সুলতানি যুগের স্থাপত্য

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 10/03/2014 - 14:10

সুলতানি যুগের স্থাপত্য (Architecture during Sultanate Period)

দিল্লির কুতুবমিনার (Qutb Minar) হল এয়োদশ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন । সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল । কুতুবমিনারের নির্মাণ কার্য শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আইবক এবং সম্পূর্ণ হয় ইলতুৎমিসের আমলে । খলজি আমলে বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ হয় । নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগায় নির্মিত আলাউদ্দিনের জামাতখানা মসজিদ ও আলাই দরওয়াজা হিন্দু শিল্পরীতির ওপর মুসলিম শিল্পরীতির প্রাধান্যের প্রতীক । তুঘলকি শিল্পরীতির মধ্যে আমরা আগের আমলের বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য ও অলংকরণ দেখতে পাই না । লোদি ও সৈয়দ আমলে স্থাপত্যের রীতির উন্নতির চেষ্টা করা হলেও তা ফলবতী হয় নি । সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের পরও আকবরের উত্থানের আগে একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য নিদর্শন হল সাসারামে শেরশাহের সমাধি ।

প্রাদেশিক স্থাপত্য : প্রাদেশিক স্থাপত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রেও ভারতীয় ও ইসলামিক শিল্পরীতির সংমিশ্রণ দেখা যায় । তবে প্রাদেশিক শিল্পের ক্ষেত্রে স্থানীয় শিল্পশৈলী ও মসজিদ নির্মাণের মালমসলার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । এই কথাটি বিশেষভাবে বাংলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । এখানে পাথরের বদলে ইটের ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল বলে মসজিদগুলি আকৃতিতে ছোট হত । তবে ১৩৬৮ খ্রীষ্টাব্দে সিকান্দার নির্মিত পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদের বিশাল আকৃতি, সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে । এখানকার অন্যান্য মসজিদের মধ্যে হুসেন শাহের আমলে ওয়ালি মহম্মদ নির্মিত ছোট সোনা মসজিদ, নুসরত শাহ নির্মিত বড় সোনা মসজিদ ও তাঁরই আমলে নির্মিত কদম রসুল খুব বিখ্যাত । ১৪০০ থেকে ১৪৭৮ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে জৌনপুরে যে শিল্পরীতি গড়ে উঠেছিল, তাতে হিন্দু প্রভাব স্পষ্ট । এখানকার অটালদেবী মসজিদ জৌনপুর শিল্পরীতির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন । গুজরাটের রাজধানী আহমদাবাদে যে সব মসজিদ ও শিল্প নিদর্শন পাওয়া যায়, তাতে ভারতীয় শিল্পরীতির প্রাধান্য দেখা যায় । অবশ্য ইসলামের প্রয়োজনে ভারতীয় শিল্পরীতি কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য রদবদল করা হয়েছিল । মান্ডুর মসজিদগুলি -তে মুসলিম শিল্পরীতির প্রাধান্য দেখা যায় । এখনকার জাহাজ মহল, হিন্দোলা মহল ও জামি মসজিদ বিখ্যাত । দাক্ষিণাত্যে বাহমনি স্থাপত্য ভারতীয়, তুর্কি, মিশরীয় ও পারস্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল । গুলবর্গার জামি মসজিদ, দৌলতাবাদের চাঁদ মিনার ও বিদরে মামুদ গাওয়ান নির্মিত মহাবিদ্যালয়ে পারস্য রীতির ছাপ স্পষ্ট । তবে এখানেও হিন্দু শিল্পরীতির প্রভাব এড়ানো যায়নি । তবে আদিল শাহি সুলতানদের নির্মিত মসজিদে দাক্ষিণাত্য শিল্পরীতির ছাপ প্রকাশ পেয়েছে । দাক্ষিণাত্যে বিজয় নগর রাজ্যে হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় । রাজা কৃষ্ণদেব রায়ের তৈরি বিট্টলনাথের মন্দির বিখ্যাত । প্রসিদ্ধ সমালোচক ফার্গুসন এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন । হিন্দু স্থাপত্যের অন্যান্য নিদর্শন হল রাজপুতানায় রাজা কুম্ভের স্তম্ভ এবং ওড়িশায় পুরীর মন্দির ও কোনারকের সূর্য মন্দির ।

*****

Related Items

আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - দক্ষিণ ভারত

বাতাপির চালুক্য বংশ - উত্তর মহারাষ্ট্র ও বিদর্ভে বাকাটকদের পতনের পর চালুক্য বংশের উদ্ভব হয় । রাষ্ট্রকূট বংশ - চালুক্যদের পতনের পর রাষ্ট্রকূটদের উদ্ভব হয় । কল্যাণীর চালুক্য বংশ - রাষ্ট্রকূট বংশের শেষ রাজা দ্বিতীয় কর্ককে, কাঞ্চীর পল্লব বংশ- সাতবাহন বংশের পতনের পর কৃষ্ণা থেকে ...

বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - বাংলা

শশাঙ্ক ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর গৌড়রাজ শশাঙ্কের আমলে বাংলা প্রথম সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে । পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সুযোগ্য পুত্র ধর্মপাল ...

আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - পশ্চিম ও উত্তর ভারত

বলভীর মৈত্রিক বংশ, যশোধর্মণ, কনৌজের উত্থান - মৌখরী বংশ, পুষ্যভূতি বংশ ও হর্ষবর্ধন, প্রতিহার বংশ, হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর প্রতিহার বংশ উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রভাব শালী হয়ে পড়ে। প্রতিহার বা গুর্জর প্রতিহাররা ছিল রাজপুত জাতির একটি শাখা । এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ...

গুপ্ত সাম্রাজ্য (Gupta Dynasty)

কুষাণ ও সাতবাহন উভয় সাম্রাজ্যের বেশ কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হলেও অয়তনের দিক থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্য মৌর্য সাম্রাজের তুলনায় ছোটো ছিল । গুপ্ত সাম্রাজ্য প্রধানত বিহার ও উত্তর প্রদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল । বিহার অপেক্ষা উত্তর প্রদেশই ছিল এই সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র এবং গোড়ার ...

সাতবাহন সাম্রাজ্য (Satabahanas dynasty)

দাক্ষিণাত্য ও মধ্য ভারতে মৌর্যদের প্রভাব খুবই কম ছিল । অশোকের মৃত্যুর পর দাক্ষিণাত্যে মৌর্যদের আধিপত্য শেষ হয়ে যায় । কিন্তু যাতায়াতের অসুবিধা ও এখানকার অনুন্নত অর্থনীতি গোড়ার দিকে এই অঞ্চলকে বিদেশি আক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে । ফলে খ্রিস্ট পূর্ব প্রথম শতক থেকে সাতবাহন ...