প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/01/2014 - 08:54

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধ (First Carnatic War) :

অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের খবর পেয়েও ফরাসি গভর্ণর দুপ্লে ভারতে ইংরেজদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছিলেন । কিন্তু ইংরেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর কথায় কর্ণপাত না করে কয়েকটি ফরাসি জাহাজ আক্রমণ করলে ইংরেজদের সঙ্গে ফরাসিদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । ডুল্পে মাদ্রাজ দখল করে লুন্ঠন করেন । কর্ণাটকের নবাব ফরাসিদের ক্রমবর্ধমান শক্তিতে শঙ্কিত হয়ে ডুপ্লেকে সৈন্য অপসারণ করতে অনুরোধ করেন । ডুপ্লে এই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করায় আনোয়ারউদ্দিনের সঙ্গেও ফরাসিদের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে । সেন্ট থোম বা মাইলাপুরের যুদ্ধে ফরাসিদের হাতে আনোয়ারউদ্দিনের পরাজয় ঘটে । এই পরাজয়ের ফলে দেশীয় শক্তির সামরিক দুর্বলতা এবং ইউরোপীয় সৈন্যের সামরিক দক্ষতা সর্বসমক্ষে প্রকাশিত হয় । ফরাসি ও ইংরেজ উভয়ের কাছেই এই যুদ্ধের ফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল । ভারতে সাম্রাজ্য স্থাপনের সম্ভাবনা সম্পর্কে উভয়েই আশাবাদী হয়ে ওঠে । ভারতের ইতিহাসে এই যুদ্ধ অবশ্যই একটি দিক চিহ্ন । এদিকে দাক্ষিণাত্যে ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধের চূড়ান্ত নিস্পত্তি হওয়ার আগেই ১৭৪৮ খ্রীষ্টাব্দে ইউরোপে এই-লা চ্যাপেলের সন্ধির দ্বারা অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধের অবসান ঘটে । ফলে ভারতেও উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটে । এই চুক্তির শর্ত অনুসারে ইংরেজরা মাদ্রাজ ফিরে পায় ।  

প্রথম কর্ণাটকের যুদ্ধের গুরুত্ব (Importance of the First Carnatic War) : এই যুদ্ধ আপাতদৃষ্টিতে নিষ্ফল বলে মনে হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম ও অনস্বীকার্য ।

(১) এই যুদ্ধ নৌশক্তির প্রয়োজনীয়তা ও অপরিহার্যতা প্রমাণ করে ।

(২) এই যুদ্ধ ইউরোপের সামরিক শক্তির উৎকর্ষতার প্রতীক ।

(৩) এই যুদ্ধ ভারতে রাজনৈতিক অবক্ষয় ও অধঃপতনের সাক্ষী ।

(৪) এই যুদ্ধ ডুপ্লের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয় ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...