ইনসুলিন (Insulin)

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/08/2012 - 10:06

ইনসুলিন (Insulin)

অগ্ন্যাশয়ে অবস্থিত আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয় । অগ্ন্যাশয় অন্তঃক্ষরা ও বহিঃক্ষরা উভয় গ্রন্থির সংমিশ্রণে গঠিত হওয়ায় অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি [mixed gland] বলে ।

গ্লুকাগন হরমোন :- অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন হরমোন নিঃসৃত হয় ।

সোমাটোস্টোটিন হরমোন :- অগ্ন্যাশয়ের ডেল্টা কোষ থেকে সোমাটোস্টোটিন হরমোন নিঃসৃত হয় ।

ইনসুলিনের কাজ [Functions of Insulin]:- ইনসুলিনকে অ্যান্টিডায়াবেটিক হরমোন বলা হয় । এটি মানবদেহে নিম্নলিখিত কাজ গুলি সম্পন্ন করে, যেমন:

(ক)  ইনসুলিনের কলা-কোষে গ্লুকোজ বিশোষণ বৃদ্ধি করে অর্থাৎ কোষে গ্লুকোজ গ্রহণে সহায়তা করে

(খ)  ইনসুলিন কলা-কোষে গ্লুকোজ দহনে সহায়তা করে, বিশেষ করে গ্লুকোজকে পাইরুভিক অ্যাসিডে পরিণত করতে সাহায্য করে ।

(গ)  ইনসুলিন যকৃৎ ও পেশি কোষে গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে জমা রাখে । গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেন সংশ্লেষকে গ্লাইকোজেনেসিস বলে ।

(ঘ)  ইনসুলিন প্রোটিন, ফ্যাট, ইত্যাদি থেকে গ্লুকোজ উত্পাদনে বাধা দেয় । যকৃতে প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে গ্লুকোজ সৃষ্টিকে নিওগ্লুকোজেনেসিস বা গ্লুকোনিওজেনেসিস বলে ।

(ঙ)  রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিশেষ করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক করা হল ইনসুলিনের প্রধান কাজ ।

স্বল্প পরিমাণ ইনসুলিন ক্ষরণের ফল:- ইনসুলিনের ক্ষরণ কম হলে কলা-কোষে গ্লুকোজের দহন হ্রাস পায়, অপরপক্ষে যকৃতে গ্লাইকোজেনেসিস প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়ে বা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ (প্রতি 100 ml রক্তে শর্করার স্বাভাবিক পরিমাণ 80-120 mg) বেড়ে যায় অর্থাৎ হাইপারগ্লাইসিমিয়া [hyperglycaemia] হয় । রক্তে শর্করার পরিমাণ 180 mg হলে মূত্রে শর্করা নির্গত হয় । মূত্রে শর্করা নির্গত হওয়াকে গ্লাইকোসুরিয়া [glycosuria] বলে ।  রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধিজনিত রোগকে ডায়াবেটিস মেলিটাস [Diabetes mellitus] বা মধুমেহ বলে । 

রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে হরমোনের ভুমিকা (Role of hormone to maintain blood sugar level in blood)

রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে ইনসুলিন এবং গ্লুকাগন নামে হরমোন দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহন করে । রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ইনসুলিন রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে পরিণত করে (গ্লাইকোজেনেসিস) যকৃতে সঞ্চয় করে, অপরপক্ষে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলে গ্লুকাগন যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেনকে পুনরায় গ্লুকোজে বিশ্লিষ্ট করে (গ্লাইকোজেনোলাইসিস) রক্তস্রোতে পাঠায়, ফলে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে ।

ইনসুলিন হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ:-  ডায়াবেটিস রোগীদের রক্ত-শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক সময় চামড়ার নীচে কৃত্রিম ইনসুলিন ইনজেক্ট করা হয় ।

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...