বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 08/05/2021 - 19:58

বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি (The Processes involving in Air Temperature) : সূর্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস । সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের মাধ্যমে বা ইনসোলেশনের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । এই পদ্ধতিগুলি হল— (i) বিকিরণ পদ্ধতি (Radiation), (ii) পরিবহন পদ্ধতি (Conduction), (iii) পরিচলন পদ্ধতি, (iv) অ্যাডভেকশন (Advection) এবং (v) তাপ শোষণ (Heat Absorbtion) ।

(i) বিকিরণ পদ্ধতি (Radiation) : যে পদ্ধতিতে কোনো মাধ্যম ছাড়াই বা মাধ্যম থাকলেও তাকে উত্তপ্ত না করে তাপ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে চলে যায়, সেই পদ্ধতিকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে । বায়ুমণ্ডল সূর্যকিরণের দ্বারা সরাসরিভাবে উত্তপ্ত হয় না । সুর্য থেকে আলোর তরঙ্গ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে । সূর্য থেকে আগত বিকিরিত তাপশক্তি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়লেও বায়ুমণ্ডলকে প্রথমে উত্তপ্ত না করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে । ভূপৃষ্ঠ সেই তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আলোক চৌম্বকীয় তরঙ্গরূপে সেই তাপের বিকিরণ শুরু হয় ও ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ।

(ii) পরিবহন পদ্ধতি (Conduction) : যে পদ্ধতিতে কোনো পদার্থের উষ্ণতর অংশ থেকে শীতলতর অংশে তাপ সঞ্চালিত হয় কিন্তু পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন করে না, সেই পদ্ধতিকে পরিবহন পদ্ধতি বলে । সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আগত তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে । ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লেগে থাকার ফলে পরিবহন পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় । ক্রমে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন উত্তপ্ত বায়ুস্তর থেকে উত্তাপ ওপরের অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ুস্তরে পরিবাহিত হয় । এইভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় ।

(iii) পরিচলন পদ্ধতি (Convection) : ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুস্তর অধিক উত্তপ্ত হওয়ার ফলে বায়ু প্রসারিত ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় । তখন সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য ওপরের অপেক্ষাকৃত শীতল বায়ু নীচে নেমে আসে । তারপর ওই বায়ুও আবার ক্রমে উষ্ণ ও হালকা হয়ে পুনরায় ওপরে উঠে যায় । এইভাবে নীচ থেকে উপরে ও উপর থেকে নীচে বায়ু চলাচলের ফলে উলম্বভাবে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় । বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার এই পদ্ধতিকে পরিচালন প্রক্রিয়া বলে ।

(iv) অ্যাডভেকশন (Advection) : এক জায়গার উত্তাপ বায়ুর মাধ্যমে যখন ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে অনুভূমিকভাবে বা সমান্তরালে অন্য জায়গায় চলে যায়, তাকে অ্যাডভেকশন বলে । অ্যাডভেকশন পদ্ধতিতে অনেক সময় শীতল বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে উষ্ণ বায়ুর দিকে প্রবাহিত হয়ে তাপ সঞ্চালনের মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । যেমন — নিম্ন অক্ষাংশের বেশি উষ্ণতা বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে উচ্চ অক্ষাংশের বায়ুমণ্ডলে স্থানান্তরিত হয় ।

(v) তাপ শোষণ (Heat Absorbtion) : সূর্যরশ্মি যখন যখন বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে আসে তখন তার কিছু অংশ বায়ুমণ্ডলে অবস্থানকারী কার্বন ডাইঅক্সাইড সহ অন্যান্য গ্যাস, জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা প্রভৃতি আগত সূর্যরশ্মি থেকে তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে সামান্য উত্তপ্ত করে তোলে ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।