বায়ুপ্রবাহ ও বায়ু প্রবাহ সৃষ্টির কারণ (Winds and cause of winds)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 08/28/2021 - 09:45

বায়ুপ্রবাহ (Winds) : বায়ু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় প্রবাহিত হয় । উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ুর নিয়মিত চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে । নিম্নচাপের গভীরতা যত বৃদ্ধি পায়, বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ তত বাড়তে থাকে । বায়ু যেমন ভূমির সমান্তরালে প্রবাহিত হয় তেমনি উপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে উপরে চলাচল করে । যে বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিক ভাবে [Horizontally] চলাচল করে তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে । আর যে বায়ু উপর থেকে নীচে এবং নীচ থেকে উপরে অর্থাৎ উলম্বভাবে [Vertically] ওঠানামা করে তাকে সাধারণভাবে বায়ুর স্রোত [Air Current] বলা হয় । এর প্রবাহ ভূপৃষ্ঠে সহজে অনুভূত হয় না ।

বায়ু প্রবাহ সৃষ্টির কারণ (Cause of winds) :- বায়ু নানা কারণে প্রবাহিত হয়ে থাকে । যেমন —

(i) বায়ুচাপের পার্থক্য : বায়ুচাপের তারতম্যের কারণে মূলত বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের সমতা বিধানের জন্য বায়ু উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।

(ii) উষ্ণতার পার্থক্য : কোনো স্থানের বায়ু অধিক উত্তপ্ত হলে তা হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় । তখন এই শূন্যস্থান পূরণের জন্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বায়ু সেখানে ছুটে যায় । ফলে বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি হয় ।

(iii) জলীয় বাষ্পের পরিমাণ : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বায়ুর চাপ কম হয় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় । তখন পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ছুটে এসে বায়ু প্রবাহের সৃষ্টি করে ।

(iv) পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে কোরিওলিস বলের সৃষ্টি হয় । এর প্রভাবে বায়ু ছিটকে গিয়ে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি করে ।

কোরিওলিস বল : পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীতে একটি কেন্দ্রাতিগ বা কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তি সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে পৃথিবীর সব প্রবহমান পদার্থের দিক বিক্ষেপ ঘটে । ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি গণিতবিদ গাসপার্ড গুস্তাভ কোরিওলিস পৃথিবীর আবর্তনঘটিত এই শক্তি বা বলের তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন বলে একে কোরিওলিস বল নামে অভিহিত করা হয় ।

ফেরেলের সূত্র (Ferrel's Law) : অভিগত গোলাকৃতির পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে আবর্তন করছে, কিন্তু পৃথিবীর আবর্তন বেগ সর্বত্র সমান নয় । নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কম । আমেরিকান আবহবিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল -এর মতে পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে যে কোরিওলিস বলের উৎপত্তি হয়, তার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপর প্রবাহিত বায়ু উত্তর গোলার্ধে কিছুটা ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কিছুটা বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় । বায়ুপ্রবাহের দিক বিক্ষেপের এই সূত্রটি ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত ।

ফেরেলের সূত্র অনুসারে:-

১) পৃথিবী স্থির থাকলে উত্তর গোলার্ধে যে আয়নবায়ু সরাসরি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হত, পৃথিবী আবর্তন করে বলে তা উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে উত্তর-পুর্ব আয়নবায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় । একই ভাবে,

২) পৃথিবী স্থির থাকলে যে বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে সোজাসুজি প্রবাহিত হত, তা পৃথিবীর আবর্তনের জন্য খানিকটা বাঁদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যা দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নামে পরিচিত । দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার পর উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয় ।

*****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।