জিভ, ত্বক ও নাসিকা

Submitted by arpita pramanik on Mon, 12/03/2012 - 21:27

জিভ, ত্বক ও নাসিকা (Tongue, Skin and Nose)

জিহ্বা বা জিভ (Tongue)

জিহ্বার সাহায্যে আমরা প্রধানত স্বাদ গ্রহন করি । এইজন্য জিহ্বাকে স্বাদেন্দ্রিয় [Organ of taste] বলে । জিহ্বার সাহায্যে স্বাদ ছাড়াও ঠান্ডা, গরম, চাপ এবং স্পর্শ অনূভব করা যায় । 

অবস্থান [Location]:- মানুষের মুখবিবরের মেঝেয় মাংসল জিহ্বাটি অবস্থিত ।

গঠন [Structure]:- জিহ্বাটি ঐচ্ছিক পেশি দ্বারা গঠিত । জিহ্বার উপরের পৃষ্ঠ কর্কশ এবং নীচের পৃষ্ঠ অর্থাৎ তলদেশ মসৃন । জিহ্বাটি একটি পাতলা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি বা মিউকাস পর্দা [mucous membrane] দ্বারা আবৃত ।

স্বাদকোরক:- জিহ্বার উপরিভাগে স্বাদ গ্রহণে সহায়ককারী যে অসংখ্য ছোটো ছোটো গুটিকা থাকে তাদের স্বাদকোরক বলে । আমাদের জিহ্বায় প্রায় 10,000 স্বাদকোরক থাকে । স্বাদ কোরকের মধ্যে স্বাদগ্রাহী কোষ এবং ধারক কোষ থাকে । জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টি [sweet] এবং পশ্চাদভাগে তিক্ত বা তেতো [bitter] স্বাদ-গ্রাহক থাকে, অগ্রভাগের কিছু ওপরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা নোনতা [salty] এবং দু'পাশে অম্ল [sour] স্বাদ-গ্রাহক স্থান অবস্থিত ।

কাজ [Functions of tongue]:- জিহ্বার বিশেষ কাজগুলি হল: (১) স্বাদ গ্রহণ,   (২) কথা বলা,   (৩) খাদ্য চর্বণ এবং     (৪) খাদ্য গলাধঃকরণে সহায়তা করা ।

জিহ্বায় কীভাবে স্বাদ গৃহীত হয় ?  জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টি, পশ্চাদভাগে তিক্ত, অগ্রভাগের কিছু ওপরে এবং মাঝখানে লবণাক্ত বা নোনতা এবং দু'পাশে অম্ল স্বাদ-গ্রাহক স্থান অবস্থিত । কোনও খাদ্যবস্তু যখন নির্দিষ্ট স্বাদকোরকের সংস্পর্শে আসে তখন স্বাদকোরকগুলি উদ্দীপিত হয় । ওই উদ্দীপনা স্বাদ কোরক থেকে নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে [গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল স্নায়ু] মস্তিষ্কের স্বাদ কেন্দ্রে পৌঁছয় । ফলে আমরা স্বাদটি অনুভব করি ।  

লালারসের সঙ্গে খাবারের মিশ্রণ → জিভের বিভিন্ন স্বাদকোরকের সঙ্গে লালারসে সিক্ত খাবারের সংস্পর্শ → স্বাদগ্রাহক কোষগুলিতে উদ্দীপনার সৃষ্টি → গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল স্নায়ুপথে উদ্দীপনার মস্তিষ্কের স্বাদ-কেন্দ্রে পৌঁছয় → বিভিন্ন স্বাদের অনুভব

ত্বক বা চর্ম (Skin)

সংজ্ঞা:-  যে আচ্ছাদন আমাদের দেহের কোমল অংশকে ঢেকে রাখে এবং চাপ, তাপ, স্পর্শ, বেদনা ইত্যাদি অনুভব করতে সাহায্য করে, তাকে ত্বক বা চর্ম বলে ।

কাজ:-  ত্বকের সাহায্যে আমরা স্পর্শ অনুভব করি, তাই ত্বককে স্পর্শেন্দ্রিয় [organ of touch] বলে । স্পর্শ ছাড়াও চাপ, তাপ, ঠান্ডা, ব্যথা ইত্যাদি অনুভূতিগুলিও ত্বকের সাহায্যে অনুভব করা যায় ।  ত্বকে উদ্দীপনা গ্রহণের জন্য অসংখ্য রিসেপ্টর [receptor] বা গ্রাহক থাকে, বিভিন্ন সময়ে এরা চাপ-গ্রাহক, তাপ-গ্রাহক, স্পর্শ-গ্রাহক,  বেদনা-গ্রাহক প্রভৃতি হিসেবে কাজ করে । তাছাড়া স্পর্শের মাধ্যমে ত্বক বিভিন্ন বস্তু সনাক্তকরণে সাহায্য করে । 

নাসিকা বা নাক (Nose)

নাসিকা বা নাক হল আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয় ।

কাজ:- নাসা-গহ্বরের ছাদে অবস্থিত ঘ্রাণ-ঝিল্লি [Olfactory epithelium] ঘ্রাণগ্রাহক হিসেবে কাজ করে । ঘ্রাণ ঝিল্লিতে অবস্থিত বাইপোলার স্নায়ু কোষ বা অলফ্যাক্টরি কোষ ঘ্রাণ গ্রাহক হিসেবে কাজ করে । 

ঘ্রাণ [Smell]:- বহিরাগত কোনো রকম গন্ধ গ্যাসীয় মাধ্যমে নাসা-গহ্বরে প্রবেশ করলে নাসিকার অলফ্যাক্টরি অংশ থেকে নিঃসৃত গ্রন্থিরসে দ্রবীভূত হয়ে বাইপোলার স্নায়ুকোষগুলিকে উত্তেজিত করে । এই উদ্দীপনা তখন অলফ্যাক্টরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের ঘ্রাণ কেন্দ্রে প্রেরিত হয়, ফলে আমরা গন্ধটিকে অনুভব করতে পারি । 

*****

Related Items

উদ্ভিদ হরমোন - জিব্বেরেলিন

অক্সিনের মতো জিব্বেরেলিনও উদ্ভিদের একরকম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন । এটি একরকমের টারপিনয়েড জাতীয় নাইট্রোজেনবিহীন জৈব অম্ল । জিব্বেরেলিন প্রধানত কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে গঠিত । জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড । এরা বর্ণহীন ও গন্ধহীন ...

উদ্ভিদ হরমোন বা ফাইটোহরমোন

উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলা উদ্ভিদ-হরমোনের প্রধান উত্সস্থল । এছাড়া বীজপত্র, মুকুলিত পত্র, ভ্রূণ মুকুল, ভ্রূণমুকুলাবরণী অর্থাৎ কোলিওপটাইল, শস্য, ফল ইত্যাদিতে উদ্ভিদ হরমোন থাকে । উদ্ভিদ হরমোনগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ...

হরমোনের উৎপত্তিস্থল ও কর্মস্থল এবং সাধারণ কাজ

উদ্ভিদদেহে হরমোন ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডও মূলের অগ্রভাগে অবস্থিত তরুণ কোষের মধ্যে উত্পত্তি লাভ করে । প্রাণীদেহে হরমোন অনাল গ্রন্থি বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির কোষে উত্পন্ন হয় । সুতরাং উদ্ভিদদেহে ভাজক কলা এবং প্রাণীদেহে অনাল গ্রন্থি হরমোনের প্রধান উত্সস্থল ...

হরমোনের সাধারণ ধারণা - সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

জীবদেহের যে জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সারা দেহে রাসায়নিক সমন্বয়সাধন করে তাকেই হরমোন বলা হয় । হরমোন সাধারণত বিশেষ ধরনের কোষ, কলা এবং অন্তঃক্ষরা বা অনালগ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয় । ওই জৈব-রাসায়নিক পদার্থ সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে এবং উদ্ভিদের ...

কর্ণ বা কান (Ear)

যে জ্ঞানেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মানুষ বহিরাগত শব্দ শোনে তাকে কর্ণ বা কান বলে । মানুষের কানের প্রধান তিনটি অংশ হল - বহিঃকর্ণ, মধ্য কর্ণ এবং অন্তঃকর্ণ । মানুষের বহিঃকর্ণটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা- কর্ণছত্র, কর্ণকুহর, এবং কর্ণপটহ । কর্ণছত্র দুটি মাথার দু'পাশে অবস্থিত এবং অনৈচ্ছিক ...