পৃথিবীর চাপ বলয় সমূহ (Pressure Belts of the world)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 08/12/2021 - 09:12

পৃথিবীর চাপ বলয় সমূহ (Pressure Belts of the world) : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে তার চারপাশের তুলনায় বায়ুর চাপ কোথাও কম হয় আবার কোথাও বেশি হয় । যদি কোথাও বায়ুর চাপ কম হয়, তাকে নিম্নচাপ বলে এবং কোথাও বায়ুর চাপ বেশি হলে তাকে উচ্চচাপ বলে । এই উচ্চচাপ ও নিম্নচাপগুলি পৃথিবীপৃষ্ঠকে ঘিরে এক একটি বলয়ের আকারে অবস্থান করে । এদের বায়ুচাপ বলয় বলে । বায়ুচাপ বলয়গুলি স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে উষ্ণতাগত তারতম্যে ছোটো ছোটো বায়ুচাপ কক্ষরূপে অবস্থান করে । পৃথিবীপৃষ্ঠে মোট সাতটি স্থায়ী বায়ু চাপবলয়ের সৃষ্টি হয়েছে । এই সাতটি চাপ বলয়ের মধ্যে তিনটি নিম্নচাপ বলয় ও চারটি উচ্চ চাপ বলয় অবস্থান করে । বায়ুচাপ বলয়গুলি হল, — (১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, (২) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়, (৩) মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, (৪) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (৫) কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (৬) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় ও (৭) কুমেরু উচ্চচাপ বলয় ।

(১) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় (The Equatorial low pressure belt) : নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ৫° - ১০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে একটি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় গড়ে উঠেছে, একে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণ : (i) এই অঞ্চলে সারা বছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে এখানকার বায়ু সারাবছর উষ্ণ ও হালকা হয় । (ii) এই অঞ্চলে জলভাগের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে বায়ু হালকা হয় ও বায়ু চাপ কম হয় । (iii) পৃথিবীর আবর্তন গতি নিরক্ষীয় অঞ্চলে সব চেয়ে বেশি বলে এর প্রভাবে এই অঞ্চলের উষ্ণ ও হালকা বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয় । ফলে বায়ুর ঘনত্ব কমে ও বায়ুর চাপ কম হয় ।

(২) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় ও (৩) মকরীয় উচ্চচাপ বলয় (The Sub-Tropical high pressure belts) : পৃথিবীর দুই গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ২৫° - ৩৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে স্থায়ী কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থিত । উত্তর গোলার্ধে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় উচ্চচাপ বলয় নামে পরিচিত ।

সৃষ্টির কারণ : (i) কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে ওপরে উঠে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় উচ্চতার প্রভাবে বায়ু ধীরে ধীরে শীতল ও সংকুচিত হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নীচের দিকে নেমে আসে বলে বায়ুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় । (ii) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের ঠান্ডা ও ভারী বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় বায়ুর কিছু অংশ ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে বলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয় ।

কর্কটীয় ও মকরীয় শান্তবলয় : কর্কটক্রান্তীয় ও মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে বায়ুর প্রধানত নিম্নমুখী গতি পরিলক্ষিত হয় বলে এই অঞ্চলে শান্তভাব বিরাজ করে । উত্তর গোলার্ধে এই অঞ্চলটি কর্কটীয় শান্তবলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরীয় শান্তবলয় নামে পরিচিত ।

(৪) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় ও (৫) কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (The Sub-Polar low pressure belts) : পৃথিবীর উভয় গোলার্ধের দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে ৫৫° - ৬৫° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অবস্থান করে । এই অঞ্চলকে উত্তর গোলার্ধে সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণ : (i) দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে পৃথিবীর আবর্তনের গতিবেগ দুই মেরু অপেক্ষা অনেক বেশি বলে এই অঞ্চলের বায়ু ক্রান্তীয় ও মেরু অঞ্চলের দিকে ছিটকে যায় বলে বায়ুর ঘনত্ব হ্রাস পায় । (ii) দুই মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও ভারী বায়ু মেরুবৃত্ত অঞ্চলে পৌঁছুলে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বায়ু আয়তনে বেড়ে যায় ও বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ কমে যায় । ফলে দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে ।

(৬) সুমেরু উচ্চচাপ বলয় ও (৭) কুমেরু উচ্চচাপ বলয় (The Polar high pressure belts) : পৃথিবীর সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে সারা বছর স্থায়ীভাবে উচ্চচাপ বিরাজ করে । উত্তর গোলার্ধে এই অঞ্চলকে সুমেরু উচ্চচাপ বলয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে কুমেরু উচ্চচাপ বলয় বলে ।

সৃষ্টির কারণ : (i) এই দুই অঞ্চলে সারা বছর সূর্যকিরণের অভাবে বায়ু সর্বদা শীতল ও ভারী হয় । (ii) বাষ্পীভাবন খুব কম হওয়ার জন্য এই অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম থাকে বলে বায়ু অপেক্ষাকৃত ভারী হয় । (iii) পার্শ্ববর্তী মেরুবৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় থেকে ঊর্ধ্বগামী বায়ুর কিছু অংশ শীতল হয়ে এই অঞ্চলে নেমে আসে বলে বাযুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি পায় । এই সব কারণে দুই মেরু অঞ্চলে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।