দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands)

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 12/22/2021 - 23:16

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands): ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরে বহু আগ্নেয় দ্বীপ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরে অসংখ্য প্রবাল দ্বীপের অবস্থান পরিলক্ষিত হয় । অবস্থান অনুসারে এই দ্বীপপুঞ্জগুলিকে দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ এবং (২) আরব সাগরের দ্বীপপুঞ্জ ।

(১) বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ : ১০° উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত ১০° চ্যানেলের মাধ্যমে এই দ্বীপপুঞ্জগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত । যথা— (i) আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ ও (ii) নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ । ভুপ্রাকৃতিক দিক থেকে এই দ্বীপগুলি গভীর সমুদ্রে ডুবে থাকা মায়ানমারের আরাকান ইয়োমা পর্বতের একটি অংশ, যা সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে গিয়ে পূর্ব দিকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে । আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ছাড়া এই অঞ্চলের অন্য সব দ্বীপগুলি আয়তনে খুবই ছোট হওয়ায় ও পানীয় জলের অভাবের জন্য জনবসতিহীন ।

(i) আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ (The Andaman Islands): এই দ্বীপপুঞ্জের প্রধান চারটি দ্বীপ হল— উত্তর আন্দামান, মধ্য আন্দামান, দক্ষিণ আন্দামান এবং ক্ষুদ্র আন্দামান । আন্দামানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হল স্যাডেল পিক । এর উচ্চতা হল ৭৩৮ মিটার । এই দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ব্যারেন ও নারকোনডাম দ্বীপ দুটি প্রকৃতপক্ষে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি । এর মধ্যে ব্যারেন আগ্নেয়গিরি থেকে ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০৬ এবং ২০১৭ সালে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল ।

(ii) নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (The Nicobar Islands) : নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রধান দ্বীপগুলি হল কার নিকোবর ও বৃহৎ নিকোবর । মাউন্ট খুলিয়ার এর উল্লেখযোগ্য পর্বতশৃঙ্গ । এর উচ্চতা ৬৪০ মিটার । এই দ্বীপের দক্ষিণের শেষ প্রান্তটির নাম ইন্দিরা পয়েন্ট, এটি ভারতের দক্ষিণতম স্থল বিন্দু ।

(২) আরব সাগরের দ্বীপপুঞ্জ (The Islands of Arabian sea) : ভারতের পশ্চিম দিকে কেরালার মালাবার উপকুল থেকে প্রায় ৩২৪ কিলোমিটার দূরত্বে ৩৬ টি ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপ নিয়ে লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত । এই অংশের প্রধান দ্বীপ হল— লাক্ষাদ্বীপ । এই দ্বীপগুলির মধ্যে কাভারাত্তি, কালপেনি, মিনিকয়, আমিনদিভি প্রভৃতি প্রধান । এখানকার সব দ্বীপগুলি প্রবাল দ্বারা গঠিত । লাক্ষাদ্বীপপুঞ্জের মোট আয়তন হল ৩২ বর্গ কিমি.। এই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড়ো দ্বীপ হল মিনিকয় দ্বীপ । এর আয়তন ৪.৫০ বর্গ কিমি । ভুবিজ্ঞানীদের মতে, আরবল্লী পর্বতের সম্প্রসারিত শিলাস্তরের ওপর যুগ যুগ ধরে আরব সাগরের প্রবাল কীটদের মৃত দেহাবশেষ স্তরে স্তরে সজ্জিত হয়ে এই দ্বীপপুঞ্জের সৃষ্টি হয়েছে ।

দ্বীপপুঞ্জের গুরুত্ব (Significance of Islands) :

(১) দ্বীপপুঞ্জের ঘন বনভূমির মূল্যবান কাঠ ও বনজ সম্পদ অধিবাসীদের জীবিকা অর্জনের সহায়ক ।

(২) দ্বীপ অঞ্চলে ঘন বনভূমি থাকায় এখানে কাষ্ঠ শিল্পের উন্নতি হয়েছে ।

(৩) ভারতের দ্বীপ অঞ্চল মৎস্য শিকারের আদর্শ জায়গা । তাই অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা মৎস্য সংগ্রহ ও মৎস্যের ব্যবসা । 

(৪) পার্শ্ববর্তী সমুদ্র থেকে মূল্যবান রত্ন ও মৎস আহরণের সুবিধা রয়েছে ।

(৫) এই অঞ্চলে নারিকেল, সুপারি ও তাল জাতীয় গাছের চাষ প্রচুর পরিমাণে হয় ।

(৬) বর্তমানে দ্বীপপুঞ্জগুলিতে পর্যটনশিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে ।

(৭) নিজস্ব অর্থনীতি গড়ে না ওঠায় দ্বীপপুঞ্জগুলিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল ভূখণ্ডের ওপর নির্ভর করতে হয় ।

*****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।