প্রাণীদেহে সংবহন

Submitted by arpita pramanik on Sat, 04/20/2013 - 20:43

প্রাণীদেহে সংবহন (Circulation in Animals)

 

প্রাণীদেহে সংবহন তন্ত্র দুই প্রকার যথা-  ১৷ রক্ত সংবহন তন্ত্র , ২৷ লসিকা সংবহন তন্ত্র

 রক্ত সংবহন তন্ত্র - রক্ত সংবহনে সহায়ক যন্ত্র গুলি মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠন করে তাকে রক্ত সংবহন তন্ত্র বলে।

 

রক্ত সংবহন তন্ত্রের প্রকারভেদ

প্রাণীদেহে প্রধানত দু রকমের রক্ত সংবহন তন্ত্র দেখা যায়। যথা ১৷ মুক্ত সংবহন তন্ত্র ( open vascular system ) , ২৷ বদ্ধ সংবহন তন্ত্র ( closed vascular system )

১৷ মুক্ত সংবহন তন্ত্র - যে সংবহন তন্ত্রে রক্ত কেবল মাত্র রক্ত বাহের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে দেহ গহ্বর বা সেলম নামে ফাঁকা স্থানে মুক্ত হয়ে থাকে তাকে মুক্ত সংবহন তন্ত্র বলে । যেমন চিংড়ি মাছের সংবহন তন্ত্র ।

২৷ বদ্ধ সংবহন তন্ত্র - যে সংবহন তন্ত্রে রক্ত সবসময় রক্তবাহে এবং হৃৎপিণ্ডের মধ্যে আবদ্ধ ভাবে সংবাহিত হয় কিন্তু কখনই দেহ গহ্বরে মুক্ত হয় না সেই সংবহন তন্ত্রকে বদ্ধ সংবহন তন্ত্র বলে । যেমন কেঁচো, মানুষের সংবহন তন্ত্র ।

সিস্টেমিক সংবহন - এই সংবহন হৃৎপিণ্ড এবং দেহকোষের মধ্যে ঘটে, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনীর মাধ্যমে দেহকোষের জালকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহকোষের জালক থেকে শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে ।

পোর্টাল সংবহন - এই রকম সংবহনে হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত বিভিন্ন ধমনীর মাধ্যমে পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা ও অন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে । ঐ সব অংসের জালক থেকে রক্ত পোর্টাল শিরার মাধ্যমে যকৃতে অবস্থিত জালকে আসে। যকৃৎ থেকে রক্ত হেপাটিক শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে।

 

রক্ত সংবহন তন্ত্রের বিভিন্ন উপাদান গুলি পারস্পরিক সম্পর্ক কি ?

রক্ত সংবহন তন্ত্রের উপাদান গুলি হল

১৷ হৃৎপিণ্ড

২৷ রক্ত

৩৷ রক্তবাহ ধমনী, শিরা ও জালক ।

নিম্নে রক্ত সংবহন তন্ত্রের উপাদান গুলির মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা করা হল ।

১৷ হৃৎপিণ্ড অনবরত নির্দিষ্ট ছন্দময় গতিতে পাম্প করে রক্তকে সারা দেহে সঞ্চালিত করে ।

২৷ হৃৎপিণ্ডের সংকোচনের সময় রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনীর মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে ।

৩৷ হৃৎপিণ্ড যখন প্রসারিত হয় তখন দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে।

৪৷ ধমনী ও শিরা পরস্পরের মধ্যে জালকের সাহায্যে সংযোগ স্থাপন করে ।

সুতরাং প্রাণীদেহের রক্ত সংবহনে হৃৎপিণ্ড, শিরা, ধমনী, জালক এবং রক্ত সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে ।

 

মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্ত প্রবাহের কারণ কি ?

মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে প্রধান সংবহন মাধ্যম হল রক্ত। হৃৎপিণ্ড পাম্পের ন্যায় কাজ করে দেহের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ ঘটায়। রক্ত প্রবাহের উদ্দেশ্য গুলি হল

১৷ প্রাণীদেহে পৌষ্টিক নালি থেকে শোষিত তরল খাদ্য উপাদান রক্তের মাধ্যমে সজীব কোষে পৌঁছায় ।

২৷ রক্তের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গ থেকে অক্সিজেন প্রতিটি কলা কোষে পৌঁছায় এবং প্রতিটি কলা কোষে উৎপন্ন কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তের মাধ্যমে শ্বাস অঙ্গে পৌঁছায় ।

৩৷ বিভিন্ন অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হরমোন রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষে পৌঁছায় ।

৪৷ কোষে বিপাক জাত বর্জ্য পদার্থ রক্তের মাধ্যমে রেচন অঙ্গে পৌঁছায় ।

৫৷ রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।

 

ধমনী কেটে গেলে ফিনকি দিয়ে কিন্তু শিরা কেটে গেলে গলগল করে রক্ত বের হয় কেন ?

ধমনীর প্রাচীর পুরু ও গহ্বর ছোটো হয় এবং ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত বেগে প্রবাহিত হয়। এর ফলে ধমনীতে রক্তের চাপ খুব বেশি থাকে তাই ধমনী কেটে গেলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় ।

অপর দিকে শিরার প্রাচীর পাতলা ও গহ্বর বড় হয় এবং শিরার মধ্যে দিয়ে রক্ত ধীরে প্রবাহিত হয়। এর ফলে শিরাতে রক্তচাপ কম থাকে তাই শিরা কেটে গেলে গলগল করে। রক্ত বের হয় ।

 

রক্তচাপ কাকে বলে ? ইহা কয় প্রকার ও কি কি ? এক জন সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে রক্ত চাপ কত ? রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্রটির নাম কি ? মানব দেহের কোন ধমনীতে রক্ত চাপ মাপা হয় ?

রক্তচাপ  রক্তবাহের মধ্যে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তবাহের প্রাচীরে যে পার্শ্বীয় চাপ দেয় তাকে রক্তচাপ বলে ।

রক্তচাপ দুই রকমের   ১৷ সিস্টোলিক চাপ   ২৷ ডায়াস্টোলিক চাপ

১৷ সিস্টোলিক চাপ  হৃৎপিণ্ড যখন সংকুচিত অবস্থায় বা সিস্টোল অবস্থায় থাকে তখন যে সর্বাধিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে। চাপ 120-130 ।

২৷ ডায়াস্টোলিক চাপ  হৃৎপিণ্ড যখন শিথিল অবস্থায় থাকে অর্থাৎ ডায়াস্টোল অবস্থায় থাকে তখন যে চাপসৃষ্টি করে তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে। চাপ 70-90 ।

রক্ত চাপ মাপক যন্ত্রটি হল স্ফিগমোম্যানোমিটার (Sphgmomanometer)। ব্রাকিয়াল ধমনীতে (Brachial Artery) মানুষের রক্ত চাপ নির্ণয় করা হয় ।

*****

Related Items

উদ্ভিদ পুষ্টি (Plant Nutrition)

স্বভোজী পুষ্টি- পরভোজী পুষ্টি, পরভোজী, বিভিন্ন প্রকার পরভোজী উদ্ভিদ, মৃতজীবী, পরজীবী, পূর্ণ পরজীবী, আংশিক পরজীবী, মিথোজীবী, ব্যতিহারী , সহভোক্তা , পতঙ্গভুক । যে পুষ্টি প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্ন ধরনের জীব পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে, তাকে মিথোজীবীয় পুষ্টি বলে।

জীবদেহে জলের প্রয়োজনীয়তা

জীবদেহে জলের প্রয়োজনীয়তা, উদ্ভিদ দেহে জলের প্রয়োজনীয়তা, প্রাণীদেহে জলের প্রয়োজনীয়তা, জীবন ধারনের জন্য জল একান্ত প্রয়োজন। জীবদেহের ওজনের 60%-90% জলের প্রয়োজন। জল খাদ্য নয় কেন? জলের কোন তাপন মূল্য নেই বলে জলকে খাদ্য বলা হয় না।

ভিটামিনের কাজ ও গুরুত্ব

যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্য অতি অল্প পরিমানে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধে শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে। ভিটামিনের বৈশিষ্ট্য, ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা, নিম্নলিখিত রোগ গুলি কোন ভিটামিনের অভাবে হয়।...

ফ্যাটের কাজ ও গুরুত্ব

যে জৈব যৌগ কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত এবং যার মধ্যে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন 2:1 অনুপাতে থাকে না, তাদের ফ্যাট জাতীয় খাদ্য বলে। ফ্যাটের বৈশিষ্ট্য, ফ্যাটের উৎস, ফ্যাটের গুরুত্ব, অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড, লিনোলেনিক অ্যাসিড, লিনোলেয়িক অ্যাসিড।...

প্রোটিনের কাজ ও গুরুত্ব

প্রোটিন, প্রোটিনের উৎস, প্রোটিনের কাজ ও গুরুত্ব, প্রোটিনের শ্রেণীবিভাগ, অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিনের অভাবজনিত রোগ, প্রোটিনের উৎস- বিভিন্ন ধরনের ডাল, সয়াবিন, বীন, গম ইত্যাদি মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের সাদা অংশ, ছানা ইত্যাদি ...