Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 06/19/2021 - 21:58

যে সকল বাহ্যিক প্রাকৃতিক শক্তি (exogenetic forces) ভূমিরূপের ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে নদী তাদের মধ্যে প্রধানতম ।

নদী [River] উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা মালভূমি থেকে বৃষ্টির জল, হিমবাহ গলা জল অথবা হ্রদ বা ঝর্ণার জল যখন ভূমির ঢাল অনুসরণ করে বিভিন্ন গতিতে প্রবাহিত হয়ে স্বাভাবিক জলধারা সৃষ্টি করে ও কোনো সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা অন্য কোনো জলাশয়ে গিয়ে পতিত হয়, তখন সেই স্বাভাবিক জলধারাকে নদী বলে । বিজ্ঞানী মরিসাওয়া -র মতে 'নির্দিষ্ট খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত স্বাভাবিক জলধারাকে নদী বলে' ।

নদীর উৎস (Source of the river) :নদীর উৎস হল নদী যে স্থান থেকে নির্গত হয় বা উৎপত্তি লাভ করে । যেমন— গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা হল গঙ্গা নদীর উৎস ।

নদীর মোহনা (Mouth of the river) : নদী যে স্থানে সাগর বা হ্রদ অথবা জলাশয়ে গিয়ে মিলিত হয়, সেই মিলনস্থলকে বলে নদীর মোহনা । যেমন— গঙ্গা নদীর মোহনা হল সাগরদ্বীপের নিকটবর্তী স্থান ।

নদী উপত্যকা (River Valley) : দুই উচ্চভূমির মধ্যবর্তী দীর্ঘ ও সংকীর্ণ নিম্নভূমিকে বলা হয় উপত্যকা । নদীর উৎপত্তি স্থল থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত যে খাতের বা নিম্নভুমির মধ্য দিয়ে নদীর জলধারা প্রবাহিত হয়, সেই খাত বা নিম্নভুমিকে বলে নদীখাত বা নদী উপত্যকা ।

ধারণ অববাহিকা : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টির জল বা বরফগলা জল ছোটো, বড়ো, মাঝারি প্রভৃতি অসংখ্য জলধারার মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে পর্বতের পাদদেশে এসে প্রধান নদীতে মিলিত হয় । পর্বতের উঁচু অংশ থেকে পাদদেশ পর্যন্ত যে বিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জলধারা মূল নদীতে মিলিত হয়, সেই সমগ্র অঞ্চলকে ধারণ অববাহিকা বলে ।

জলবিভাজিকা (Watershed or water parting) : পার্বত্য বা উচ্চভূমি অঞ্চলে বৃষ্টির জল ভূমির ঢাল অনুসারে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে । যে পার্বত্য বা উচ্চভূমি অঞ্চল তার দু-পাশে প্রবাহিত নদ-নদীর মধ্যে বৃষ্টির জলের বিভাজন ঘটায়,সেই পার্বত্য বা উচ্চভূমিকে জলবিভাজিকা বলে । সাধারণত পাহাড় বা পর্বত জলবিভাজিকার কাজ করে । যেমন— বিন্ধ্য পর্বত উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের নদীগুলির মধ্যে জলবিভাজিকারূপে কাজ করে ।

উপনদী (Tributories) : প্রধান নদীর গতিপথের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে যে সকল নদী বা ছোটো জলধারা মূল বা প্রধান নদীতে এসে মিলিত হয় সেগুলিকে মূল নদীর উপনদী বলা হয় । যেমন— যমুনা, শোন, গণ্ডক, কোশী প্রভৃতি হল গঙ্গার উপনদী ।

শাখা নদী (Distributories) : যে সকল নদী মূল নদী থেকে শাখার মতো বেরিয়ে গিয়ে অন্য কোনো জলধারা, সাগর বা সেই নদীতে গিয়ে মিলিত হয় তাদেরকে শাখানদী বলে । যেমন— জলঙ্গী, চূর্ণী প্রভৃতি হল গঙ্গার শাখানদী ।

নদীগোষ্ঠী:-  মূল নদী, তার উপনদী ও শাখানদী নিয়ে যে নদী পরিবার গড়ে ওঠে, তাকে নদীগোষ্ঠী বলে ।

নদী অববাহিকা (River Basin) : কোনো প্রধান নদী ও তার উপনদী এবং শাখানদী যে বিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেই সমগ্র অঞ্চলকে প্রধান নদীর অববাহিকা বলে । গঙ্গা নদীর অববাহিকা হল ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকা এবং পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা হল আমাজন নদীর অববাহিকা ।

জলচক্রের অংশরূপে নদী :-  বারিমন্ডল, বায়ুমণ্ডল ও শিলামন্ডলের মধ্যে জলের নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান পরিবর্তনের প্রক্রিয়াকে জলচক্র বলে । পৃথিবীতে জল প্রধানত সাগর ও মহাসাগরে শতকরা ৯৬ ভাগ, তুষাররূপে শতকরা ২ ভাগ, নদনদী, হ্রদ ও ভৌমজলে শতকরা ১.৭ - ১.৬ ভাগ এবং বায়ুমন্ডলে শতকরা ০.৪ - ০.৩ ভাগ —এই চারটি আধারে অবস্থান করে । সূর্যের উত্তাপে নদনদী, হ্রদ ও সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হয়ে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় এবং প্রসারিত ও হালকা হয়ে আকাশে ওঠে যায় । ঊর্ধ্বাকাশে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় ও মেঘের সৃষ্টি করে । মেঘের মধ্যে জল কণাগুলি জোটবদ্ধ হয়ে আকাশে ক্রমশ বড় ও ভারী হয় এবং অবশেষে বৃষ্টিরূপে ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়ে । এই প্রক্রিয়ায় জলচক্রের সৃষ্টি হয় । জলচক্রের অংশরূপে বৃষ্টির জলের অধিকাংশ ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদনদী ও হ্রদের সৃষ্টি করে । এই জল আবার নদীর মাধ্যমে সমুদ্রে গিয়ে পতিত হয় এবং পুনরায় জলচক্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে ।

******

Comments

Related Items

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment)

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment) : বর্জ্য পরিবেশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে । যেমন — (ক) ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, (খ) মৃত্তিকা সংক্রমণ, (গ) দূষণ, (ঘ) লিশেট ইত্যাদি ।

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?