নীল নদের অববাহিকা (Nile Basin)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 03/03/2012 - 19:23

নীলনদের গতিপথের বর্ণনা : হোয়াইট নীল নদী এবং ব্লু নীল নদীর মিলিত প্রবাহে নীল নদের সৃষ্টি হয়েছে ।

হোয়াইট নীল নদীটি ট্যাঙ্গানাইকা হ্রদের নিকটবর্তী বুরুণ্ডির পার্বত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কিছু দূর উত্তরে গিয়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদে পড়েছে এবং পরে ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে নির্গত হয়ে নদীটি অ্যালবার্ট হ্রদের মধ্য দিয়ে খার্টুম শহরের দিকে প্রবাহিত হয়েছে । এই গতিপথে বাঁ দিক থেকে বার-এল-গজল এবং ডান দিক থেকে সোবাট নামে দুটি উপনদী হোয়াইট নীলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে ।

ব্লু নীল নদীটি ইথিওপিয়ার টানা হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে খার্টুম শহরের কাছে হোয়াইট নীলের সঙ্গে মিলিত হয়েছে । এরপর এই দুই মিলিত নদী নীল নদ নামে উত্তর দিকে বহুদূর প্রবাহিত হয়ে ভুমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে । খার্টুম শহরের কিছু উত্তরে আটবারা উপনদীটি নীলের সঙ্গে দক্ষিণ দিকে মিলিত হয়েছে ।

কৃষি কাজে নীলনদের বন্যার গুরুত্ব : বৃষ্টি বিরল মিশরের জলসেচ ও কৃষিকাজে নীলনদের বন্যার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে । প্রতি গ্রীষ্মকালে প্রবল বন্যার সময় নীল নদের গতিপথের দু'পাশের ভূমি প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় নীল নদের অববাহিকায় প্রতি বছর নতুন পলিমাটি সঞ্চিত হয় এবং জমি হয়ে ওঠে অত্যন্ত উর্বর ও শস্য শ্যামলা । নীল নদের বন্যার কল্যাণে বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলে মিশরের বেশির ভাগ লোক প্রায় ৯৬% লোক বাস করে ।

নীল অববাহিকায় জলসেচ ও বহুমুখী নদী পরিকল্পনার গুরুত্ব : বর্তমানে মধ্য নীল উপত্যকায় অবস্থিত সুদান এবং মিশরে নীল নদের বাঁধ দিয়ে উন্নত ধরনের সেচব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে । সুদানে ব্লু-নীলের ওপর সেনার বাঁধ, আটবারা নদীর উপর আটবারা ও খালাস-এল-গিরবা বাঁধ ও জলাধার উল্লেখযোগ্য । মিশরের সেচ বাঁধ ও জলাধারগুলির মধ্যে আসোয়ান, লেক নাসের, নাগ হামাদি, অ্যাসিউট, ইসনা প্রভৃতি বাঁধ ও জলাধার উল্লেখযোগ্য ।

মিশরকে “নীল নদের দান” (Gift of the Nile) বলার কারণ :

(ক) প্রায় সমস্ত মিশর নীল নদের পলি দিয়ে গঠিত এবং নীল নদের জলে ঊর্বর সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা হয়েছে ।

(খ) নীল নদ না থাকলে ঊষর মরুপ্রায় ভূমিতে অবস্থিত মিশর মানুষের বাস করার অনুপযুক্ত হত । বিশেষ করে খার্টুন শহর থেকে মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত স্থানকে মরুভূমি ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলত । কিন্তু নীল নদের উপস্থিতির জন্য তা সম্ভব হয়নি ।

(গ) মিশরে শীতকালে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না । বর্তমানে নীল নদের উপর আসোয়ান, অ্যাসিয়ুট প্রভৃতি বাঁধ দিয়ে জলাধার তৈরি করে তার সাহায্যে সারাবছর ধরে মিশরে জলসেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হওয়ার ফলে শ্রেষ্ঠ মানের দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলা, গম, ধান, যব, আঁখ প্রভৃতি মুল্যবান কৃষিজ ফসলের চাষ করা সম্ভবপর হয়েছে ।

এইসব কারণগুলির জন্য মিশরকে নীলনদের দান বলা হয় ।

নীল অববাহিকায় (Nile Basin) প্রধান শহর, বন্দর ও শিল্পবাণিজ্য কেন্দ্র :

(ক) কায়রো : মিশরের রাজধানী ও আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব বৃহৎ শহর ও শিল্পকেন্দ্র । এর জনসংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ । কায়রো শহরের নিকটবর্তী পিরামিড ও স্ফিংস দেখতে প্রতি বছর সারা পৃথিবী থেকে বহু পর্যটক আসেন । এইজন্য এখানে বহু হোটেল গড়ে উঠেছে ।

(খ) আলেকজান্দ্রিয়া : এটি মিশরের প্রাক্তন রাজধানী এবং প্রধান বন্দর ।

এছাড়া আসিয়ুট, আসওয়ান, খার্টুন, ওয়াদিহালফা, মালাকল, গেজিয়া, রসেট্রা, ডামিয়েট্টা, পোর্ট সৈয়দ প্রভৃতি হল নীল নদের অববাহিকায় অবস্থিত মিশরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শহর, বন্দর ও শিল্পকেন্দ্র ।

পোর্ট সুদান, সুয়াকিন, ওমডার ম্যান, সেনার, বারবার প্রভৃতি নীল অববাহিকায় অবস্থিত সুদানের অন্যান্য শহর, বন্দর ও শিল্পকেন্দ্র ।

*****

Related Items

সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere)

সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার (Homosphere) :- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসয়নিক গঠন, বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে সমমণ্ডল বা হোমোস্ফিয়ার বলা হয় । হোমোস্ফিয়া

উপাদানগত তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

উপাদানগত তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layers of Atmosphere based on Chemical Composition) : বায়ুমণ্ডলের উপাদান ও রাসায়নিক গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে প্রধানত দুটি স্তরে ভাগ করা হয় । যথা — (i) সমমন্ডল বা হোমোস্ফিয়ার, (i

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layers of Atmosphere)

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layers of Atmosphere) : পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের স্তর উপাদানগত তারতম্য ও উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে দুই ভাগে বিন্যস্ত হয়ে থাকে । যেমন— (ক) উপাদানগত তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস, (খ) উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুম

বায়ুমণ্ডলের উপাদান (Composition of the Atmosphere)

বায়ুমণ্ডলের উপাদান (Composition of the Atmosphere) : আবাহবিজ্ঞানীদের মতে বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকার উপাদানের এক যৌগিক মিশ্রণ । যার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের পরিমাণই সর্বাধিক । বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি পৃথিবীর জীবমণ্ডলকে প্রাণধারণে সহা

বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)

বায়ুমণ্ডল (Definition of Atmosphere) : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ হাজার কিমি.