Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/06/2021 - 11:37

অধঃক্ষেপণ (Precipitation) : সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় ও  বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভেসে বেড়ায় । জলকণাগুলি যখন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বড় বড় জলকণায় পরিণত হয় তখন সেগুলি নিজেদের ভারে ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বাতাসে আর ভেসে বেড়াতে পারে না । তখন কঠিন বা তরল অবস্থায় বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি, স্লিট, শিশির, তুহিন প্রভৃতি রূপে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অধঃক্ষেপণ [Precipitation] বলে । প্রকৃতি অনুসারে অধঃক্ষেপণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে ।

অধঃক্ষেপণের প্রকারভেদ:- অধঃক্ষেপণ তরল এবং কঠিন এই দু’ভাবেই হয় । তরল অধঃক্ষেপণ হল বৃষ্টিপাত আর কঠিন অধঃক্ষেপণ হল তুষারপাত, স্লিট বা শিলাবৃষ্টি । বেশিরভাগ অধঃক্ষেপণ বৃষ্টিপাত হিসাবে পরিচিত হলেও সব রকমের অধঃক্ষেপণই বৃষ্টিপাত নয় । জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠে এসে না পৌঁছালে তাকে অধঃক্ষেপণ বলা হয় না । সে জন্য কুয়াশাকে (Fog) অধঃক্ষেপণ বলা যায় না ।  

(১) বৃষ্টিপাত (২) ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি, (৩) শিলাবৃষ্টি, (৪) স্লিট, (৫) তুষারপাত, (৬) শিশির, (৭) তুহিন প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের উদাহরণ ।

(১) বৃষ্টিপাত [Rainfall] :- সূর্যের উত্তাপে ভূপৃষ্ঠের সমুদ্র, হ্রদ, নদী, পুকুর, খাল, বিল প্রভৃতি জলরাশি থেকে জল জলীয়বাষ্পে পরিণত হয় । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস হাল্কা হওয়ার দরুন ঊর্ধগামী হয় । উপরের বায়ুমণ্ডলের প্রবল শৈত্যের সংস্পর্শে এলে ঘনিভবনের ফলে জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় ও  বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘের আকারে আকাশে ভেসে বেড়ায় । জলকণাগুলি যখন পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে বড় বড় জলকণায় পরিণত হয় তখন সেগুলি নিজেদের ভারে ও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বাতাসে আর ভেসে বেড়াতে পারে না । তখন সেই মেঘ থেকে জলকণাগুলি প্রধানত জলের ফোঁটার আকারে ঝরঝর করে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় । মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠে পতিত এই জলধারাকে বৃষ্টিপাত বলে ।

(২) ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি (Drizzle) : ০.৫ মিমি ব্যাসের কম অতি সূক্ষ্ম জলকণার হালকা বৃষ্টিকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি বলে ।

(৩) শিলাবৃষ্টি (Hail) : বায়ু প্রবাহের ঊর্ধ্বগতির জন্য অনেক সময় ঝড়ের মুখে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু অনেক ওপরে উঠে যায় ও সেখানকার অত্যাধিক শৈত্যের সংস্পর্শে এসে জলীয়বাষ্প জমাট বেঁধে কঠিন বরফের কণায় পরিণত হয় । এইসব বরফকণা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও বড়ো বরফ কণায় পরিণত হলে এক সময় তারা আর বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না । তারপর বায়ুর বেগ কমলে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সেই জমাট বাঁধা বরফের কণা দ্রুত ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় । এর সঙ্গে বৃষ্টিপাতও হয় । এই বৃষ্টিপাতকে শিলাবৃষ্টি বলা হয় ।

(৪) স্লিট (Sleet) : শীতপ্রধান অঞ্চলে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাতের বদলে বায়ুস্থিত জলকণা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বরফকণায় পরিণত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ঝরঝর করে ঝরে পড়ে । এই বরফকণাগুলি বেশ শক্ত হয় । একে স্লিট বলে ।

(৫) তুষারপাত (Snowfall) : শীতপ্রধান অঞ্চলে অত্যাধিক ঠান্ডায় বাতাসের জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণার পরিবর্তে হালকা পেজা তুলোর মত নরম তুষারে পরিণত হয় এবং উপরের বায়ুমন্ডল থেকে সেগুলি ভূপৃষ্ঠে এসে পতিত হয় । একে তুষারপাত বলে ।

(৬) শিশির (Dew) : রাতে তাপ বিকিরণ করে ভূপৃষ্ঠ শীতল হলে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুও শীতল হয় । তখন বায়ুর জলীয়বাষ্প শিশিরাঙ্কে পৌঁছোলে তা ভূপৃষ্ঠের ঘাসে, গাছের পাতায় বা টিনের চালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল বিন্দুর আকারে সঞ্চিত হয় । একে শিশির বলে ।

(৭) তুহিন (Frost):- শীতপ্রধান অঞ্চলে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে শীতকালে গাছের পাতা বা ঘাসের উপর শিশিরের পরিবর্তে টুকরো টুকরো সাদা তুলোর মত কোমল ও শীতল এক রকম আবরণের সৃষ্টি হয় । একে তুহিন বলে ।

****

Comments

Related Items

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands)

দ্বীপপুঞ্জ সমূহ (The Islands): ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরে বহু আগ্নেয় দ্বীপ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে আরব সাগরে অসংখ্য প্রবাল দ্বীপের অবস্থান পরিলক্ষিত হয় । অবস্থান অনুসারে এই দ্বীপপুঞ্জগুলিকে দু'ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) বঙ্গোপসাগরের দ্বীপপুঞ্জ এবং (

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains)

উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল (The Coastal Plains) : দক্ষিণ ভারতের পূর্বদিকে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমদিকে আরব সাগরের উপকূল বরাবর গড়ে ওঠা সংকীর্ণ সমভূমি অঞ্চল দুটি উপকূলীয় সমভূমি নামে পরিচিত । এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (১) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি

উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau)

(গ) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল (The Peninsular Plateau or The Deccan Plateau): উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ দিকে পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত থেকে শুরু করে পূর্বে রাজমহল পাহাড় এবং উত্তরে গঙ্গা সমভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণে উপকূলীয় সমভূমির মধ্যবর্তী অংশে উপদ্ব

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains)

উত্তরের সমভূমি অঞ্চল (The Northern Plains) : উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে তাকে উত্তরের সমভূমি

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains)

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল (The Northern Mountains) : ভারতের সমগ্র উত্তর অংশ জুড়ে উত্তরে তিব্বত মালভূমি এবং দক্ষিণে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের মাঝে অবস্থান করছে উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল । প্রায় নিরবিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণি নিয়ে গড়ে ওঠা এই অঞ্চলটি পশ্চিমে কাশ