থাইরক্সিন (Thyroxin)

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/08/2012 - 14:24

থাইরক্সিন (Thyroxin)

থাইরয়েড [thyroid] গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নিঃসৃত হয় । থাইরয়েড গ্রন্থিটি গ্রীবাদেশে ট্রাকিয়ার দু'পাশে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ট্রাকিয়াল-রিং [tracheal ring] -এর সামনে অবস্থিত । প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের থাইরয়েড গ্রন্থির ওজন প্রায় 20-35 gm হয় । থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত আর দুটি হরমোন হল ট্রাই-আয়োডোথাইরেনিন এবং ক্যালসিটেনিন

থাইরক্সিনের কাজ [Function of Thyroxin]:- থাইরক্সিন মানবদেহে নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পন্ন করে, যেমন :

[১]  থাইরক্সিন মানবদেহের বৃদ্ধি, বিপাক নিয়ন্ত্রণ, মানসিক পরিপূর্ণতা এবং গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে ।

[২]  থাইরক্সিন মৌল বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে, এর প্রভাবে মৌল বিপাকীয় ক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায় । প্রতি মিলিগ্রাম থাইরক্সিন B.M.R. কে 1000 ক্যালোরিতে বাড়িয়ে দেয় ।

[৩]  থাইরক্সিনের প্রভাবে হৃদগতি বৃদ্ধি পায় ।

[৪]  থাইরক্সিন অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । থাইরক্সিনের প্রভাবে যকৃৎ থেকে গ্লুকোজেন মুক্ত হয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ।

[৫]  থাইরক্সিন অস্থি থেকে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসকে মুক্ত করে দেয় ।

[৬]  থাইরক্সিনের প্রভাবে মূত্রে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।

[৭]  থাইরক্সিন রক্তকণিকার ক্রমপরিণতিতে সহায়তা করে ।

[৮]  থাইরক্সিন স্তন গ্রন্থিতে দুধের ক্ষরণ বাড়ায় ।

[৯]  থাইরক্সিন দেহে অক্সিজেন সংযোগ ক্রিয়া বাড়ায় ।

[১০]  থাইরক্সিন ব্যাঙাচির রূপান্তরে সাহায্য করে এবং সরীসৃপ ও পক্ষীজাতীয় প্রাণীদের নির্মোচনে [moulting] সাহায্য করে ।

থাইরয়েড গ্রন্থির অধঃক্ষরণজনিত ফল [Effect of hypothyroidin]:-  থাইরক্সিন ক্ষরণ কম হলে শিশুদের ক্রেটিনিজম [Cretinism] এবং বয়স্কদের মিক্সিডিমা [Myxoedema] রোগ হয় ।

ক্রেটিনিজম -এর ক্ষেত্রে শিশুদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, শিশুরা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়, যৌন লক্ষণ প্রকাশিত হয় না, উদর বড় হয় এবং B.M.R. হ্রাস পায় ।

মিক্সিডিমার ক্ষেত্রে চোখ-মুখ ফোলা ফোলা দেখায়, দেহের রোম ও চুল উঠে যায়, গলার স্বর মোটা হয়, যৌন লক্ষণ হ্রাস পায়,  B.M.R. হ্রাস পায়, স্মৃতিভ্রংশ ঘটে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায় ইত্যাদি ।

থাইরয়েড গ্রন্থির অধিঃক্ষরণ জনিত ফল [Effect of hyperthyroidin]:-  থাইরক্সিনের অধিক ক্ষরণের ফলে গয়টার বা গলগণ্ড বৃদ্ধি বা বিস্ফারিত চক্ষুসহ গয়টার [exopthalmic goiter] রোগ হয় ।

প্যারাথরমোন:- প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যালসিয়াম বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে । এই হরমোনের কম ক্ষরণে টিটেনি [tetany] নামক রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় । 

থাইমোসিন:- এই হরমোন থাইমাস গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় । এই হরমোন শৈশবকালীন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, কিশোর অবস্থায় পিটুইটারির সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং থাইমাস গ্রন্থি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায় ।

*****

Related Items

জননের সংজ্ঞা ও জননের প্রকারভেদ

জনন অর্থাৎ বংশবিস্তার হল জীবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । পরিণত জীব অপত্য জীব সৃষ্টি করার মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় রাখে । যে জীব থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয় তাকে জনিতৃ জীব এবং জনিতৃ জীব থেকে সৃষ্টি হওয়া জীবকে অপত্য জীব বলে । জনিতৃ জীব থেকে অপত্য জীব ...

মাইটোসিসের দশা (Stages of Mitosis)

মাইটোসিস বিভাজন দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা:- নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস এবং সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিস । মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন বা ক্যারিওকাইনেসিস, চারটি দশায় সম্পন্ন হয় । মাইটোসিসের এই দশাগুলি হল ...

কোশ চক্র ও কোশ চক্রের পর্যায়

এক কথায় কোশের বৃদ্ধি ও জননের বিভিন্ন দশার চক্র বা চাকার মতো আবর্তনকে কোশ চক্র বলে । প্রতিটি জীবের মতো প্রতিটি কোশেরও একটি জীবন-চক্র আছে। কোশের এই জীবন-চক্র বিভাজন ও অবিভাজন এই দু'টি ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হ'তে থাকে। জনিতৃ কোশের বিভাজনের ...

কোশ বিভাজনের প্রকারভেদ

জীবদেহে তিন রকমের কোশ বিভাজন দেখা যায়, যথা - অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস এবং মিয়োসিস । অ্যামাইটোসিস হল এক ধরনের প্রত্যক্ষ বা সরাসরি নিউক্লিয়াস বিভাজন । এই প্রক্রিয়ায় মাতৃ নিউক্লিয়াসটির মাঝ বরাবর খাঁজ সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য নিউক্লিয়াসের সৃষ্টি হয়। আবার এই অপত্য ...

কোশ বিভাজন ও কোশ বিভাজনের তাৎপর্য

আজ থেকে প্রায় ২৬০ কোটি বছর আগের ঘটনা । পৃথিবীতে জন্ম নিল প্রথম জীব । পৃথিবীর বুকে জাগল প্রাণের স্পন্দন । প্রথম সৃষ্টি হওয়া সেই জীব না ছিল উদ্ভিদ না কোন প্রাণী । জেলির মতো থকথকে খানিকটা প্রোটোপ্লাজম নিয়ে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতিবিহীন সেই জীবের দেহ গড়ে ...