Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 10:04

প্রস্তর যুগ (Stone Age) :

ভারতে প্রথম কবে মানুষ বসবাস শুরু করে, সঠিকভাবে তা বলা যায় না । মধ্যপ্রদেশের হোসংগাবাদ শহরের নিকটবর্তী হাথনোরা গ্রামের কাছে ভারতের প্রাচীনতম মানুষের নিদর্শনটি পাওয়া গেছে । এর সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় নি । অনুমান করা হয়েছে এর বয়স বড়োজোর ৫ লক্ষ বছর হবে । প্রাক্‌ ঐতিহাসিক যুগের কোনো লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না । কারণ তখন মানুষ লিখতে পড়তে জানত না । একমাত্র তাদের ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রশস্ত্র থেকে তাদের কথা জানতে পারা যায় । তখন মানুষ পাথরের সাহায্যে যন্ত্রপাতি তৈরি করত বলে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই যুগকে ‘প্রস্তর যুগ’ (Stone Age) বলে অভিহিত করেছেন । প্রস্তর যুগকে আবার তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে ,যথা- (১) পুরাপ্রস্তর যুগ (Palaeolithic Age বা  Old Stone Age)(২) মধ্যপ্রস্তর যুগ (Mesolithic Age বা Middle Stone Age), ও  (৩) নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age বা New Stone Age) ।

(১) পুরাপ্রস্তর যুগ (Palaeolithic Age বা Old Stone Age) : পুরাপ্রস্তর যুগের বিবর্তন দীর্ঘকাল জুড়ে চলেছিল । আনুমানিক ১০,০০০ বছর আগে, অর্থাৎ, ৮০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পুরাপ্রস্তর যুগ শেষ হয় । এ সময় মানুষ চাষাবাদ করতে জানত না । তারা ছিল যাযাবর; ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াত । গাছের ফল ও পশুর মাংস ছিল তাদের প্রধান খাদ্য । এ সময় মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী । চাষবাস করে ফসল ফলাতে বা উৎপাদন করতে জানত না । পশু শিকারের জন্য তারা নানা ধরনের পাথরের অস্ত্র ব্যবহার করত । গঙ্গা, যমুনা ও সিন্ধু উপত্যকার সমভূমি বাদ দিলে সারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে এগুলির নিদর্শন পাওয়া গেছে । এগুলির মধ্যে হাত কুঠার ছিল সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । পশ্চিম পাঞ্জাবের সোয়ান নদীর অববাহিকায় হাত কুঠারের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

(২) মধ্যপ্রস্তর যুগ (Mesolithic Age বা Middle Stone Age) : ভারতে মধ্যপ্রস্তর যুগ আনুমানিক ৮০০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৪০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল । তবে ভারতের বাইরে অন্য অনেক জায়গায় এই যুগ অনুপস্থিত । সেইসব জায়গায় পুরাপ্রস্তরের পর সরাসরি নব্যপ্রস্তর যুগ শুরু হয় । এই সময়ও মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী, খাদ্য উৎপাদক নয় । কারণ তখনও পর্যন্ত মানুষ চাষ-আবাদ করতে শেখেনি । তবে পাথরের অস্ত্রগুলি এই সময় আয়তনে ছোটো হয়ে যায় । এই সময়ের অস্ত্রগুলিকে মাইক্রোলিথ (Microlith) বলা হয়; অর্থাৎ, ছোটো, শক্ত ও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ত্রিকোণাকার । মৃৎশিল্পে ও চিত্রশিল্পেও মানুষ বেশ পটু হয়ে উঠে । মধ্যপ্রদেশের ভিমবেটকার গুহাচিত্র এ সময়ের উল্লেখ্য চিত্রশিল্পের নিদর্শন।

(৩) নব্যপ্রস্তর যুগ (Neolithic Age বা New Stone Age) :

Neolithic age আঞ্চলিক বৈষম্যগুলি ধরে মোটামুটিভাবে বলা যায়, খ্রি.পূ.৪০০০ অব্দ থেকে ভারতে নব্যপ্রস্তর যুগ শুরু হয় । মানুষ এ সময় কৃষিকাজ ও পশুপালন আয়ত্তে আনে এবং খাদ্য উৎপাদক হয়ে ওঠে । কাজেই মানুষ ক্রমশ: যাযাবরবৃত্তি ত্যাগ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে । মাটি ও বাঁশ দিয়ে ঘর তৈরি করা শিখে নেয় । বস্ত্রবয়ন শিল্প বিকশিত হয় । মৃতশিল্পের উন্নতি হয় । অস্ত্র ও যন্ত্রপাতিও আগের তুলনায় অনেক উন্নত, মসৃণ ও মজবুত হয় । আগুনের ব্যবহারেও মানুষ সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে । মেহেরগড় এ যুগের সভ্যতা ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ...

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...