দক্ষিণ ভারতের প্রধান নদনদী

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 11/14/2014 - 14:44

দক্ষিণ ভারতের নদনদীগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— (১) পশ্চিম বাহিনী নদী ও (২) পূর্ব বাহিনী নদী । 

পশ্চিম বাহিনী নদীগুলি আরব সাগরে পতিত হয়েছে ও পূর্ব বাহিনী নদীগুলি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে ।

(১) পশ্চিম বাহিনী নদী : ভারতের পশ্চিম বাহিনী নদীগুলির মধ্যে (ক) নর্মদা নদী, (খ) তাপ্তি নদী উল্লেখযোগ্য ।

(ক) নর্মদা নদী : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে খাম্বাত উপসাগরে (কাম্বে) পড়েছে । কঠিন শিলাস্তর অতিক্রম করার সময় নর্মদা অনেকগুলি জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে, এর মধ্যে জব্বলপুরের নিকটবর্তী ভেরাঘাটের নর্মদা জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য । নর্মদা নদীর দৈর্ঘ্য ১৩১০কিমি. ।

(খ) তাপ্তি নদী : মহাদেব পর্বতের মুলতাই এর কাছে প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মধ্য দিয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকা পার হয়ে সুরাটের কাছে খাম্বাত উপসাগরে পড়েছে । তাপ্তি নদীর দৈর্ঘ্য ৭২৫ কিমি । তাপ্তির প্রধান উপনদী হল পূর্ণা । 

(২) পূর্ব বাহিনি নদী : ভারতের পূর্ব বাহিনী নদীগুলির মধ্যে (ক) গোদাবরী, (খ) কৃষ্ণা নদী, (গ) কাবেরী নদী, (ঘ) মহানদী উল্লেখযোগ্য ।

(ক) গোদাবরী : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অন্তর্গত ত্রিম্বক পাহাড়ের ১৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । দক্ষিণ ভারতের দীর্ঘতম নদী গোদাবরী, এর দৈর্ঘ্য ১৪৬৫ কিমি । এর বাম তীরস্থ উপনদীগুলির মধ্যে প্রাণহিতা, ইন্দ্রাবতীশবরী প্রধান । গোদাবরীর ডান তীরস্থ উপনদীগুলির মধ্যে মঞ্জিরা প্রধান ।

(খ) কৃষ্ণা নদী : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । কৃষ্ণা নদীর দৈর্ঘ্য ১২৯০ কিমি । কৃষ্ণার উপনদীগুলির মধ্যে সীনা, ভীমা, তুঙ্গভদ্রা, মুসী, বেদবতী প্রধান । কৃষ্ণা নদীর তীরে বিজয়ওয়াড়া এবং তার উপনদী মুসীর তীরে অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদ অবস্থিত ।

(গ) কাবেরী নদী : কর্ণাটক রাজ্যের ব্রহ্মগিরি পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ১৫০ কিমি । কাবেরী নদী দক্ষিণ ভারতের অধিবাসীদের কাছে গঙ্গার মতো পবিত্র । কাবেরীর উপনদীগুলির মধ্যে হিমবতী, সিমসাভবানী প্রধান । শিবসমুদ্রম কাবেরীর একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত । কাবেরীর তিরে অবস্থিত তিরুচিরাপল্লী একটি বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র । 

(ঘ) মহানদী : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়ার উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িষ্যার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । মহানদীর দৈর্ঘ্য ৮৯০ কিমি । হাঁসদা, মান্দ, ইব প্রভৃতি হল মহানদীর উল্লেখযোগ্য উপনদী । মহানদীর বদ্বীপে অবস্থিত কটক একটি উল্লেখযোগ্য শহর ও শিল্পকেন্দ্র ।

দক্ষিণ ভারতের নদনদীর বৈশিষ্ট্য :

(১) কোনোও হিমবাহ থেকে উৎপন্ন না হয়ে এরা ঝর্ণা জলে পুষ্ট হওয়ায় বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে এই সব নদীতে জল থাকে না বললেই চলে । 

(২) দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বন্যা প্রবণ নয় । 

(৩) খরস্রোতা হওয়ায় দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ নদী নৌ পরিবহনের উপযোগী নয় ।

*****

Related Items

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Emvironment of India)

ভারতের ভূপ্রকৃতি (Physical Environment of India) : ভারত একটি সুবিশাল দেশ ও এর ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় । উত্তর ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পামীর গ্রন্থি থেকে বের হওয়া হিন্দুকুশ, সুলেমান, খিরথর কারাকোরাম, হিমালয় প্রভৃতি কয়েক

ভারতের বর্তমান রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমূহ

ভারতের বর্তমান রাজ্য সমূহ (২০২১ সাল পর্যন্ত ) :

১. অন্ধ্রপ্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ১,৬০,২০৫ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল অমরাবতী ।

২. অরুণাচল প্রদেশ : এই রাজ্যের আয়তন হল ৮৩,৭৪৩ বর্গ কিমি. ও রাজধানী হল ইটানগর ।

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির বিন্যাস : প্রায় ১০০ বছর প্রত্যক্ষভাবে ইংরেজ শাসনাধীন থাকার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এব

ভারতের ভৌগলিক অবস্থান

অবস্থান (Location) : ভারত পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত একটি দেশ । নিরক্ষরেখার উত্তরে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে এবং মূলমধ্যরেখার পূর্বে অর্থাৎ পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত অর্থাৎ ভারত উত্তর-পূর্ব গোলার্ধে অবস্থিত । ভারতের মূল ভূখণ্ড দক্ষি

ভারত (India)

ভারত :- প্রাচীন পারসিক লিপিতে 'সপ্ত সিন্ধু' কে বলা হয়েছে হপ্ত হিন্দু । সিন্ধু তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বিদেশীরা হিন্দু বলত এবং তার থেকেই হিন্দুস্থান কথাটি এসেছে । প্রাচীন পারসি শব্দ হিন্দুস (Hindus) থেকে উৎপন্ন ইণ্ডাস (Indus) থেকে ইণ্ডিয়া (INDIA) নামট