জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল (The Reign of Jahangir)

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 09/10/2014 - 13:11

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল - The Reign of Jahangir (১৬০৫-২৭)

মুঘল সম্রাট আকবরের পরবর্তী মুঘল সম্রাট হলেন জাহাঙ্গীর । জাহাঙ্গীর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । আকবর তাঁর বিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, উদারতা ও দূরদর্শিতায় মুঘল সাম্রাজ্যকে যে গৌরব শীর্ষে উন্নীত করে যান, পরবর্তী কালে তার উত্তরাধিকারী জাহাঙ্গীরের আমলে তা মোটের উপর অক্ষুণ্ণ ছিল । অবশ্য পরবর্তী যুগের কিছু দুর্বলতা ও সমস্যার বীজ এই সময়েই অনুসন্ধান করা সম্ভব । আকবরের গগনচুম্বী ব্যক্তিত্বের কাছে জাহাঙ্গীরের ব্যক্তিত্ব অনেকাংশে ম্লান । তাঁর প্রধান সমস্যা ছিল আকবরের সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষা করা এবং তাঁর প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রাখা । এই দায়িত্ব জাহাঙ্গীর কতটুকু যোগ্যতার সাথে পালন করেছিলেন শুধু সেটুকু বিচার্য । আকবরের মতো বহুমুখী, সৃজনশীল মৌলিক প্রতিভার প্রকাশ এঁর কাছে প্রত্যাশা করা অর্থহীন । আকবর এক সুবিশাল সাম্রাজ্য গঠন করলেও সমগ্র ভারতে তাঁর আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং নতুন করে রাজ্য জয়ের সুযোগও ছিল । তাছাড়া যে সব অঞ্চলে আকবরের সাম্রাজ্যের ভিত্তি দুর্বল ছিল, সেখানে সুদৃঢ় করার প্রযোজনও ছিল । আকবরের মতো জাহাঙ্গীরও সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করেন । মেবার ও বাংলায় তিনি মুঘল আধিপত্য সুদৃঢ় করেন । ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মেবারের রাণা অমর সিং তাঁর অধীনতা স্বীকার করেন । তিনি ওড়িশার কিছু অংশ দখল করেন । কামরূপও মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় । দাক্ষিণাত্যে আহমেদনগর অধিকার করতে জাহাঙ্গীরকে মালিক অম্বরের প্রচণ্ড বিরোধের মুখে পড়তে হয় । মালিক অম্বরের বিরুদ্ধে তাঁর সাফল্য ছিল কষ্টার্জিত । উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তে কান্দাহার দখল করতেও তিনি ব্যর্থ হন ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ...

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...