পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 08/13/2021 - 10:11

পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন (Shifting of pressure belts) : পৃথিবীর স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলি সূর্যরশ্মির পতন কোণের মান ও ইনসোলেশনের বন্টনের ভিত্তিতে তাদের সীমানা বা অবস্থান পরিবর্তন করে । উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলি সূর্যের উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা উত্তর দিকে সরে যায় । আবার দক্ষিণায়ণের সময় সামান্য দক্ষিণ দিকে সরে যায় । এই ঘটনাকে বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা বা অবস্থান পরিবর্তন বলে । পৃথিবীর স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলি উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সর্বাধিক ৫° থেকে ১০° পর্যন্ত অবস্থান পরিবর্তন করে । সাধারণত উচ্চ অক্ষাংশের তুলনায় নিম্ন অক্ষাংশের বায়ুচাপ বলয়গুলির অবস্থান অপেক্ষাকৃত বেশি পরিবর্তিত হয় । বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে ঘটিত নানা ঘটনাগুলি হল—

(i) বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের উৎসস্থল এবং প্রবাহপথের কিছুটা পরিবর্তন ঘটে ।

(ii) সূর্যের উত্তরায়ণের সময় নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ৫° থেকে ৮° উত্তর অক্ষরেখায় সরে যায় ফলে তার আকর্ষণে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে । এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টি হয় । আর এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষাকালের আবির্ভাব ঘটে । উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালে ৩০° থেকে ৪০° অক্ষাংশের মধ্যবর্তী বায়ুচাপ বলয়গুলি সামান্য উত্তরে সরে আসায় এই অঞ্চলে শুষ্ক আয়নবায়ু প্রবাহিত হয় । আবার শীতকালে এই বায়ুচাপ বলয়গুলি সামান্য দক্ষিণে সরে যাওয়ায় আর্দ্র পশ্চিমাবায়ুর কারণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় । আয়নবায়ু উত্তরে সরে গেলে সাভানা অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় ।

(iii) স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলির অবস্থান পরিবর্তনের জন্যে উভয় গোলার্ধের ৩০° থেকে ৪০° অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থানসমূহ শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ূ এবং গ্রীস্মকালে শুষ্ক আয়ন বায়ুর প্রভাব আসে । ফলে শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমা বাযুর প্রভাবে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় ও গ্রীষ্মকাল শুষ্ক থাকে ।

নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম : নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারা বছর বেশি উষ্ণতা থাকে বলে বায়ু সর্বদা উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় । সেজন্য নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ু সর্বদা ঊর্ধ্বগামী হয় । ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ু প্রবাহিত হয় না বলে এই অঞ্চলে বায়ুর প্রবাহ বা গতি বোঝা যায় না । ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে সর্বদা শান্তভাব বিরাজ করে । তাই এই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম বলে ।

অশ্ব অক্ষাংশ : উত্তর গোলার্ধে ২৫° থেকে ৩৫° উত্তর অক্ষংশে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ে শীতল ও ভারী বাযুর গতি সর্বদা নিম্নগামী বলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুপ্রবাহ বিশেষ অনুভূত হয় না । ফলে এখাকার বায়ুমন্ডলে সারাবছর শান্তভাব বিরাজ করে । সেজন্য এই অঞ্চলটি অশ্ব অক্ষাংশ নামে পরিচিত । প্রাচীনকালে পালতোলা সমুদ্র জাহাজগুলি এই অঞ্চলে এসে বায়ুপ্রবাহের অভাবে গতিহীন হয়ে পড়ত । কথিত আছে, আরব উপদ্বীপ থেকে ঘোড়া বোঝাই জাহাজ উত্তর আমেরিকা বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার পথে এই অঞ্চলে এসে বায়ু প্রবাহহীনতার কারণে প্রায়শই গতিহীন হয়ে পড়ত । তখন পানীয় জল ও খাদ্যের সাশ্রয়ের জন্য নাবিকেরা ঘোড়াগুলিকে সমুদ্রে ফেলে দিত । তাই এই অঞ্চলকে 'অশ্ব অক্ষাংশ' নামে অভিহিত করা হয় ।

বাইস ব্যালট সূত্র : ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ওলন্দাজ আবহবিদ বাইস ব্যালট বায়ুচাপের তারতম্য ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে একটি সম্পর্ক নির্ধারণ করে একটি সূত্র আবিষ্কার করেন । তাঁর সূত্রানুযায়ী উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের গতির দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকে বায়ুর চাপ কম অনুভূত হয় । আবার দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থা অনুভূত হয় । বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত এই বৈশিষ্ট্য বা সূত্রটিকে বাইস ব্যালট সূত্র (Buys Ballot's law) বলে ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।