মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 10/30/2014 - 10:33

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য :

বহির্বাণিজ্য : বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত বহুমূল্য ধনরত্ন, কাঁচা রেশম, ঘোড়া, হাতির দাঁত, প্রবাল, সুগন্ধি দ্রব্য ইত্যাদি । উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে দুটি স্থলপথ ধরে বাণিজ্য চলত । একটি পথ ছিল লাহোর থেকে কাবুল পর্যন্ত, অন্যটি ছিল মুলতান থেকে কান্দাহার পর্যন্ত । তবে দুটি পথেই নিরাপত্তার অভাব ছিল বলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হত । জলপথে ভারতের উভয় উপকূলে অসংখ্য বন্দর ছিল । এগুলির মধ্যে সিন্ধুতে লাহোরি বন্দর, গুজরাটে সুরাট, ব্রোচ ও কাম্বে, মালাবার উপকূলে গোয়া, ভাটকল, কালিকট ও কোচিন; কোঙ্কন উপকূলে চাউল ও দাভোল, করমণ্ডল উপকূলে নেগাপত্তম, মসুলিপত্তম ইত্যাদি এবং বাংলার শ্রীপুর, সোনার গাঁও ও চট্টগ্রাম ছিল বিখ্যাত । এইসব বন্দর থেকে পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও চিনের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য চলত । এইসব বন্দর থেকে লোহিত সাগরে জেড্ডা, মোখা, পারস্য উপসাগরে হরমুজ, মাস্কট, আফ্রিকায় মোম্বাসা প্রভৃতি আঞ্চলে ভারতীয় সামগ্রী রপ্তানি হত । অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালাক্কা, পেগু, তেনাসেরিম, সিংহল আরাকান, কম্বোডিয়া, শ্যাম ও দূর পাচ্যের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল । সামুদ্রিক বাণিজ্যে নিযুক্ত ভারতীয় বণিকদের আর্থিক সাচ্ছল্য খুব ভালো ছিল ।

বৈদেশিক বাণিজ্যের ভারসাম্য ভারতের অনুকুলে ছিল । অর্থাৎ, ভারত যা আমদানি করত, তার চেয়ে বেশী রপ্তানি করত । মুঘল আমলে ভারতীয় দ্রব্যের যথেষ্ট চাহিদা ছিল বিদেশে । কিন্তু ভারতে ইউরোপীয় দ্রব্যের চাহিদা ছিল না । ফলে ভারতীয় দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময় হত সোনা ও রূপার মাধ্যমে । উইলিয়াম হকিন্সের ভাষ্য থেকে জানা যায় লোহিত সাগরে পণ্য বিক্রি করে একটি ভারতীয় জাহাজ দু-তিন লক্ষ্য পাউন্ড মূল্যের সোনা নিয়ে আসত । ব্যবসাবাণিজ্য লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু সরকারী ঔদাসীন্য ছিল চোখে পড়ার মতো । সরকার কৃষি ও ভুমি রাজস্ব নিয়ে মাথা ঘামালেও অন্তর্বাণিজ্য বা বহির্বাণিজ্য নিয়ে কোন ভাবনা চিন্তা করত না । আসলে ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে মুঘল সরকারের কোন সুস্পষ্ট নীতি ছিল না ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ...

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...