উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains)

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 12/22/2021 - 09:08

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains) : দক্ষিণ ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দুটি উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি (২) পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি ।

(১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি (The Eastern Coastal Plains) : ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগরের তীর বরাবর বিস্তৃত পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ কিমি. এবং প্রস্থ গড়ে ১০০ কিমি. । পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন— (i) উত্তর সরকার উপকূল ও (ii) করমণ্ডল উপকূল

(i) উত্তর সরকার উপকূল (The Northern Circars):  উত্তরে সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অঞ্চল পর্যন্ত উত্তর সরকার উপকূল বিস্তৃত । এই অঞ্চলটি ওড়িশা রাজ্যে ওড়িশা উপকূলীয় সমভূমি এবং অন্ধ্রপ্রদেশে অন্ধ্র উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । পূর্ব উপকূলীয় সমভূমিতে অনেকগুলি হ্রদ আছে এর মধ্যে ওড়িশা উপকূলের চিল্কা ও কোলেরু এবং অন্ধ্র উপকূলের পুলিকট উল্লেখযোগ্য হ্রদ ।

(ii) করমণ্ডল উপকূল (Coromondal Coast) : উত্তরে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারীকার মধ্যে অবস্থিত এই উপকূলীয় সমভূমিটি করমণ্ডল উপকূল নামে পরিচিত । এর দক্ষিণে রয়েছে কুমারিকা অন্তরীপ ।

(২) পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি (The Western Coastal Plains) : ভারতের পশ্চিমে আরব সাগরের সমান্তরালে বিস্তৃত সংকীর্ণ ও বন্ধুর উপকূলীয় সমভুমিকে পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি বলা হয় । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০০ কিমি. এবং প্রস্থ ১০ কিমি থেকে ৮০ কিমি. । এই উপকূলীয় সমভূমিকে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (i) গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি, (ii) কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি, (iii) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি, (iv) মালাবার উপকূলীয় সমভূমি ।

(i) গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি (The Gujarat Plains) : এই অঞ্চলটি উত্তরে গুজরাট রাজ্যের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপের উপকূল থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা পর্যন্ত গুজরাট উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত । এই অঞ্চলের উত্তরে কচ্ছ উপদ্বীপের লবণাক্ত জলাভূমি কচ্ছের রণ নামে পরিচিত । এই অংশে গিরনার ও গির নামে দুটি রেঞ্জ আছে । গিরনার পাহাড়ের গোরক্ষনাথ কাথিয়াবাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ।  

(ii) কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি (The Konkan Coast) : মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা থেকে গোয়া উপকূল পর্যন্ত কঙ্কন উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত । এই অঞ্চলটি প্রায় ৫০০ কিমি. দীর্ঘ ।

(iii) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি (The karnataka Coast) : উত্তরে গোয়া থেকে দক্ষিণে কর্ণাটকের দক্ষিণ সীমা পর্যন্ত কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি বিস্তৃত । এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৫ কিমি. । ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রবতী নদীর মোহনায় এই উপকূলের একমাত্র বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায় ।

(iv) মালাবার উপকূলীয় সমভূমি (The Malabar Coast) : কেরালা রাজ্যের উপকূলে গড়ে ওঠা সমভূমি অঞ্চলটি মালাবার উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই সমভূমি অঞ্চলে অসংখ্য জলাভূমি বা কয়াল ও উপহ্রদ বা লেগুন দেখা যায় । উপকূলের নিস্তরঙ্গ লবণাক্ত জলাভূমি ব্যাকওয়াটার্স নামে পরিচিত । উপকূলের বালিয়াড়িগুলিকে স্থানীয় অধিবাসীরা থেরিস এবং উপহ্রদগুলিকে কয়াল বলে ।

কয়াল — ভূ-আলোড়নের ফলে মালাবার উপকূলভাগ বহুবার উত্থিত এবং নিমজ্জিত হয়েছে । এর চিহ্নস্বরূপ এখানে স্থলভাগের মধ্যে সমুদ্রের জল আটকে পড়ে বিশাল জলাভূমি বা ব্যাকওয়াটার্স -এর সৃষ্টি হয়েছে । এই জলাভূমিগুলি স্থানীয়ভাবে কয়াল নামে পরিচিত । কয়ালগুলির মধ্যে কোচিনের কাছে অবস্থিত ভেম্বনাদ কয়াল ভারতের বৃহত্তম কয়াল ও কোল্লমের কাছে অবস্থিত অষ্টমুদি কয়াল খুব বিখ্যাত ।

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির তুলনা :

পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমি
১. এই উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বেশ প্রশস্ত । ১. এই উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল বেশ সংকীর্ণ ।
২. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলের উচ্চতা কম । ২. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলের উচ্চতা বেশি ।
৩. এই উপকূলের সর্বত্র বালিয়াড়ি দেখা যায় । ৩. এই উপকূলের কেবল দক্ষিণ ভাগে বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
৪. এই উপকূলের নদী মোহানায় বড় বড় বদ্বীপ দেখা যায় । ৪. এই উপকূলের নেত্রাবতী নদী মোহানায় একটি মাত্র ছোটো বদ্বীপ ছাড়া আর কোনো বদ্বীপ নেই ।
৫. এই উপকূলের বিভিন্ন অংশে হ্রদ ও উপহ্রদ দেখা যায় । ৫. এই উপকূলের কেবলমাত্র দক্ষিণাংশে কয়াল দেখা যায় ।
৬. এই উপকূলের দক্ষিণভাগ ছাড়া উপকূলরেখা অভগ্ন । এই জন্য বন্দরের সংখ্যা কম । ৬. এই উপকূলের উপকূলরেখা সর্বত্রই ভগ্ন বলে বন্দরের সংখ্যা বেশি ।
৭. এই উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাঝারি । ৭. এই উপকূলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি ।
৮. এই উপকূলীয় সমভূমির মাটি যথেষ্ট উর্বর । ৮. এই উপকূলীয় সমভূমির মাটির উর্বরতা কম ।

******

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :

(১) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের মৃত্তিকা উর্বর হওয়ায় এই অঞ্চল কৃষিকাজের সহায়ক ।

(২) এই অঞ্চল নারিকেল, সুপারি, কাজুবাদাম ও রবার চাষে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ।

(৩) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে লবণ ও কার্পাস বয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে ।

(৪) মৎস্য আহরণের সুবিধা, উন্নত কৃষিকাজ ও শিল্পব্যবস্থার কারণে এই অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ।

(৫) এই অঞ্চলের স্থানাবিশেষে সমুদ্র বন্দর গড়ে ওঠায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটেছে ।

*****

Comments

Related Items

উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলে ? উষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

প্রশ্ন : উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলেউষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

প্রশ্ন : দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

উত্তর : সকালে এবং বিকালে কোনো স্থান থেকে সূর্য অনেক দূরে থাকে বলে সূর্যরশ্মি

(১) পৃথিবীপৃষ্ঠের সেই স্থানে তুলনামূলক ভাবে বেশি তির্যকভাবে পড়ে,

(২) বেশি পরিমাণ বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং

পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

প্রশ্ন :- পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

প্রশ্ন : অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?