বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of waste management) : বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ, বর্জ্যের পরিবহন, আবর্জনার বিলিব্যবস্থা, নর্দমার জল ও অন্যান্য বর্জ্যের নিকাশ প্রভৃতি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক । বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (১) বর্জ্য পৃথকীকরণ, (২) ভরাট করণ, (৩) কম্পোস্টিং বা মিশ্রসারে পরিণতকরণ, (৪) নিষ্কাশন ও (৫) স্ক্রাবার ।
(১) বর্জ্য পৃথকীকরণ (Segregation of waste) : এই প্রক্রিয়ায় পচনশীল, অপচনশীল ও দূষিত বর্জ্যকে পৃথক করা হয় । বর্জ্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যকে পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়ায় মিশ্রসারে পরিণত করে কৃষিকাজে হিউমাস হিসাবে ব্যবহার করা যায় । আবার, জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যকে সুষ্ঠু বিলিব্যবস্থা ও পুনর্নবীকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । বর্তমানে কেরালায় প্লাস্টিকের দ্রব্য থেকে অশোধিত তেল উৎপাদন করা হচ্ছে ।
(২) ভরাট করণ (Land filling) : এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশাল গর্তে গৃহস্থালি ও পৌরসভার বর্জ্য আবর্জনাকে ফেলে তার ওপর মাটি চাপা দেওয়া হয় । এই বর্জ্য আবর্জনার পচনে হিউমাস তৈরি হয় এবং পরে তা কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় । তবে এই ব্যবস্থায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হয় । তবে মাটির মধ্যে ঢাকা দেওয়া থাকে বলে বর্জ্য থেকে কোনো রোগজীবাণু বায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে না । একই জায়গায় বর্জ্যগুলি জমে থাকার ফলে বৃষ্টি হলে তা থেকে নোংরা দূষিত জল চুইয়ে চুইয়ে আশেপাশের জলাশয়ের ভূগর্ভস্থ জলস্থরে মিশ্ব পানীয় জলের দূষণ ঘটাতে পারে । বর্জ্য ধোয়া ওই দূষিত জলকে লিচেট বলে ।
(৩) কম্পোস্টিং বা মিশ্রসারে পরিণতকরণ (Composting) : প্রাকৃতিকভাবে জৈব বর্জ্যের বিয়োজনের প্রক্রিয়াকে কম্পোস্টিং বলে । এই পদ্ধতিতে কৃষিজ বর্জ্য, অন্যান্য জৈব বর্জ্য এমনকি বিপদজনক জৈব বর্জ্যপদার্থকে গর্তে ফেলে পচিয়ে মিশ্র সার তৈরি করা হয় এবং পরে তা কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় । এভাবে উৎপন্ন জৈব সারে উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, ফসফেট প্রভৃতি পুষ্টিকর উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে থাকে । ভারতে প্রধানত দুটি পদ্ধতিতে কম্পোস্টিং হয় — (ক) ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং ও (খ) যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং ।
(ক) ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং : প্রথমে মাটিতে পরিখা বা ট্রেঞ্চের মত একটি অগভীর লম্বা গর্ত করা হয় এবং তার মধ্যে নানা ধরনের জৈব বর্জ্য ফেলে তার ওপরে পয়ঃপ্রণালী ও গবাদি পশুর মলমূত্রের একটি স্তর তৈরি করা হয় । এর ওপর মাটি চাপা দিয়ে ১৫-২০ দিন রেখে দিলে নীচের জৈব পদার্থ অবাত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয় । একে ব্যাঙ্গালোর পদ্ধতি বা অবাত কম্পোস্টিং বলি ।
(খ) যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং : প্রথমে বর্জ্য পদার্থ থেকে ধাতুখণ্ড, কাচ প্রভৃতি আলাদা করা হয় এবং তার পর অবশিষ্ট জৈব বর্জ্য পদার্থকে যন্ত্রের সাহায্যে চূর্ণবিচূর্ণ করা হয় । এরপর ওগুলির সঙ্গে মলমূত্র মেশানো হয় এবং শেষে ঘূর্ণায়মান যন্ত্রে রেখে সবাত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা বিয়োজন ঘটানো হয় । এইভাবে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বর্জ্য বিয়োজিত হয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হয় । এটি যান্ত্রিক পদ্ধতি বা সবাত কম্পোস্টিং নামে পরিচিত।
(৪) নিষ্কাশন (Drainage Method) : এই পদ্ধতিতে নর্দমার ময়লা জল ও অন্যান্য তরল বর্জ্যকে নিকাশি নালা, সেপটিক ট্যাংক ও পয়ঃপ্রণালীর মাধ্যমে নিষ্কাশন করা হয় । ভারতের বেশিরভাগ শহরে নিকাশি নালাগুলি নদীর সঙ্গে যুক্ত । তাই এর ক্ষতিকর দিক হল নদীর জলের দূষণ ।
(৫) স্ক্রাবার (Scrubber) : বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের যান্ত্রিক পদ্ধতি হল স্ক্রাবার । কলকারখানা, শক্তিকেন্দ্র প্রভৃতির ধোঁয়ায় নির্গত বিষাক্ত গ্যাসীয় বর্জ্যকে স্ক্রাবার যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধৌত করে সেই দূষকগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে । বর্তমানে স্ক্রাবার গ্যাসীয় বর্জ্যের মধ্যে প্রতিক্রিয়াসাধক বস্তুর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে অ্যাসিড গ্যাসগুলিকে দূরীভূত করে । স্ক্রাবার যন্ত্রে সাধারণত দু-ভাবে গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের বা নিষ্কাশন করা হয় । যথা— (ক) আর্দ্র স্ক্রাবিং ও (খ) শুষ্ক স্ক্রাবিং ।
(ক) আর্দ্র স্ক্রাবিং : এক্ষেত্রে কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস, ধূলিকণা প্রভৃতি বায়ুদূষককে কোনো জলীয় দ্রবণের মধ্যে চালনা করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয় ।
(খ) শুষ্ক স্ক্রাবিং : এই পদ্ধতিতে জলীয় দ্রবণ ছাড়াই বস্তুকণা ও দূষিত বাতাস স্ক্রাবারের মাধ্যমে পরিস্রুত করে বিশুদ্ধ বাতাস নির্গত করা হয় । সাধারণত শুষ্ক স্ক্রাবিং পদ্ধতিতে অম্লধর্মী গ্যাস অপসারণ করা হয় ।
*****