বহির্জাত প্রক্রিয়া ও এর দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ (Exogenetic Processes and resultant Landforms)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 06/19/2021 - 08:41

বহির্জাত শক্তি (Exogenetic forces) :- যেসব প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ, যেমন— নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি প্রতিনিয়ত ভূপৃষ্ঠ ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উপপৃষ্ঠীয় অংশে ক্রিয়াশীল থেকে ভূপৃষ্ঠ ও উপপৃষ্ঠীয় অংশের পরিবর্তন ঘটিয়ে ভূমিরূপ গঠন করে আসছে, তাদেরকে বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তি বলে ।

ভূমিরূপ (Landforms) : ভূপৃষ্ঠের গঠন, আকৃতি, ঢাল প্রভৃতি অনুসারে ভূমির চেহারা বা বাহ্যিক অবয়বকে ভূমিরূপ বলা হয় ।

বহির্জাত প্রক্রিয়া (Exogenetic Processes) :- বহির্জাত প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ যে প্রক্রিয়ায় বা পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠ ও উপপৃষ্ঠকে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কাজের মাধ্যমে নগ্ন বা পরিবর্তন ঘটিয়ে ভূমিরূপ গঠন করে, তাকে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে ।

বহির্জাত প্রক্রিয়ার মাধ্যম (Agents of Exogenetic Processes) : বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহ (ক) স্থিতিশীল ও (খ) গতিশীল বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কার্যকর হয় ।

(ক) স্থিতিশীল বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ হল বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর চাপ, বায়ুর আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি ।

(খ) গতিশীল বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ হল আবহবিকার, নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, ভৌমজল প্রভৃতি ।

ভূমিরূপ গঠনে বহির্জাত প্রক্রিয়ার ভূমিকা :- বহির্জাত প্রক্রিয়াগুলি প্রধানত (ক) অবরোহণ, (খ) আরোহণ ও (গ) জৈবিক প্রক্রিয়া—এই তিনটি পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গড়ে তোলে ।

exogenetic force

(ক) অবরোহণ (Degradation):- যে সকল প্রক্রিয়ায় বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তিসমূহ দ্বারা, যেমন— আবহবিকার, পুঞ্জিতক্ষয়, নদনদী, হিমবাহ, বায়ু প্রভৃতি ক্ষয়কাজের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ধীরে ধীরে নিচু ভূমিতে পরিণত হয়, সেই প্রক্রিয়াসমূহকে অবরোহণ বলে । এই প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতার হ্রাস ঘটে । ক্ষয়সাধন ও নগ্নীভবন অবরোহণ প্রক্রিয়ার প্রধান মাধ্যম । অবরোহণের ফলেই সুউচ্চ পর্বত ক্ষয় হতে হতে প্রথমে ক্ষয়্জাত পর্বত ও তারপর ক্ষয়্জাত মালভূমি এবং শেষে ক্ষয়্জাত সমভূমিতে পরিণত হয় । এই প্রক্রিয়ায় জলপ্রপাত, মন্থকূপ, রসে মতানে, ইনসেলবার্জ প্রভৃতি ভূমিরূপ গড়ে ওঠে ।

(খ) আরোহণ (Agradation):- যে সকল প্রক্রিয়ায় বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের, যেমন নদনদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির দ্বারা সঞ্চয়, অবক্ষেপণ ও অধঃক্ষেপণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের নিম্নভূমিতে পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে নতুন ভূমি গড়ে ওঠে, সেই প্রক্রিয়াসমূহকে আরোহণ বলে । সঞ্চয়সাধন আরোহণ প্রক্রিয়ার প্রধান মাধ্যম । এই প্রক্রিয়ায় নিম্নভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং প্লাবনভূমি, বদ্বীপ, ড্রামলিন, বালিয়াড়ি প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ।

(গ) জৈবিক প্রক্রিয়া (Biotic Process):- যে সকল প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ আবহবিকার, ক্ষয় ও সঞ্চয়কাজের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন ঘটিয়ে সমতল ভূমিরূপ গঠন করে, সেই প্রক্রিয়াগুলিকে জৈবিক প্রক্রিয়া বলে । এই প্রক্রিয়া ভূমিরূপের উচ্চতার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রচেষ্টা চালায় ।

পর্যায়ন (Gradational Process) : বহির্জাত প্রক্রিয়ায় ক্ষয় ও সঞ্চয়কাজের দ্বারা ভূমিভাগের উচ্চতার মধ্যে সমতা বিধানের মাধ্যমে নিকটতম সমুদ্রপৃষ্ঠের সাপেক্ষে যে সাধারণতল গঠিত হয়, তাকে পর্যায়ন বলে । এখানে ক্ষয়কাজের শেষ সীমা হল নিকটতম সমুদ্রপৃষ্ঠ । পর্যায়ন হল অবরোহণ ও আরোহণ প্রক্রিয়ায় ভূমিভাগের সমতলীকরণ । ভূবিজ্ঞানী জি. কে. গিলবার্ট 'পর্যায়ন' বা Grade শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ।

নগ্নীভবন (Denundation) : ল্যাটিন শব্দ 'Denudare' (যার অর্থ অনাবৃত থাকা) থেকে 'নগ্নীভবন' শব্দটির উৎপত্তি । বহির্জাত অবরোহণ প্রক্রিয়ায় আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন —এই তিনটি পদ্ধতির যৌথ ক্রিয়াশীলতায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে অপসারিত হয়ে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায় এবং নীচের শিলাস্তর ভূ-পৃষ্ঠে উন্মুক্ত হয় । এই অবরোহণ প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে । নগ্নীভবনের হার উষ্ণ মরু অঞ্চলের নিম্নভূমিতে সবচেয়ে কম এবং উষ্ণ-আর্দ্র ও শীতল হিমবাহ অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি হয় ।

****

Comments

Related Items

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Emvironment of India)

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Environment of India) : ভারত একটি সুবিশাল দেশ ও এর ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় । উত্তর ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পামীর গ্রন্থি থেকে বের হওয়া হিন্দুকুশ, সুলেমান, খিরথর কারাকোরাম, হিমালয় প্রভৃতি কয়েক

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহ

ভারতের বর্তমান রাজ্য সমূহ (২০২১ সাল পর্যন্ত ) :

১. অন্ধ্রপ্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ১,৬০,২০৫ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল অমরাবতী ।

২. অরুণাচল প্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল ইটানগর ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এব

ভারতের ভৌগলিক অবস্থান

অবস্থান (Location) : ভারত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ । নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষি

ভারত (India)

ভারত :- প্রাচীন পারসিক লিপিতে 'সপ্ত সিন্ধু' কে বলা হয়েছে হপ্ত হিন্দু । সিন্ধু তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বিদেশীরা হিন্দু বলত এবং তার থেকেই হিন্দুস্থান কথাটি এসেছে । প্রাচীন পারসি শব্দ হিন্দুস (Hindus) থেকে উৎপন্ন ইণ্ডাস (Indus) থেকে ইণ্ডিয়া (INDIA) নামট