds) : উৎপত্তি ও প্রকৃতি অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহকে প্রধানত চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় । যথা— (ক) নিয়ত বায়ু (Planetary Winds), (খ) সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds), (গ) স্থানী

বায়ুপ্রবাহ ও বায়ু প্রবাহ সৃষ্টির কারণ (Winds and cause of winds)

বায়ুপ্রবাহ (Winds) : বায়ু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত হয় । উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর নিয়মিত চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে । নিম্নচাপের গভীরতা যত বৃদ্ধি পায়, বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ তত বাড়তে থাকে । বায়ু যেমন ভূমির সমান্তরালে