গঙ্গার ব-দ্বীপসহ সমভূমি অঞ্চল

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 03/17/2015 - 07:06

গঙ্গার ব-দ্বীপসহ সমভূমি অঞ্চল :

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল এবং পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলকে বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ স্থানই বৈচিত্র্যহীন সমভূমি । পশ্চিমবঙ্গের এই অঞ্চলটি নদীবাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে গড়ে উঠেছে । ভূপ্রকৃতি ও মৃত্তিকার পার্থক্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি অঞ্চলকে ছয়ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (১) তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, (২) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল, (৩) রাঢ় অঞ্চল, (৪) উপকূলের বালুকাময় সমভূমি, (৫) গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল ও (৬) সুন্দরবন অঞ্চল ।

(১) তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল : পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমা এবং জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর ও পূর্বাংশে পার্বত্য নদীবাহিত বালি ও নুড়ি জমে তরাই অঞ্চলটির সৃষ্টি হয়েছে । এই অঞ্চলটি উত্তর থেকে দক্ষিণে ঢালু হয়ে গিয়েছে । অসংখ্য নদীখাত তরাই অঞ্চলটিকে বিভিন্ন সমান্তরাল অংশে বিভক্ত করেছে । এই অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছে তিস্তা নদীর ডানদিকের অংশ তরাই এবং বাঁদিকের অংশ ডুয়ার্স নামে পরিচিত ।

(২) উত্তরের সমভূমি অঞ্চল : পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের দক্ষিণে, তরাই ও গঙ্গার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত মালদহ, উত্তর-দিনাজপুর, দক্ষিণ-দিনাজপুর এবং কোচবিহার— এই চারটি জেলা উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের অন্তর্গত । তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর পলি জমে এই অঞ্চলটি গড়ে উঠেছে । মোটামুটিভাবে সমতল হলেও মাঝে মাঝে এখানে সেখানে খাল-বিল এবং উঁচু-নীচু জমি চোখে পড়ে । এখানে কোনও কোনও স্থানে ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢিবি দেখা যায় । ভুপ্রকৃতিগত ভাবে উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে তাল, বরেন্দ্রভূমিদিয়ারা এই তিনটি অংশে ভাগ করা যায় ।

(৩) রাঢ় অঞ্চল : পশ্চিমের মালভূমির পূর্ব সিমা থেকে ভাগীরথী-হুগলী নদীর পশ্চিম তীর পর্যন্ত বিস্তৃত, সামান্য ঢেউ খেলানো ও পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে যাওয়া বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চলটি রাঢ় সমভূমি নামে পরিচিত । পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান এবং বীরভূম জেলার পূর্বাংশ রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত । পুরানো পলিমাটি দিয়ে গঠিত এই অঞ্চলটির মাটির রঙ লাল । অজয়, দামোদর, ময়ূরাক্ষী, শিলাবতী, কংসাবতী, বক্রেশ্বর প্রভৃতি হল রাঢ় অঞ্চলের প্রধান নদী । এই অঞ্চলটি কৃষিকাজে অত্যন্ত উন্নত ।

(৪) উপকূলের বালুকাময় সমভূমি : মেদিনীপুর জেলার উপকুল ভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্গত । সর্ব দক্ষিণের উপকূলবর্তী তটভূমি বালুকাময় । এখানকার তটভূমির ঢাল খুবই কম । এখানে বিভিন্ন স্থানে বালিয়াড়ি দেখা যায় । তটভূমির উত্তর দিকের বালিয়াড়িগুলি সমুদ্র উপকূলের সমান্তরালভাবে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত । দুটি বালিয়াড়ির মাঝের নীচু অংশে জলাভূমি দেখা যায় ।

(৫) গঙ্গার বদ্বীপ অঞ্চল : এই বদ্বীপ অঞ্চলটি পূর্বদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে পশ্চিমে কান্দি মহকুমা বাদে সমগ্র মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী, কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা এবং বর্ধমান ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পূর্বাংশের ৫০ মিটার সমোন্নতি রেখা বরাবর বিস্তৃত । এই অঞ্চলের উত্তরে পদ্মা নদী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত । সমগ্র অঞ্চলটি সমতল হলেও উত্তর থেকে দক্ষিণে ক্রমশ ঢালু হয়ে গিয়েছে । এই অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপের একটি অংশ । গঙ্গা বা পদ্মা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই প্রভৃতি নদনদী বাহিত পলি সঞ্চয়ের ফলে কালক্রমে সমুদ্রবক্ষ থেকে এই নতুন ভূভাগ বা বদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছে ।

(৬) সুন্দরবন অঞ্চল : দক্ষিণ ২৪ পরগনার দক্ষিণাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত । এই অঞ্চলটি পুরোপুরিভাবে সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলের অন্তর্গত, তাই এখানে বদ্বীপ গঠনের কাজ এখনোও চলছে । সুন্দরবনের নদীগর্ভ ছাড়া সমস্ত অংশই সমতল । সমুদ্রতল থেকে এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা মাত্র ৩-৪ মিটার হওয়ায় এর অনেকটাই সমুদ্র জলের জোয়ারে ঢেকে যায় ।

*****

Related Items

উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলে ? উষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

প্রশ্ন : উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলেউষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ কি ?

দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

প্রশ্ন : দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

উত্তর : সকালে এবং বিকালে কোনো স্থান থেকে সূর্য অনেক দূরে থাকে বলে সূর্যরশ্মি

(১) পৃথিবীপৃষ্ঠের সেই স্থানে তুলনামূলক ভাবে বেশি তির্যকভাবে পড়ে,

(২) বেশি পরিমাণ বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং

পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

প্রশ্ন :- পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

প্রশ্ন : অ্যালবেডো (Albedo) কাকে বলে ?

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?