প্রাণী-হরমোন ও উৎস

Submitted by arpita pramanik on Fri, 12/07/2012 - 16:16

প্রাণী-হরমোন বা জু-হরমোন (Animal Hormone or Zoo-Hormone)

প্রাণী হরমোনের উৎস [Site of Animal Hormones]:- প্রাণীদেহে অবস্থিত অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয় । অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের স্নায়ুগ্রন্থিতে অবস্থিত নিউরোসিক্রেটরি কোষগুলো থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় । প্রাণীদের নিউরোসিক্রেটরি কোষ থেকে নিঃসৃত হরমোনকে নিউরো হরমোন বলে ।

অনাল বা অন্তঃক্ষরা বা অন্তঃ-স্রাবী গ্রন্থি [Endocrine gland]:- যেসব গ্রন্থির ক্ষরিত রস নালির মাধ্যমে গ্রন্থির বাইরে নিঃসৃত না হয়ে সরাসরি দেহরসে (রক্ত ও লসিকা) মিশে যায় তাদের অনাল গ্রন্থি বলে । এই গ্রন্থির নালি থাকে না । পিটুইটারি, থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ইত্যাদি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির উদাহরণ । এইসব গ্রন্থি থেকে হরমোন ক্ষরিত হয় ।

সনাল গ্রন্থি [Exocrine gland]:- যে সব গ্রন্থির নালী থাকে ও ক্ষরিত রস নালীর মাধ্যমে রক্তে, লসিকায় বা বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষরিত হয়, তাদের সনাল গ্রন্থি বলে । লালা গ্রন্থি, পেপটিক গ্রন্থি, যকৃৎ, আন্ত্রিকগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় গ্রন্থি ইত্যাদি সনাল গ্রন্থির উদাহরণ । এই গ্রন্থি থেকে উৎসেচক ক্ষরিত হয় ।

মিশ্রগ্রন্থি [Mixed gland]:- যে সব গ্রন্থি অনাল ও সনাল এই দুই রকম গ্রন্থির সমন্বয়ে গঠিত, তাদের মিশ্রগ্রন্থি বলে । অগ্ন্যাশয়, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি মিশ্রগ্রন্থির উদাহরণ । এই সমস্ত গ্রন্থি থেকে হরমোনউৎসেচক উভয়ই ক্ষরিত হয় ।

বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য অন্তঃক্ষরা বা অনাল গ্রন্থি বহিঃক্ষরা বা সনাল গ্রন্থি
১. নালির উপস্থিতি এই ধরনের গ্রন্থির কোনও নালি থাকে না । এই ধরনের গ্রন্থির নালি থাকে ।
২. উত্পত্তির প্রক্রিয়া এই রকম গ্রন্থির ক্ষরণ গ্রন্থির বাইরে নিঃসৃত হয় না, ব্যাপন প্রক্রিয়ায় রক্তে মিশে যায় । এই রকম গ্রন্থির ক্ষরণ নালির মাধ্যমে গ্রন্থির বাইরে আসে ।
৩. নিঃসৃত বস্তু  এই রকম গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয় এই রকম গ্রন্থির ক্ষরণ বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন : পাক গ্রন্থি নিঃসৃত পাক রস, ঘর্মগ্রন্থি নিঃসৃত ঘাম, সিবেসিয়াস গ্রন্থি নিঃসৃত সিবাম ইত্যাদি ।

৪. উদাহরণ

পিটুইটারি, থাইরয়েড, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ইত্যাদি এই ধরনের গ্রন্থির উদাহরণ ।

লালা গ্রন্থি, যকৃৎ, ঘর্মগ্রন্থি ইত্যাদি এই ধরনের গ্রন্থির উদাহরণ ।

স্থানীয় হরমোন [Local Hormone]:- যে সব হরমোনের ক্রিয়া প্রধানত 'উত্স গ্রন্থির' মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাদের স্থানীয় বা লোকাল হরমোন বলে । উদাহরণ স্বরূপ টেস্টোস্টেরন [testosteron] শুক্রাশয়ের লেডিগের আন্তরকোষ থেকে উত্পন্ন হয়ে শুক্রাণু উত্পাদন ক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে । প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন, হিস্টামিন, ব্রাডিকাইনিন, গ্যাসট্রিন, সিক্রেটিন ইত্যাদি কয়েকটি স্থানীয় হরমোনের উদাহরণ ।

ট্রফিক হরমোন বা উদ্দীপক হরমোন [Trophic Hormone]:-  যে সমস্ত হরমোন কোনো একটি অনাল গ্রন্থি থেকে উত্পন্ন হয়ে অন্য একটি অনাল গ্রন্থিকে হরমোন নিঃসরণে উদ্দীপিত করে, তাদের উদ্দীপক হরমোন বা ট্রফিক হরমোন বলে ।

উদাহরণ : পিটুইটারি থেকে নিঃসৃত TSH (থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন) থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে ।  ACTH, FSH, LH, STH কয়েকটি ট্রফিক হরমোনের উদাহরণ ।

উদ্ভিদ ও প্রাণী হরমোনের পার্থক্য

বৈশিষ্ট্য উদ্ভিদ হরমোন প্রাণী হরমোন
১. উত্পত্তি উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রভাগ ও মূলের অগ্রভাগের ভাজক কলার তরুণ কোষ থেকে নিঃসৃত হয় । প্রাণী হরমোন সাধারণত প্রাণীদেহের নির্দিষ্ট অনাল গ্রন্থি অথবা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় ।
২. পরিবহন উদ্ভিদ হরমোন সাধারণত ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অথবা ফ্লোয়েম সংবহন কলার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় । প্রাণী হরমোন প্রধানত রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয় ।
৩. প্রকৃতি উদ্ভিদ হরমোন প্রধানত প্রোটিনধর্মী (ব্যতিক্রম : জিব্বেরেলিন) । প্রাণী হরমোন প্রোটিন বা স্টেরয়েড বা অ্যামাইনো ধর্মী হয় ।
৪. ব্যবহারিক প্রয়োগ উদ্ভিদ হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ ব্যাপক । প্রাণী হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ তুলনামূলকভাবে কম হয় ।

*****

Related Items

জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব ...

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা:- নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস । মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল ...

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে । প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে। কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন ও অবিভাজন এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে। জনিতৃ কোশের বিভাজনের ...

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা - অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস । অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। আবার এই অপত্য ...

কোশ বিভাজন ও কোশ বিভাজনের তাৎপর্য

আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগের ঘটনা । পৃথিবীতে জন্ম নিল প্রথম জীব । পৃথিবীর বুকে জাগল প্রাণের স্পন্দন । প্রথম সৃষ্টি হওয়া সেই জীব না ছিল উদ্ভিদ না কোন প্রাণী । জেলির মতো থকথকে খানিকটা প্রোটোপ্লাজম নিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিহীন সেই জীবের দেহ গড়ে ...