মুঘল যুগে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকদের কার্যকলাপ

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 10/31/2014 - 09:15

মুঘল যুগে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকদের কার্যকলাপ :

ইংরেজ বণিকদের কার্যকলাপ : ১৬০০ খ্রীষ্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হওয়ার পর ইংরেজরাও প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে উদগ্রীব হয় । ওলন্দাজদের মতো তারাও প্রথমে পূর্ব ভারতীর দ্বীপপুঞ্জের মশলার ব্যবসায়ে অংশগ্রহণে সচেষ্ট ছিল । কিন্তু ওলন্দাজদের প্রচন্ড বিরোধিতার ফলে তারা ভারতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে । ১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের চিঠি নিয়ে ক্যাপ্টেন হকিন্স জাহাঙ্গিরের দরবারে হাজির হন । ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দে টমাস বেস্ট তিনটি জাহাজ নিয়ে ভারতে এলে ব্যবসা করার অনুমতি পান । এরপর ১৬১৫ খ্রীষ্টাব্দে স্যার টমাস রো ভারতে আসেন । জাহাঙ্গির তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা করেন । তিনি তাদের সুরাটে কুঠি স্থাপনের অনুমতি দেন । তাদের ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের জন্য তিনি আমদানি শুল্ক তুলে দেন । সুরাট ছাড়া আগ্রা, আহমদাবাদ ও ব্রোচেও ইংরেজরা কুঠি নির্মাণ করেন । এরপর ১৬৬৮ খ্রীষ্টাব্দে ইংরেজরাজ দ্বিতীয় চার্লস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বোম্বাই হস্তান্তরিত করেন এবং সুরাটের পরিবর্তে বোম্বাই ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত হয় । ভারতে ইংরেজরা পর্তুগীজ ও ওলন্দাজ বণিকদের প্রচন্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হয় । পশ্চিম উপকূল ছাড়া ইংরেজরা করমণ্ডল উপকূলে মসুলিপত্তম ও মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট ডেভিডে কুঠি নির্মাণ করেন । বাংলার হুগলি এবং ওড়িশার বালেশ্বরেও তারা কুঠি নির্মাণ করেন । এখানে ১৬৫১ খ্রীষ্টাব্দে সুজা ও ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে শায়েস্তা খানের কাছ থেকে তারা বাণিজ্যিক সুযোগসুবিধা আদায় করে । ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দে তারা কলকাতায় কুঠি স্থাপণ করেন । ইংরেজরা সুরাট থেকে নীল ও কাপড়, করমণ্ডল ও বাংলা থেকে কাপড় ও শুধু বাংলা থেকেই চিনি, কাঁচা রেশম ও সোরা আমদানি করত ।

ফরাসি বণিকদের কার্যকলাপ : ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে সব শেষে ভারতে আসেন ফরাসিরা । কোলবার্টের আগ্রহে ১৬৬৪ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠিত হয় । তারা ১৬৬৮ খ্রীষ্টাব্দে সুরাটে এবং ১৬৬৯ খ্রীষ্টাব্দে মসুলিপত্তমে কুঠি স্থাপন করেন । ১৬৭৩ খ্রীষ্টাব্দে পণ্ডিচেরি তাদের দখলে আসে । ১৬৯০-৯২ খ্রীষ্টাব্দে শায়েস্তা খান তাদের চন্দননগরে কুঠি নির্মাণে অনুমতি দেন । ইংরেজ ও ওলন্দাজদের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ।

*****

Related Items

দ্বিতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধে ইঙ্গ ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান হয়নি । এদিকে কর্ণাটক ও হায়দরাবাদে ( নিজামের রাজ্য ) রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয় । নিজামের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর পুত্র নাসির জঙ্গ নিজাম পদে অভিষিক্ত হন । কিন্তু নিজামের নাতি মুজফফর জঙ্গও ওই পদের প্রত্যাশী ছিলেন । ...

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ

অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের খবর পেয়েও ফরাসি গভর্নর দুপ্লে ভারতে ইংরেজদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে কয়েকটি ফরাসি জাহাজ আক্রমণ করলে ইংরেজদের সঙ্গে ফরাসিদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । ...

দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা

১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্যের পতন সূচিত হয় এবং ভারতের ঐক্য বিনষ্ট হয় । দিকে দিকে আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব হয় । অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল না । মুঘলদের স্থলাভিষিক্ত করা হবে, তার কোন সুস্পষ্ট ছবি ফুটে না ...

ইউরোপীয় বণিক ও ভারতের শাসকশ্রেণি

ইউরোপীয় বণিকদের কার্যকলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মুঘল সম্রাটরা সাধারণভাবে ইউরোপীয় বণিকদের বিরোধিতা করতেন না, বরং যতদূর সম্ভব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিতেন । তাঁরা ইউরোপীয়দের প্রতি কোনো রকম বৈষম্যমূলক আচরণ করতেন না । তবে বিদেশি বণিকরা যাতে ...

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ...