মধ্যযুগের ঐতিহাসিক উপাদান

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 14:56

মধ্যযুগের ঐতিহাসিক উপাদান (Sources of Medieval Indian History) :

সুলতানি যুগ ও মুঘল যুগ মিলে মধ্যযুগ বলা হয় । মধ্যযুগে ইতিহাস গ্রন্থের অভাব নেই । সেজন্য মধ্যযুগে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান অপেক্ষা সাহিত্যিক উপাদান বেশি গুরুত্বপূর্ণ । সুলতানিযুগের ঐতিহাসিক উপাদান দু-ধরনের—  (i) সাহিত্যিক উপাদান ও  (ii) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ।

(i)  সাহিত্যিক উপাদান (The Literary Elements) আবার দুই ধরনের—

(ক) সমসাময়িক ইতিহাস গ্রন্থ (Contemporary Historical Literature) : ঐতিহাসিক গ্রন্থের মধ্যে মিনহাজ-উস-সিরাজের 'তবাকৎ-ই-নাসিরি' জিয়াউদ্দিন বরাউনির 'তারিখ-ই-ফিরুজশাহী' সামসউদ্দিন সিরাজ আফিকের 'তারিখ-ই-ফিরুজশাহী' প্রভৃতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । আমির খসরু, ইসামি প্রভৃতি ঐতিহাসিকের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে । 'সিকান্দার-বিন-ই-রসিদি', গোলাম হুসেন সালিম রচিত 'রিয়াজ-উস-সালাতিন' ইত্যাদি গ্রন্থ থেকে প্রাদেশিক ইতিহাস জানা যায় । এইসব গ্রন্থ থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি ও ধর্মজীবন সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায় ।

(খ) বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ (Accounts of Foreign Travelers) : সুলতানি আমলের পর্যটকদের মধ্যে ইবন বতুতা -র নাম উল্লেখযোগ্য । তাঁর বিবরণ থেকে সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের বহু তথ্য পাওয়া যায় । অন্যান্য পর্যটকদের মধ্যে মার্কো পোলো, নিকলো কন্টি, আবদুর রজ্জাক, নুনিজ পায়েজ প্রভৃতির নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ।       

(ii) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান (Archaeological Evidence) : সুলতানি আমলের ইতিহাস রচনায় প্রত্নতত্ত্বের গুরুত্ব কিছুটা কম হলেও কোনো কোনো অঞ্চলের যেমন বাংলা, বাহমনি, গুজরাট ইত্যাদির ইতিহাস রচনায় লিপি বিশেষ ভাবে সাহায্য করে । ইলতুৎমিস, বলবন, আলাউদ্দিন খলজি এবং বিশেষভাবে মহম্মদ-বিন-তুঘলকের মুদ্রা থেকে বহু তথ্য পাওয়া যায় । স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা সুলতানি আমলে সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার পরিচায়ক ।      

মুঘলযুগের ঐতিহাসিক উপাদান মূলত ইতিহাসগ্রন্থ; আর এই যুগের ইতিহাস গ্রন্থগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—

(১) সরকারি আনুকুল্য, উদ্দ্যোগে রচিত ইতিহাস : আকবরের সভাসদ আবুল ফজল রচিত 'আকবর নামা'আইন-ই-আকবরি' এই শ্রেণিতে পড়ে ।  

(২) নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক রচনা : নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের মধ্যে খাজা নিজামউদ্দিন আহমদ, বদাউনি, ফেরিস্তা, আবদুল, হামিদ লাহোরি, কাফি খান প্রভৃতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

(৩) আত্মজীবনীমূলক রচনা : জীবনীমূলক রচনার মধ্যে বাবরের 'তুজুক-ই-বাবরি' জাহাঙ্গিরের 'তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি' ও গুলবদন বেগমের 'হুমায়ন নামা' উল্লেখযোগ্য । বৈদেশিক পর্যটকদের মধ্যে রালফ ফিচ, বার্নিয়ের, ট্যাভারনিয়ে, মানুচি, স্যার টমাস রো প্রভৃতির বিবরণ থেকে ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপাদান সংগৃহিত হয় ।        

*****

Related Items

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...

সুলতানি ও মুঘল আমলের চিত্রকলা

একটি সময় ছিল যখন মনে করা হত সুলতানি আমলে চিত্রকলার কোনো চর্চা হত না । ইসলামে ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল । বর্তমানে এই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে । আসলে ভারতে ইসলামের আর্বিভাবের ফলে যে সমন্বয়ী প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল, তা ভারতের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে ...

মুঘল যুগের স্থাপত্য

স্থাপত্য ও চিত্রকলার ইতিহাসে মুঘল যুগের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । নির্মাতা হিসাবে মুঘল সম্রাটদের খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া । এই যুগের স্থাপত্য ভারতীয় ও পারস্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল । মুঘল স্থাপত্যরীতির সুচনা হয় আকবরের সময়ে ...

সুলতানি যুগের স্থাপত্য

দিল্লির কুতুবমিনার (Qutb Minar) হল এয়োদশ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন । সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল । কুতুবমিনারের নির্মাণ কার্য শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আইবক এবং সম্পূর্ণ হয় ইলতুৎমিসের আমলে । ...

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ :

ফার্গুসনের মতে, সুলতানি স্থাপত্যের প্রকৃতি ছিল ইন্দো-স্যারাসিনিক (Indo-Saracenic) বা পাঠান । আবার হ্যাভেলের মতে, এই শিল্পরীতির ‘দেহ ও আত্মা’ ছিল ভারতীয় । আসলে সুলতানি যুগের স্থাপত্য প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরী